রাষ্ট্রবিজ্ঞান কাকে বলে? রাষ্ট্রবিজ্ঞান কেন পড়বো

5/5 - (1 vote)

আমরা জানি যে– রাষ্ট্র সমাজের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, যা সাধারণত সমাজভুক্ত মানুষের সমগ্র জীবন পরিচালনায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। অনেকেই প্রশ্ন করেন– রাষ্ট্রবিজ্ঞান কাকে বলে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ক্ষেত্র সমূহ কি কি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান এর উৎপত্তি, গুরুত্ব ও শাখা প্রশাখা কি এ-সম্পর্কে। 

তাই আজকের এই নিবন্ধে আমরা– রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সম্পর্ক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান কাকে বলে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলতে কী বোঝায় এ সম্পর্কে জানাবো এ টু জেড। অতএব আপনি আপনার সাধারণ জ্ঞান বৃদ্ধিতে অথবা পরীক্ষার খাতায় প্রশ্নের সঠিক উত্তর লিখতে আজকের এই নিবন্ধনটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে পারেন।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান কাকে বলে

রাষ্ট্রবিজ্ঞান কাকে বলে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান কেন পড়বো,

রাষ্ট্রবিজ্ঞান হচ্ছে এক প্রকার সামাজিক বিজ্ঞান, যা রাষ্ট্র, সরকার, রাজনীতি এবং ক্ষমতার সম্পর্কের বিষয়ে গবেষণা করে। এটি মানবসমাজের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রাষ্ট্রের কার্যক্রম এবং এর মাধ্যমে পরিচালিত শাসন ব্যবস্থার ব্যাখ্যা প্রদান করে থাকে সর্বদা। 

যদি সহজ ভাষায় একে সংগ্রহীত করা যায় তাহলে বলা যেতে পারে– রাজনৈতিক কার্যক্রম, রাষ্ট্রের কাঠামো এবং ক্ষমতার বিতরণ ও প্রভাব নিয়ে গবেষণার একটা শৃঙ্খলা হচ্ছে রাষ্ট্রবিজ্ঞান। এটাকে মূলত বিভিন্ন রাষ্ট্র বিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। যেগুলোর মাধ্যমে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ফুটে ওঠে। যা আমরা নিচে উল্লেখ করেছি। 

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞা 

রাষ্ট্রবিজ্ঞান কাকে বলে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান কেন পড়বো,

মানুষের রাজনৈতিক জীবনের সাথে সম্পর্কযুক্ত প্রত্যেকটি বিষয় ও কার্যাবলী নিয়ে যে শাস্ত্র বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা সমালোচনা ও গবেষণা চালায় তাই হচ্ছে রাষ্ট্রবিজ্ঞান। রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে একেক জন একেক ভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে। এখানে কিছু রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের নাম ও তাদের সংজ্ঞা উল্লেখ করছি। 

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জর্জ ক্যাটলিন বলেছেন–রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমাজে মানুষের রাজনৈতিক কার্যক্রমের ব্যাখ্যা দান করে এবং সমাজে মানুষের বিভিন্নমুখী বিশদ বিবরণ দান করে। 

রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পল জানেট বলেছেন– রাষ্ট্রবিজ্ঞান হল সামাজিক বিজ্ঞানের সেই শাখা, যা রাষ্ট্রের ভিত্তি ও সরকারের নীতিমালা নিয়ে আলোচনা করে। 

পরিচিত ও জনপ্রিয় নাম অধ্যাপক লাস্কি, এই রাষ্ট্র বিজ্ঞানী সংজ্ঞা দিতে গিয়ে উল্লেখ করেছেন– সংগঠিত রাষ্ট্রের প্রেক্ষিতে মানব জীবনের আলোচনায় হচ্ছে রাষ্ট্রবিজ্ঞান। 

অতএব, এই প্রত্যেকটি সংজ্ঞার উপর ভিত্তি করে আপনি এটাও বলতে পারেন– রাষ্ট্রবিজ্ঞান সামাজিক বিজ্ঞানের এমন একটা শাখা, যেটা সর্বদা রাষ্ট্র ব্যবস্থা, সরকার এবং সরকারের কাঠামো, ভি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও আচার-আচরণ, একটি রাষ্ট্রের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন, নিয়ম নীতি ও বহুভেদ রাজনৈতিক ব্যবস্থার তুলনামূলক ও বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা পর্যালোচনার কেন্দ্রস্থল। 

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মূল লক্ষ্য

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মূল লক্ষ্য হলো সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে কিভাবে শক্তি, ক্ষমতা, এবং ন্যায়বিচার কাজ করে তা বিশ্লেষণ করা। অতএব রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মূল লক্ষ্য গুলোর অন্তর্ভুক্ত অংশ হচ্ছে–

  • রাষ্ট্রের প্রকৃতি ও গঠন পরিচালিত করা 
  • বিভিন্ন ধরনের সরকারের কাঠামো ও তাদের কার্যক্রম সম্পাদন
  • নীতির বিশ্লেষণ নাগরিক অধিকার ও কর্তব্য নিশ্চিত করণ 
  • রাজনৈতিক তত্ত্ব ও দর্শন নিয়ে বিশ্লেষণ। 

রাষ্ট্র বিজ্ঞানের উৎপত্তি

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মূল উৎপত্তি হাজার বছর আগের রাজনৈতিক চিন্তাবিদদের চিন্তাভাবনা থেকে এসেছে। প্রাচীন গ্রিসের প্লেটো এবং এরিস্টটলকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাঁদের রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক দর্শন আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করে। এর পরবর্তী কালে রেনেসাঁ এবং আধুনিক যুগে রাষ্ট্রবিজ্ঞান আরও বিস্তৃত ও জটিল আকার ধারণ করে। এক কথায় বলতে পারেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ইতিহাস ও উৎপত্তি অনেক বেশি জটিল ও পুরনো 

জানা গিয়েছে– রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিকাশে নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি, জন লক, এবং কার্ল মার্কসের মত দার্শনিকদের চিন্তা বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। ১৯শ এবং ২০শ শতকে রাজনৈতিক কাঠামো এবং রাষ্ট্র পরিচালনার ধারা নিয়ে বিভিন্ন নতুন তত্ত্ব ও গবেষণা শুরু হয়, যা আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভিত্তি তৈরি করে। যাইহোক– এখন জানার বিষয় রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গুরুত্ব ঠিক কতটুকু এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান কোন বিজ্ঞানের শাখা!

রাষ্ট্রবিজ্ঞান কেন পড়বো

রাষ্ট্রবিজ্ঞান কাকে বলে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান কেন পড়বো,

রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমগ্র সমাজে গভীরভাবে প্রভাব ফেলে। সাধারণত ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক, ন্যায় বিচার এবং সরকারের প্রভাব বিশ্লেষণ করা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অন্যতম প্রধান কাজ। আর এটি কেবল রাজনীতি ও সরকারের প্রভাব বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয় বরং ব্যক্তি স্বাধীনতা গণতন্ত্র এবং সুশাসনের ভিত্তি নিয়ে গবেষণা করে। রাষ্ট্র বিজ্ঞানের গুরুত্ব এবং পাঠের প্রয়োজনীয়তা একথা বলা যায় অত্যন্ত সুস্পষ্ট। আমরা যদি রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্পর্কে সঠিক ধারণা বা জ্ঞান অর্জন করি সেক্ষেত্রে–

  • গণতন্ত্র ও নাগরিকত্বের উন্নয়ন সম্পর্কে জানতে পারবো 
  • নীতির গঠন ও বিশ্লেষণ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা অর্জন করতে পারব 
  • সামাজিক ন্যায় ও সুবিচার সম্পর্কে জানতে পারবো সেইসাথে শাসনব্যবস্থার বুঝদারির বিষয়ে অবগত হওয়া সম্ভব হবে। 

কেননা রাষ্ট্রবিজ্ঞান নাগরিকদের তাদের অধিকার ও দায়িত্ব বুঝতে সহযোগিতা করে, শাসন ব্যবস্থার বিভিন্ন ধরন ও তাদের কার্যকারিতা সম্পর্কে ধারনা দেয়, সরকারের নীতি গঠনের প্রক্রিয়া ও সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের পন্থা বিশ্লেষণ করে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান সামাজিক ন্যায় ও সুবিচারের ধারণাকে বুঝতে সাহায্য করে। তাহলে বুঝতেই পারছেন এর গুরুত্ব ঠিক কতটুকু। 

আর যদি প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন তাহলে বলব রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠে সাধারণত– সুশাসনের উন্নয়ন ঘটে, আমাদের মাঝে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পায় সমাজে পরিবর্তন নিয়ে আসা সম্ভব হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই দেশ ও নিজের জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্পর্কে জানা গুরুত্বপূর্ণ। তাই আসুন সুশাসন প্রতিষ্ঠায়, সামাজিক পরিবর্তনে এবং জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়বস্তু সম্পর্কে নিজেরা জানি। 

রাষ্ট্রবিজ্ঞান কোন বিজ্ঞানের শাখা

রাষ্ট্রবিজ্ঞান হচ্ছে সমাজবিজ্ঞানের একটি শাখা। এটি রাষ্ট্র সরকার রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নীতিমালা এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন দিক অধ্যান করে। সাধারণত রাষ্ট্রবিজ্ঞান নীতি, প্রভাব, রাষ্ট্রের কাঠামো ও সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপর প্রভাবশালী বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা করে থাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান। যেগুলো সামাজিক বিজ্ঞানের অংশ।

📌 আরো পড়ুন 👇

রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নউত্তর 

আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক কে? 

আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক নিকোলো মেকিয়াভেলি।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান শব্দটি প্রথম কে ব্যবহার করেন? 

রাষ্ট্রবিজ্ঞান শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন গ্রেট দার্শনিক অ্যারিস্টটল। 

বাংলাদেশের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক কে? 

সাধারণত বাংলাদেশের সমাজ বিজ্ঞানের পথিকৃৎ মনে করা হয় ডঃ এ কে নাজমুল করিম কে। বাংলাদেশের রাষ্ট্র বিজ্ঞানের কোন জনক নেই।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান এর প্রতিষ্ঠাতা কে? 

রাষ্ট্র বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা হলেন অ্যারিস্টোটল।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি কি?

রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের পদ্ধতি মূলত ব্যাপক। রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের সর্বোত্তম পদ্ধতি গুলোর মধ্যে অবস্থান করছে–ঐতিহাসিক পদ্ধতি, পর্যবেক্ষণ মূলক পদ্ধতি, পরীক্ষামূলক পদ্ধতি, তুলনামূলক পদ্ধতি, আইন মূলক পদ্ধতি,  সাক্ষাৎকার পদ্ধতি, পরিসংখ্যানগত পদ্ধতি, প্রতিষ্ঠানগত পদ্ধতি ইত্যাদি ই

ত্যাদি। 

রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্পর্কে আমাদের মতামত

তো পাঠক বন্ধুরা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান কাকে বলে, এই নিয়েছিল আমাদের আজকের আলোচনা। যেহেতু উক্ত আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সম্পর্ক অনেক গভীর। রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখার জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকা জরুরী, তাই আসুন নিজ দেশকে রক্ষার্থে, প্লাস্টার কাঠামো গত উন্নতিতে ভূমিকা রাখতে, অথবা সাধারণ জ্ঞান বিকাশের জন্য হলেও রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের দিকে মনোযোগ দেই। 

রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্পর্কে আপনাদের আর কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদেরকে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানান। এবং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এমন আরো শিক্ষামূলক আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।

Sharing is Caring

Leave a Comment