পরিবার সাধারণত গঠিত হয় পিতা-মাতা এবং সন্তান-সন্ততি নিয়ে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে আত্মীয়-স্বজন সমবায়ে একসঙ্গে বসবাসরত মানুষ নিয়েও একটি পরিবার গঠিত হতে পারে। আর বৃহৎ পরিবার বলতে বোঝায়, আত্মীয় অনাত্মীয় এবং তাদের সন্তান-সন্ততি একসাথে বসবাস করে। একটি দম্পতির সন্তানসহ বা সন্তান বিহীন একটি সংসারকে পরিবার বলা হয়।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে রক্তের সম্পর্ককে কেন্দ্র করে পরিবার গড়ে ওঠে। বাংলাদেশের ছোট পরিবার গুলো সাধারণত স্বামী স্ত্রী, অবিবাহিত সন্তান নিয়ে গঠিত হয়ে থাকে। যৌথ পরিবারের সদস্য হয়ে থাকেন: দাদা-দাদী, বাবা-মা, ভাই-বোন, চাচা-চাচি, চাচাতো ভাই অথবা বোন, নাতি নাতনি, ছেলের বউ, নাত বউ, ভাইয়ের স্ত্রী, ভাইয়ের ছেলে মেয়ে। নিচে আমরা পরিবার কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
পরিবার কাকে বলে
সমাজের ক্ষুদ্রতম একককে পরিবার বলা হয়। একজন শিশু তার অঙ্গ সঞ্চালন, আচার আচরণ, হাঁটাচলা, শিক্ষার প্রথম আলো ইত্যাদি নিজ পরিবার থেকেই পেয়ে থাকে। সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক গোষ্ঠী হলো পরিবার। যেকোনো সমাজ সৃষ্টির পূর্বে এক বা একাধিক পরিবার গঠিত হয়েছে। পরিবারে এমন এক সামাজিক গোষ্ঠী জল সাধারণত আবাসস্থল, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং প্রজনন এর সাথে সম্পর্কিত। সামাজিকভাবে স্বীকৃত কোন দম্পতি যখন একবার একাধিক সন্তান নিয়ে বসবাস করে তখন তাকে পরিবার বলে। তবে বর্তমান সময়ে একক পরিবার, যৌথ পরিবার, দত্ত পরিবার ইত্যাদি দেখা যায়। সামাজিকীকরণ, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, সামাজিক পরিচয়, ভালোবাসা ও যত্ন, এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য পরিবারের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
পরিবারের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে BALLART বলেন: “একটি পরিবার হল এমন একটি গোষ্ঠী যারা জন্ম, বিবাহ এবং দত্তক গ্রহণের মাধ্যমে একে অপরের সাথে সংযুক্ত থাকে।”.
পরিবারের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ম্যাকাইভার বলেন: “পরিবার সমাজের বেঁচে থাকার জন্য একটি প্রক্রিয়া হিসাবে কাজ করে।”
নিচে আমরা পরিবারের বৈশিষ্ট্য, গঠন অনুসারে পরিবারের প্রকারভেদ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
গঠন অনুসারে পরিবার কত প্রকার
পরিবার হলো এমন একটি ক্ষুদ্র ইউনিট যেখানে একাধিক দম্পতি তাদের সন্তান এবং একাধিক সদস্যরা একত্রিত হয়ে সামাজিক এবং আর্থিক সকল ধরনের কার্যক্রম সম্পন্ন করে। গঠন কাঠামোর দিক দিয়ে পরিবারকে সাধারণত ছয়টি ভাগে ভাগ করা হয়। সেগুলো হলো:
- বহু পত্নীক পরিবার,
- এক পত্নীক পরিবার,
- সংমিশ্র পরিবার,
- বৃহত্তর পরিবার,
- একালী পরিবার,
- পারমানসিক পরিবার,
যে পরিবারের শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি থাকে এবং সেই ব্যক্তির যদি স্ত্রী বা সন্তান-সন্ততি কেউ না থাকে তাহলে তাকে একালী পরিবার বলা হয়।
পুনঃ বিবাহের মাধ্যমে নতুন করে যে সংসার গঠন করা হয় এবং আগের বিবাহের মাধ্যমে যে সন্তান-সন্ততি এসেছে তারা যদি এই নতুন সংসারে যুক্ত হয় তখন তাকে সংমিশ্র পরিবার বলা হয়। একজন স্ত্রী, একজন স্বামী এবং তাদের সন্তান নিয়ে যে পরিবার গঠন করা হয় তাকে পারমাণসিক পরিবার বলা হয়ে থাকে।
পরিবার কত প্রকার ও কি কি
সমাজের ক্ষুদ্রতম সংঘ হলো পরিবার। পরিবেশ, ঐতিহ্য, দেশ, কাল ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে পরিবারের প্রকারভেদ নির্ভর করে। পরিবারের প্রধান কয়েকটি রূপ হল:
- পিতৃ শাসিত ও মাতৃ শাসিত পরিবার
- পিতৃ আবাসিক ও মাতৃ আবাসিক পরিবার
- একগামী ও বহুগামী পরিবার
- মাতৃ বংশানুক্রমিক ও পিতৃ বংশানুক্রমিক পরিবার
- একক পরিবার ও যৌথ পরিবার
- এক পত্নীক পরিবার ও বহু পত্নীক পরিবার
- বহুপতি পরিবার
- গোষ্ঠী পরিবার
নিচে আমরা পরিবার কত প্রকার ও কি কি নিয়ে ভাবে আলোচনা করব। চলুন তাহলে পরিবারের প্রকারভেদ সম্পর্কে এক নজরে যাবতীয় তথ্য জেনে নেই:
১। পিতৃ শাসিত ও মাতৃ শাসিত পরিবার
যে পরিবারের পিতার সিদ্ধান্তকে চূড়ান্ত বলে গণনা করা হয় তাকে পিতৃ শাসিত পরিবার বলে। অপরদিকে যে পরিবারে মায়ের সিদ্ধান্তকে চূড়ান্ত বলে বিবেচনা করা হয় তাকে মাতৃ শাসিত পরিবার বলে। পিতৃ শাসিত পরিবারে পুরুষতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রাধান্য পায় এবং মাতৃ শাসিত পরিবারে মায়ের কথা চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়।
২। পিতৃ আবাসিক ও মাতৃ আবাসিক পরিবার
বিয়ের পর যদি কন্যা তার স্বামীর গৃহ প্রবেশ করে এবং সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করে তখন তাকে পিতৃ আবাসিক পরিবার বলে। এই ধরনের পরিবারের পিতার পরিচয়েই সন্তান পরিচিত হয়। অপরদিকে মাতৃ আবাসিক পরিবারে একজন পুরুষ কোন মেয়েকে বিয়ে করে মেয়ের মায়ের বাড়িতে অবস্থান করে। এই ধরনের মাতৃ আবাসিক পরিবারে মায়ের কথাই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়।
৩। একগামী ও বহুগামী পরিবার
যখন কোন পুরুষ একজন মহিলাকে বিয়ে করে যৌন সম্পর্কের ভিত্তিতে একটি পরিবার গড়ে তোলে তখন তাকে একগামী পরিবার বলে। পরিবারের সাধারণত একজন পুরুষের কেবলমাত্র তার স্ত্রীর সাথেই যৌন সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ রয়েছে।
অপরদিকে বহুগামী পরিবারে একজন পুরুষ একাধিক পত্নীর সাথে সংসার গড়ে তুলতে পারেন। বহুগামী পরিবারে একাধিক পুরুষ এবং একাধিক মহিলার সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ রয়েছে।
৪। মাতৃ বংশানুক্রমিক ও পিতৃ বংশানুক্রমিক পরিবার
যেসব পরিবারের সন্তান জন্মের পর মায়ের পরিচয়ে পরিচিত হয় এবং মাতৃকুলের বংশধর রূপে বিবেচিত হয় তখন তাকে মাত্রই বংশানুক্রমিক পরিবার বলা হয়ে থাকে। মাতৃ বংশানুক্রমিক পরিবারের সকল সম্পদের মালিক সাধারণত কন্যা সন্তানরাই হয়ে থাকে।
অপরদিকে, যে সব পরিবারের সন্তানরা পিতার পরিচয়ে পরিচিত হয় এবং পরবর্তীতে পিতার সকল সম্পদের মালিকানার অধিকারী হয় তখন তাকে পিতৃ বংশানুক্রমিক পরিবার বলা হয়ে থাকে।
৫। একক পরিবার ও যৌথ পরিবার
শুধুমাত্র স্বামী-স্ত্রী এবং তাদের সন্তান-সন্ততি নিয়ে যে পরিবার গড়ে ওঠে তাকে একক পরিবার বলে। একক পরিবারের আকার তুলনামূলক খুবই ছোট হয়ে থাকে। তবে আধুনিক সমাজে প্রযুক্তিবিদ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে একক পরিবার তৈরি করা হচ্ছে।
শুধুমাত্র স্বামী-স্ত্রী এবং তাদের সন্তান-সন্ততি ছাড়াও রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ পরিবারের যেসব সদস্য রয়েছে তাদেরকে নিয়ে যে পরিবার গঠন করা হয় তাকে যৌথ পরিবার বলা হয়। যৌথ পরিবারের আকার তুলনামূলক বড় যার ফলশ্রুতিতে, পরিবারের কোন সদস্যে মৃত্যু হলেও কোনরকম মৌলিক পরিবর্তন ঘটে না।
৬। এক পত্নীক পরিবার ও বহু পত্নীক পরিবার
একজন পুরুষ যখন শুধুমাত্র একজন মহিলার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সংসার গড়ে তোলে তখন তাকে এক পত্নীক পরিবার বলা হয়ে থাকে। আমাদের দেশে বেশিরভাগ পরিবারই এক পত্নীক পরিবার।
অপরদিকে যখন একজন পুরুষ একাধিক মহিলার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সংসার করে তোলে তখন তাকে বহু পত্নীক পরিবার বলা হয়। বহু পথিক পরিবার সাধারণত সমতার পরিপন্থী এবং জটিল ধরনের হয়ে থাকে।
৭। বহুপতি পরিবার
যখন একজন মহিলা একাধিক পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পরিবার গড়ে তোলে তখন তাকে বহুপতী পরিবার বলে। তবে আমাদের সমাজে বহুপতি পরিবার খুব একটা দেখা যায় না। আমাদের দেশে এ ধরনের বিবাহকে অনৈতিক এবং অসামাজিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
৮। গোষ্ঠী পরিবার
যখন একটি পরিবারে একাধিক প্রজন্মের মানুষ বাস করে তখন তাকে গোষ্ঠী পরিবার বলে। অর্থাৎ, দাদা – দাদী, চাচা- চাচি, মামা মামি ইত্যাদি বিভিন্ন প্রজন্মের মানুষ যখন একই সাথে একই সংসারে বাস করে তখন তাকে গোষ্ঠী পরিবার বলা হয়।
৯। অন্তঃগোত্রীয় এবং বহুগোত্রীয় বিবাহ ভিত্তিক পরিবার
প্রাচীনকালে সমাজের অন্তঃগোত্রীয় বিবাহ প্রথা চালু ছিল। এখানে শুধুমাত্র একজন পুরুষ তার নিজ গোত্রের কন্যাকেই বিবাহ করতে পারবে। এবং গোত্রের বাইরে যখন কোন ছেলে কোন মেয়েকে বিবাহ করে তখন তাকে বহু গোত্রীয় বিবাহ ভিত্তিক পরিবার বলে।
পরিবারের নতুন প্রকারভেদ
পরিবারের নতুন প্রকারভেদে বাসস্থানের ভিত্তিতে পরিবার কাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। বাসস্থানের ভিত্তিতে পরিবার কাঠামোকে দুইটি ভাগে ভাগ করা হয়। সেগুলো হলো:
- দ্বৈত আবাসস্থল পরিবার,
- নয়া বাস পরিবার,
দ্বৈত আবাসস্থল পরিবার
যখন একটি দম্পতি বিয়ের পর স্ত্রী তার স্বামীর পিতা-মাতার সাথে বসবাস করে অথবা স্বামী তার স্ত্রীর পিতা-মাতার সাথে বসবাস করে তখন তাকে দ্বৈত আবাসস্থল পরিবার বলা হয়ে থাকে।
নয়াবাস পরিবার
নয়া বাস পরিবার হলো এমন এক ধরনের পরিবার যেখানে একটি দম্পতি বিয়ের পর পরিবার থেকে আলাদা হয়ে দূরে কোথাও বসবাস শুরু করে। আমাদের সমাজে বর্তমানে নয়া বাস পরিবার ব্যাপক মাত্রায় তৈরি হচ্ছে এবং শহরের অধিকাংশ পরিবারে এখন নয়া বাস পরিবার।
পরিবারের বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি
বিভিন্ন মৌলিক এককের উপর নির্ভর করে পরিবারের বৈশিষ্ট্য গুলো বিভিন্ন রকম হতে পারে। নিচে আমরা পরিবারের বৈশিষ্ট্যগুলো বা Family characteristics নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। পরিবারের বৈশিষ্ট্য গুলো হল:
- বিবাহ সম্পর্ক
- যৌন সম্পর্ক
- আবেগ ও অনুভূতির ভিত্তি
- ব্যক্তিত্বের গঠন
- অর্থ সম্পদের ব্যবস্থাপনা
- নির্দিষ্ট স্থান এবং ভূমির উপর ভিত্তি করে
- বংশ পরিচয়ের ভিত্তি
- সামাজিকীকরণ
- সামাজিক অবস্থান
- সুরক্ষা ও নিরাপত্তা।
বিবাহ সম্পর্ক
সামাজিক নিয়মে বিবাহ করে দুইজন ভিন্ন গোষ্ঠী বা দুই ভিন্ন সমাজের নারী পুরুষ একসঙ্গে বসবাস করার অনুমতি লাভ করে। বিবাহ অনুষ্ঠান এর মধ্য দিয়ে দুইজন ভিন্ন ধারার মানুষ একই গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হয় এবং সন্তান জন্মদান বা উত্তরাধিকার তৈরির জন্য অনুমতি পায়।
যৌন সম্পর্ক
যৌন সম্পর্ক স্থাপনের জন্য সমাজ থেকে বিধি নিষেধ দেওয়া হয়। একটি দম্পতি একমাত্র বিবাহ অনুষ্ঠান এর মাধ্যমে যৌন সম্পর্ক বা সহবাসের অনুমতি লাভ করে। যেহেতু কোন সমাজেই অনাচার প্রশ্রয় পায় না, তাই পরিবারের বৈশিষ্ট্য গুলোর মধ্যে যৌন সম্পর্ক অন্যতম।
আবেগ ও অনুভূতির ভিত্তি
মানুষ তার দৈহিক এবং মানসিক আবেগ প্রকাশ করে একমাত্র পরিবারের মানুষের কাছে। মানুষের সকল অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু থাকে এই পরিবার। ভবিষ্যৎ জীবনের বৃহত্তম ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে যে আবেগ ও অনুভূতি প্রকাশের প্রয়োজন হয়। পরিবারের বৈশিষ্ট্য গুলোর মধ্যে আবেগ ও অনুভূতির ভিত্তি ও খুবই প্রয়োজনীয়।
ব্যক্তিত্বের গঠন
পরিবারের জন্ম নেওয়ার পর যখন একটি শিশু বড় হয়ে উঠতে থাকে তখন পরিবার থেকেই তার ব্যক্তিত্ব গঠনের যাবতীয় শিক্ষা অর্জন করে থাকে। প্রত্যেকটি শিশুর জন্য প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে হল তার পরিবার। বাইরের পরিবেশের সাথে অভিযোজন ক্ষমতা লাভ করার জন্য যে ব্যক্তিত্বের গঠন প্রয়োজন হয় তা একজন শিশু পরিবার থেকেই লাভ করে থাকে।
অর্থ সম্পদের ব্যবস্থাপনা
একটি সুন্দর স্বাভাবিক পরিবার গড়ে ওঠার পেছনে অর্থ সম্পদের ব্যবস্থাপনা বিশেষ রকমের ভূমিকা পালন করে। তাই পরিবারের বৈশিষ্ট্য গুলোর মধ্যে অর্থ সম্পদের ব্যবস্থাপনা ও অন্যতম। পরিবারের ন্যূনতম যেসব চাহিদা থাকে, যেমন: খাদ্য এবং পোশাক, চিকিৎসা, বাসস্থান, সন্তানকে শিক্ষা প্রদান এবং সন্তানের লালন পালন করার জন্য অর্থ সম্পদের ব্যবস্থাপনার মজবুত হওয়া জরুরী।
নির্দিষ্ট স্থান এবং ভূমির উপর ভিত্তি করে
পরিবার গড়ে ওঠার পেছনে সামর্থ্য অনুযায়ী নির্দিষ্ট স্থান এবং ভূমি গুরুত্বপূর্ণ। নির্দিষ্ট স্থান এবং ভূমি ব্যবহার করে একটি পরিবার যেমন গড়ে ওঠে ঠিক তেমনি একই স্থানে পশু শাবক এর আশ্রয়স্থল ও তৈরি হয়। নিরাপদ আশ্রয়স্থল ব্যতীত একক বা যৌথ পরিবার গড়ে উঠতে পারে না।
বংশ পরিচয়ের ভিত্তি
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নামকরণ এবং বংশ পরিচয় তৈরি করার জন্য পরিবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সমাজে এখন যেসব পরিবার রয়েছে তা সবই তাদের পূর্বপুরুষ দের কাছ থেকে পাওয়া বংশ পরিচয় এর উপর ভিত্তি করে তৈরি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মে যেসব পরিবার তৈরি হবে তাঅফ গঠনের জন্য এখন একটি পরিকল্পিত পরিবার থাকা উচিত।
সামাজিকীকরণ
সামাজিকীকরণের প্রধান স্তর বা প্রাথমিক স্তর হিসেবে কাজ করে হলো পরিবার। সামাজিক আচরণ, সংস্কৃতি, ভাষা ইত্যাদি সবকিছুই একজন শিশু জন্মের পর পরিবার থেকে আহরণ করে থাকে।
সামাজিক অবস্থান
ভবিষ্যতের সামাজিকভাবে দৃঢ় একটি অবস্থান তৈরি করার জন্য পরিবার প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে কাজ করে। একজন ব্যক্তি সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সামাজিকভাবে যে যশ, প্রতিপত্তি লাভ করে তার প্রাথমিক কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিবার কাজ করে।
সুরক্ষা ও নিরাপত্তা
একজন ব্যক্তি শিশু থেকে বয়স্ক জীবনাবস্থায় সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা পায় তার পরিবারের কাছ থেকে। পরিবারের সব সদস্যদের কাছে পরিবার একটা আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে। শারীরিক এবং মানসিকভাবে একজন মানুষ পরিবারের কাছ থেকেই সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা লাভ করে।
পরিবার সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নউত্তর
পরিবারের জৈবিক কাজ কোনটি?
পরিবারের করা বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে মানবজাতির স্থায়িত্ব লাভ হয়। আমার পরিবারের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি হয়ে থাকে। এটাই পরিবারের জৈবিক কাজ।
পরিবারের কাজ কি কি?
পরিবারের সদস্যরা বিভিন্নভাবে অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা প্রভৃতি চাহিদা পূরণের দায়িত্ব নিয়ে থাকে। একটি পরিবার সাধারণত অর্থনৈতিক এবং সামাজিক কাজ করে থাকে।
পরিবার শব্দের অর্থ কি?
পরিবার শব্দের অর্থ গুলো হলো: পরিজন বর্গ, বংশ, বাবা-মা, ভাই-বোন নিয়ে গড়া একত্রিত সংসার, বিশেষ অর্থে স্ত্রী।
পরিবার কি ধরনের প্রতিষ্ঠান?
অবৈতনিক মানবিক শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিবারকে বিবেচনা করা হয়। প্রতিটি শিশু জন্মগ্রহণের পর তার প্রাথমিক শিক্ষা পরিবার থেকে গ্রহণ করে থাকে।
মাতৃ বংশানুক্রমিক পরিবার কি?
যেসব পরিবারের মাথা সকল সিদ্ধান্তের মূলে থাকেন এবং সন্তান জন্মানোর পর মায়ের পরিচয় পরিচিত হয় এমন পরিবারকে মাতৃ বংশানুক্রমিক পরিবার বলা হয়ে থাকে।
পরিবার সম্পর্কে আমাদের মতামত
আমাদের আজকের আর্টিকেলে পরিবার কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। প্রত্যেকটি মানুষের জীবনযাত্রার মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিবার কাজ করে থাকে। পরিবার ব্যতীত কেউই পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে উঠতে পারেনা। পরিবার নিয়ে যদি আপনাদের কোন প্রশ্ন বা মতামত থেকে থাকে তাহলে আমাদের অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানান। এবং এরকম আরো তথ্যবহুল আর্টিকেল পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন।