সুষম খাদ্য কাকে বলে? উপাদান, প্রয়োজনীয়তা, তালিকা

5/5 - (1 vote)

শরীরের বৃদ্ধি, বিকাশ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসহ শক্তি যোগানের একমাত্র এবং অন্যতম প্রন্থা সুষম খাদ্য গ্রহণ। এমনটা নয় যে আমরা শুধুমাত্র ক্ষুধা নিবারনের জন্য খাবার খাই। খাবার খাওয়ার মেইন উদ্দেশ্য হচ্ছে– শরীরে সকল ধরনের প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার মাধ্যমে শরীরকে ভেতর থেকে স্ট্রং করে তোলা। 

আর আপনি যদি সবদিক থেকে ফিট থাকতে চান অথবা সুস্থ ও সুন্দর জীবন আশা করেন তাহলে আপনার জীবনে অবশ্যই সুষম খাদ্যের প্রভাব থাকতে হবে।

যাইহোক, এই বিষয়টি আরো ভালোভাবে বুঝতে এখনই পড়ে ফেলুন সুষম সম্পর্কে আলোচিত আজকের আর্টিকেল। কেননা আজ আমরা সুষম খাদ্য কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি, সুষম খাদ্যের উপাদান, প্রয়োজনীয়তা, তালিকা ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

সুষম খাদ্য কাকে বলে

সুষম খাদ্য কাকে বলে, সুষম খাদ্য কত প্রকার ও কি কি, সুষম খাদ্যের ধরন, সুষম খাদ্যের উপাদান, সুষম খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা, সুষম খাদ্যের তালিকা,

মূলত যেসব খাদ্যে, খাদ্যের প্রয়োজনীয় ছয়টি উপাদানই বিদ্যমান থাকে তাই হলো সুষম খাদ্য। আপনি নিশ্চয়ই জানেন খাদ্যে সাধারণত শর্করা, আমিষ, স্নেহ, ভিটামিন, খনিজ লবণ এবং পানি থেকে থাকে। অতএব সুষম খাদ্য হচ্ছে ওই সকল খাবার যেসব খাবারে পরিমিত পরিমাণে আমিষ, শর্করা, ভিটামিন, খনিজ লবণ, স্নেহ ও পানি এই উপাদান গুলো উপস্থিতি থেকে থাকে। 

সুষম খাদ্য বলতে কি বুঝায়

সুষম খাদ্য বলতে এমন এক ধরনের খাদ্যকে বোঝায়, যা মানুষের শরীরের সঠিক বৃদ্ধির জন্য এবং বিভিন্ন কার্যকলাপ সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পুষ্টি উপাদান সমন্বিত করতে পারে। 

কেননা সুষম খাদ্য আমাদের দেহের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় উপাদান যেমন কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, খনিজ লবণ এবং পানির সঠিক সমন্বয়ে গঠিত হয়। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এই উপাদানগুলো সঠিক পরিমাণে থাকা প্রয়োজন যাতে শরীরের শক্তি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং সঠিক শারীরিক কার্যকলাপ বজায় থাকে। 

সুষম খাদ্যের সংজ্ঞা 

সুষম খাদ্যকে সংজ্ঞায়িত করতে চাইলে আপনি নিচের যেকোনো একটি সংজ্ঞা উপস্থাপন করতে পারেন। যথা:

  • যে খাবারে আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদান সঠিক পরিমাণে থাকে তাকে সুষম খাদ্য বলে।
  • যেসব খাদ্য মানুষের প্রয়োজনীয় সার্বিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে পারে তাকে সুষম খাদ্য বলে।
  • প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় খাদ্যের মোট ছয়টি উপাদান অর্থাৎ শর্করা, আমিষ, ভিটামিন, খনিজ লবণ, স্নেহ ও পানি সঠিক অনুপাতে উপস্থিত থাকে তাকে সুষম খাদ্য বলে। যাকে ইংরেজিতে বলা হয় ব্যালেন্স ডায়েট। 
  • যে সকল খাদ্যে সকল প্রকার খাদ্য উপাদান একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ও সঠিক অনুপাতে থাকে এবং দেহের যাবতীয় পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে তাকে সুষম খাদ্য বলে।

এছাড়াও এটাকে আরেকটু ঘুরিয়ে এটাও বলতে পারেন ‘সুষম খাদ্য হলো এমন একটি খাদ্য যা প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, ভিটামিন, খনিজ এবং পানিসহ সব ধরনের পুষ্টির উপাদানের সমন্বিত রূপ।’ এমনকি স্বাস্থ্য ভিত্তিক সংজ্ঞা দিলে সুষম খাদ্যের সংজ্ঞা হিসেবে আপনি এটাও লিখতে পারেন, সুষম খাদ্য এমন একটি খাদ্য যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, শরীরের শক্তি যোগায় এবং সুস্থ জীবনধারা বজায় রাখতে সাহায্য করে বিশেষভাবে। 

এছাড়াও সুষম খাদ্য নিয়ে বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞা রয়েছে। সেটা হচ্ছে– সুষম খাদ্য হলো এমন একটি খাদ্য, যা দৈনিক ক্যালোরির চাহিদা পূরণ করে এবং সেই সঙ্গে মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট এবং ম্যাক্রো নিউট্রিয়েন্ট এর সঠিক মাত্রা সরবরাহ করে, যাতে শরীরের সব ধরনের জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়। 

সুষম খাদ্য কত প্রকার ও কি কি

সুষম খাদ্য ছয় প্রকার। ইতোমধ্যে আমরা আলোচনায় এটা উল্লেখ করেছি সুষম খাবারে মূলত ছয়টি খাদ্য পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকে। আর এটা জানার পর আপনি নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পারছেন সুষম খাদ্য ৬ ভাগে বিভক্ত। যাইহোক এখন জেনে নিন সুষম খাদ্যের প্রকারভেদ সমূহ:

  • শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য 
  • প্রোটিন জাতীয় খাদ্য 
  • স্নেহ জাতীয় খাদ্য 
  • ভিটামিন জাতীয় খাদ্য 
  • খনিজ লবণ জাতীয় খাদ্য এবং পানি।

সুষম খাদ্যের ধরন

অনেকেই আবার সুষম খাদ্যের ধরন জানতে চান। যদি আপনাকে প্রশ্ন করা হয় সুষম খাদ্য কত প্রকার ও কি কি তাহলে এক কথায় উত্তর দেবেন সুসম খাদ্য ছয় প্রকার। কিন্তু যদি এটা বলা হয় সুষম খাদ্যের ধরণ কতটি তাহলে এ প্রশ্নের উত্তরে আপনি ৩ বলতে পারেন। সত্যি বলতে সুষম খাদ্য প্রধানত তিন ধরনের হয়ে থাকে। সেগুলো হলো:

  • উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য 
  • শক্তি দায়ক খাদ্য 
  • রক্ষাকারী খাদ্য 

উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য

যে সকল খাবারে উচ্চ পরিমাণের প্রোটিন রয়েছে সেই খাবারগুলো শরীরের কোষ ও টিস্যু নির্মাণের জন্য অপরিহার্য। আর এর অন্তর্ভুক্ত সবচেয়ে পরিচিত খাবার ডাল, বাদাম, মাংস ও ডিম।

শক্তিদায়ক খাদ্য

ইতিমধ্যে আমরা উল্লেখ করেছি সুষম খাদ্যে কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাট থেকে থাকে। আর শক্তিদায়ক খাদ্য বলতে মূলত ঐ সকল খাবারকে বোঝায় যে সকল খাবারে উচ্চ পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট এবং স্নেহ পুষ্টি উপাদান থেকে থাকে। যেমন চাল, রুটি, আলু, ঘি, তেল সহপ্রভৃতি খাদ্য পণ্য।

রক্ষাকারী খাদ্য

এটা কে আপনি আলাদা কোন নামও দিতে পারেন। যাইহোক সুষম খাদ্যে ভিটামিন এবং খনিজ লবণ নামের এই দুইটি পুষ্টি উপাদান রয়েছে।

মূলত রক্ষাকারী খাদ্য হিসেবে এই তালিকায় ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ খাবার কে বোঝানো হচ্ছে। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরকে সুস্থ সবল রাখতে সর্বোচ্চ প্রটেকশন দিয়ে থাকে। এইসব খাবারের অন্তর্ভুক্ত খাবারগুলো হলো: ফলমূল, সবজি এবং দুধ। 

সুষম খাদ্যের উপাদান

সুষম খাদ্য কাকে বলে, সুষম খাদ্য কত প্রকার ও কি কি, সুষম খাদ্যের ধরন, সুষম খাদ্যের উপাদান, সুষম খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা, সুষম খাদ্যের তালিকা,

সুষম খাবারের উপাদান ছয়টি। সেগুলো হলো —

  • কার্বোহাইড্রেট 
  • প্রোটিন 
  • স্নেহ 
  • ভিটামিন 
  • খনিজ লবণ 
  • পানি

১. কার্বোহাইড্রেট

কার্বোহাইড্রেট কে বাংলায় বলা হয় শর্করা। আমরা সবাই কম বেশি জানি শর্করা হচ্ছে আমাদের শরীরের প্রধান শক্তির উৎস। আর সুষম খাদ্যের একটি অন্যতম উপাদান হচ্ছে শর্করা অর্থাৎ কার্বোহাইড্রেট।

সাধারণত ভাত, রুটি, সবুজ শাকসবজি, ফলমূল এবং আটার তৈরি খাবারগুলোতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়। কার্বোহাইড্রেট আবার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন জটিল কার্বোহাইড্রেট, সরল কার্বোহাইড্রেট অথবা ফাইবার। যেগুলোর প্রত্যেকটি দীর্ঘস্থায়ী শক্তির সরবরাহ করতে সক্ষম। 

২. প্রোটিন

যেটাকে আমরা বাংলায় আমিষ বলে থাকি। আমিষ আমাদের শরীরের বিভিন্ন উপকারে আসে এটা নিশ্চয়ই অল্পস্বল্প হলেও আপনি জানবেন। যাইহোক এটিও সুষম খাদ্যের একটি উপাদান। যেটা দেহের কোষ ও টিস্যু গঠনে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে থাকে।

আমিষ এর ঘাটতি পূরণের জন্য সাধারণত খাওয়া হয় মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল, বাদাম ইত্যাদি খাবার। আর কার্বোহাইড্রেট এর মত প্রোটিনেরও কিছু ধরন রয়েছে। 

একটি হচ্ছে সম্পূর্ণ প্রোটিন এর অন্তর্ভুক্ত খাবারগুলো হচ্ছে মাংস, মাছ, ডিম, দুধ যেগুলো থেকে অ্যামিনো এসিড সরবরাহ হয়ে থাকে আমাদের শরীরে। আরেকটি হচ্ছে অসম্পূর্ণ প্রোটিন, এর অন্তর্ভুক্ত খাবার। যেমন: ডাল, বাদাম। যা একসঙ্গে খাওয়া হলে সেটা সম্পূর্ণ প্রোটিনে পরিণত হয়।

প্রোটিন আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি খাদ্য উপাদান, যেটার ঘাটতি হলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। আর তাই সুষম খাদ্যের এই উপাদান সঠিক মাত্রায় যোগান দেওয়া আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত। 

৩. স্নেহ

সুষম খাদ্যের স্নেহ উপাদান কে বাংলাতে বলা হয় চর্বি। এটি মূলত আমাদের শরীরে শক্তি সঞ্চয় করে এবং কোষগুলোকে বিশেষভাবে রক্ষা করে থাকে। চর্বি সঞ্চিত করতে পারবে এমন খাবারগুলো হচ্ছে তেল, ঘী, মাখন বাদাম সহ প্রভৃতি। আপনি যদি শরীরে শক্তি সরবরাহ করতে চান, দেহের অঙ্গ গুলোকে রক্ষা করতে চান এবং হরমোন উৎপাদন করতে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে চর্বি জাতীয় খাবার গুলো নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখার অভ্যাস করুন।।

আর হ্যাঁ, সুষম খাদ্য উপাদান চর্বিরও আবার ধরন রয়েছে। একটি হচ্ছে অসম্পৃক্ত চর্বি, এর অন্তর্ভুক্ত খাদ্যপণ্য হলো – জলপাই তেল, বাদাম সয়াবিন তেল। আরেকটি হচ্ছে স্যাচুরেটেড চর্বি । আর এর অন্তর্ভুক্ত খাদ্য পুণ্যগুলো হচ্ছে- মাখন, নারিকেল তেল, লার্ড সহ প্রভৃতি, যেগুলো হৃদ রোগের ঝুঁকি কমাতে সর্বোচ্চ সহায়ককারী খাদ্য।

৪. ভিটামিন

ভিটামিনের অভাবে আমাদের শরীরে নানাবিধ রোগের আবির্ভাব ঘটে। মূলত ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন কে আমাদের শরীরের চর্বিযুক্ত টিস্যু গুলোকে রক্ষার জন্য সর্বোচ্চ প্রোটেকশন দিয়ে থাকে। অন্যদিকে ভিটামিন বি ও ভিটামিন সি শরীরে পুষ্টি ও শক্তি সঞ্চয় করে।

আপনি যদি ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করতে চান তাহলে খেতে হবে শাকসবজি অথবা দুগ্ধজাত খাবার। কেননা এই খাবারগুলোতেই অতিরিক্ত পরিমাণে ভিটামিন থেকে থাকে। এছাড়াও অনেকেই ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের মাধ্যমেও শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে থাকেন।

৫. খনিজ লবণ

সুষম খাদ্যে উপস্থিত রত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান খনিজ লবণ। যার অভাবে দাঁত ও হাড়ের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। কেউ যদি খনিজ লবণের ঘাটতি পূরণ করে তাহলে দাঁত এবং হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো থাকে পাশাপাশি রক্ত তৈরিতেও ভূমিকা রাখে এই পুষ্টি উপাদান। শুধু তাই নয় স্নায়ুতন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখতেও খনিজ লবণ বেশ কার্যকরী। 

আপনি যদি সুষম খাদ্যের এই উপাদান সম্পর্কে আরো জানতে চান তাহলে অনুসন্ধান করতে পারেন অনলাইনে। আর হ্যাঁ খনিজ লবণের ঘাটতি পূরণে নিয়মিত খেতে পারেন শাকসবজি, ফলমূল, মাছ, দুধ ইত্যাদি খাবার। বিশেষ করে ক্যালসিয়াম এবং লৌহজাতীয় খাবারে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ লবণ রয়েছে। যেটা আমাদের প্রত্যেকের শরীরের জন্য বেশ উপকারী। 

৬. পানি 

পানির অপর নাম জীবন। পানিতে যে উপাদান গুলো রয়েছে সেগুলো মূলত আমাদের শরীরকে ডিহাইড্রেট হওয়া থেকে বাঁচায়। এজন্য সুষম খাদ্যের এই উপাদানের ঘাটতি পূরণ করার প্রয়োজন পড়ে খাবার গ্রহণের মাধ্যমে। শুধুমাত্র পানি নয় এই পানির ঘাটতি বিভিন্ন ফলমূল এবং শাকসবজি খাওয়ার মাধ্যমেও পূরণ করা যায়। যেমন ধরুন– শসা।

তো পাঠক বন্ধুরা, সুষম খাদ্য কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি এটা জানার পর নিশ্চয়ই সুষম খাদ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে জানার আগ্রহ জাগছে! যদি তাই হয় তাহলে সুষম খাদ্যের গুরুত্ব, সুষম খাদ্য সংরক্ষণের উদ্দেশ্য, সুষম খাদ্যের পিরামিড চার্ট, সুষুম খাবারের তালিকা সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে নিচের অংশটুকু মনোযোগ সহকারে একবার পড়ুন। 

পাশাপাশি আপনি চাইলে আমাদের ওয়েবসাইট থেকে আরও পড়তে পারেন– পুষ্টি কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি এ সম্পর্কিত আরো একটি আর্টিকেল। যা ইতোমধ্যে আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছি। 

সুষম খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা 

সুষম খাদ্য কাকে বলে, সুষম খাদ্য কত প্রকার ও কি কি, সুষম খাদ্যের ধরন, সুষম খাদ্যের উপাদান, সুষম খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা, সুষম খাদ্যের তালিকা,

সুস্বাস্থ্যের জন্য সুষম খাবারের গুরুত্ব বলে শেষ করার মত নয়। কেনোনা সুষম খাদ্য হচ্ছে এমন একটি খাদ্য, যা সমস্ত প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সঠিক পরিমাণে সরবরাহ করে। ফলে আমাদের শরীর সুস্থ ও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এজন্য নিঃসন্দেহে এটা বলা যায় আমাদের শরীরের জন্য সুষম খাদ্যের গুরুত্ব অনেক। আর এটা আপনি বুঝতে পারবেন যদি সুষম খাদ্যের উপকারিতা বা প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি জানতে পারেন। 

সুষম খাদ্য খাওয়ার ফলে সাধারণত নিম্ন বর্ণিত উপকার গুলো আমরা পেয়ে থাকি। যথা—

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়া 
  • মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়া 
  • শক্তি ও কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়া 
  • শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি নিশ্চিত 
  • চুল ও ত্বকের উন্নতি 
  • ঘুমের উন্নতি 
  • পেটের স্বাস্থ্য ভালো থাকা 
  • মানসিক চাপ কমে যাওয়া সহ প্রভৃতি
  • স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা। 

এক কথায়, সুষম খাদ্য আমাদের শরীরে সঠিক ও পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে। এর ফলে আমাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় থাকে, শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায় এবং সুষম খাদ্যের চর্বি ও ক্যালোর পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত থাকে বলে স্থূলতা ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি কমে যায়, পাশাপাশি মানসিক সুস্থতা বিরাজ করে। 

সুষম খাদ্য সংরক্ষণের উদ্দেশ্য 

ইতিমধ্যে আমরা এটা উল্লেখ করেছি সুষম খাদ্যের একাধিক উপকারিতা রয়েছে। আমরা জানি শরীরের স্বাভাবিক কর্ম ক্ষমতাকে বজায় রাখতে নিয়মিত প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং ক্যালরি চাহিদাকে পূরণ করতে গ্রহণ করা হয় খাবার। আর এই চাহিদা তখনই পূরণ হয়ে থাকে যখন

আমাদের খাবারটি সুষম খাবার হয়ে থাকে। কেননা খাবারের মাঝে একটি সুষম বন্টন থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। এটা যদি না থাকে তাহলে খাবারের সাথে সাথে শারীরিক পুষ্টির মাঝে ভারসাম্যহীনতা দেখা দেওয়ার সুযোগ বেড়ে যেতে পারে। 

যাতে করে শরীর কোনরকম শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন না হয় এবং যেকোনো রোগের বা যে কোন শারীরিক সমস্যার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ প্রোটেকশন দিতে পারে এই উদ্দেশ্যেই সুষম খাদ্য সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে আমাদের জন্য। আর শুধুমাত্র প্রাপ্ত বয়স্করা নয়, বাচ্চা শিশুদের জন্যও সুষম খাদ্যের ঘাটতি দৈহিক ও মানসিক বিকাশে বাধার সৃষ্টি করে।

আর দৈহিক ও মানসিক বিকাশে যাতে বাধা সৃষ্টি করতে না পারে এই উদ্দেশ্যেই সুষম খাদ্য প্রয়োজন অনুযায়ী খাওয়া উচিত। আর এজন্যই জেনে নিন সুষম খাদ্যের রূপরেখা অর্থাৎ সুষম খাদ্য পিরামিড সম্পর্কে।

সুষম খাদ্যের তালিকা

সুষম খাদ্য কাকে বলে, সুষম খাদ্য কত প্রকার ও কি কি, সুষম খাদ্যের ধরন, সুষম খাদ্যের উপাদান, সুষম খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা, সুষম খাদ্যের তালিকা,

সুষম খাদ্যের পিরামিড ৬টি স্তরে বিভক্ত। একটি হচ্ছে সর্বনিম্ন স্তর, দ্বিতীয় স্তর, তৃতীয় স্তর, চতুর্থ স্তর এবং পিরামিডের শীর্ষস্তর। 

সর্বনিম্ন স্তরে ওই সকল খাবার গুলো অবস্থান করছে যেগুলো আমাদের শরীরে প্রচুর পরিমাণে শক্তির যোগান দিতে পারে। অতএব কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার। আর এই খাবারগুলো আমাদের দৈনিক প্রচুর পরিমাণে খাওয়া উচিত। যেমন ধরুন: ভাত, রুটি, আটা, শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদি। 

অন্যদিকে দ্বিতীয় স্তরের অন্তর্ভুক্ত খাবারগুলো হল প্রোটিন খনিজ এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার। যেমন মাছ মাংস ডিম ডাল বাদাম। আর তৃতীয় স্তরে অন্তর্ভুক্ত খাদ্যগুলো হল: দুধ, দই, পনির, যেগুলো আমাদের প্রোটিনের চাহিদা পূরণের মাধ্যমে হার ও দাঁতের সুস্থতা বজায় রাখে সে সাথে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি এর চাহিদাও পূরণ করে। 

একইভাবে চতুর্থ ইস্তরে অন্তর্ভুক্ত খাবারগুলো হল অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার যেমন: তেল, মাখন, ঘি। আর পিরামিডের শীর্ষ অবস্থিত খাবারগুলো হল ওই সকল খাবার যেগুলো অস্বাস্থ্যকর চর্বি ও চিনি দিয়ে তৈরি। অর্থাৎ চিনি মিষ্টি প্রক্রিয়াজাতকরণ খাবার। এই খাবারগুলো খুবই সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।  

আর হ্যাঁ, কেউ কেউ খাদ্য পিরামিড না বোঝার কারণে একটি সুষম খাদ্য তালিকা উল্লেখ করার বিষয়ে রিকোয়েস্ট করে থাকেন। এজন্য আমরা নিচের চার্ট সাজেস্ট করছি। আপনি সাধারণত প্রতিদিন খাদ্য হিসেবে কি কি খেতে পারেন তার একটি ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব এই চার্টের মাধ্যমে। 

সুস্বাস্থ্যের জন্য সুষম খাদ্য তালিকা

  • প্রচুর পরিমাণে পানি 
  • প্রতিদিন রুটি এবং ভাত 
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলমূল 
  • প্রতিদিনের খাবারে শাক সবজি মাংস মাছ ডিম বাদাম 
  • চর্বি তেল মিষ্টি জাতীয় খাবার 
  • দুধ দই পনিরসহ অন্যান্য খাবার।

সুষম খাদ্যের উপকারিতা 

সত্যি বলতে সুষম খাদ্যের উপকারিতা অপরিসীম। কেননা সুষম খাদ্যে খাদ্যের ছয়টি উপাদান থাকার কারণে আমাদের শরীরের সকল উপকার একসঙ্গে পাওয়া যায়। শরীর অনেক বেশি স্ট্রং থাকে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়, হার এবং দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো থাকে, চুল পড়ার সমস্যা দূর হয় শরীর সুস্থ থাকে। আর এজন্য স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকা অর্থাৎ সুষম খাদ্য তালিকা মেনে প্রতিদিন খাবার খাওয়া উচিত। 

আপনি যদি খাবারের তালিকা নিয়ে আরো বিস্তারিতভাবে জানতে চান তাহলে কোন খাবারে কোন কোন পুষ্টি উপাদান থাকে এবং কোন পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের জন্য অধিক বেশি কার্যকরী সেই সাথে কোন কোন পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরে কতটুকু পরিমাণে প্রয়োজন এ সম্পর্কে এ টু জেড জেনে নিন। 

📌 আরো পড়ুন 👇

কেননা এতে করে আপনার জন্য প্রয়োজন এমন খাদ্য তালিকা বা সুষম খাদ্যের তালিকা নিজেই তৈরি করে নিতে পারবেন। মনে রাখবেন, বয়স অনুযায়ী সুষুম খাদ্য তালিকা আলাদা হতে পারে। আর তাই আপনার বাচ্চার জন্য সুষম খাদ্যের তালিকার ব্যাপারে পরামর্শ নিতে পারেন চিকিৎসকের কাছে। 

সুষম খাদ্য সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নউত্তর

সুষম খাদ্য কি কি? 

আমি শর্করা প্রোটিন ভিটামিন খনিজ লবণ এবং পানি জাতীয় খাবার গুলোই হচ্ছে সুষম খাদ্য। 

সুষম খাদ্য কাকে বলে উদাহরণ দাও? 

যে সকল খাবারে খাদ্যের ছয়টি পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকে তাকে সুষম খাদ্য বলে। সুষম খাদ্যের উদাহরণ হলো – ফলমূল, শাকসবজি, প্রোটিন এবং দুধ জাতীয় খাবার।

সুষম খাদ্য কি?

সুষম খাদ্য হলো ওই সকল খাবার যেসব খাবারের আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান রয়েছে। আমাদের শরীরের জন্য মূলত সুষম খাদ্যের অনেক প্রয়োজন রয়েছে। 

সুষম খাদ্য সম্পর্কে আমাদের মতামত

সত্যি এটাই, সুষম খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের শরীরের বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা সম্ভব। এটি শরীরকে সুস্থ, কর্মক্ষম এবং রোগমুক্ত রাখতে সাহায্য করে। তো আজ আমরা আমাদের এই আলোচনায় সুষম খাদ্য কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি এই নিয়ে যে বিষয়গুলো তুলে ধরেছি আশা করছি আপনার প্রাত্যহিক জীবনে তা কাজে আসবে। 

আমাদের প্রত্যেকেরই মাথায় রাখা উচিত সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করে এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ করে আমরা আমাদের জীবনের মান উন্নত করতে পারি এবং ইনজয় করতে পারি সুন্দর ও সুস্থ জীবন। তাই আসুন সবাই সুষম খাদ্য তালিকা মেনে খাবার গ্রহণ করি এবং ভালো থাকে সুস্থ থাকি। 

সুষম খাদ্য সম্পর্কে আপনাদের আর কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদেরকে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানান। এবং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এমন আরো শিক্ষামূলক আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।

Sharing is Caring

Leave a Comment