গুণিতক কাকে বলে? গুণিতকের সূত্র, কত প্রকার ও কি কি

5/5 - (1 vote)

গণিতের বিশাল জগতে গুণিতক একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কোনো সংখ্যাকে অন্য কোনো পূর্ণ সংখ্যা দিয়ে গুণ করলে যে সব সংখ্যা পাওয়া যায়, সেগুলোই হলো সেই প্রথম সংখ্যার গুণিতক।

আজকের আর্টিকেলে গুণিতক কাকে বলে, গুড়িতোক কত প্রকার ও কি কি, গুনিতক এর বৈশিষ্ট্য, গুণিতকের সূত্র ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। গুণিতক সম্পর্কে জানতে আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন।

গুণিতক কাকে বলে

গুণিতক কাকে বলে, গুণিতক কত প্রকার ও কি কি, গুনিতক এর বৈশিষ্ট্য, গুনিতকের সূত্র,

গুণ নির্ণয় বিষয়ক যেকোনো সমস্যা সমাধানে গুণিতক একটি প্রাথমিক ধারণা। কেননা সহজ থেকে জটিলতর সমস্যা সমাধানেও রয়েছে এর ব্যবহার। তাহলে গুণিতক দ্বারা আসলে কী বোঝায়?

যখন একটি সংখ্যাকে অপর একটি সংখ্যা দ্বারা গুণ করে নির্দিষ্ট গুণফল তৈরি হয়, তখন ঐ গুণফলটিকে প্রথম সংখ্যা বা গুণ্য (যাকে গুণ করা হয়েছে) এর গুণিতক বলা হয়। অর্থাৎ সংক্ষেপে বলতে চাইলে, গুণিতককে নামতা হিসেবে উল্লেখ করা যায়।

একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি আরও পরিষ্কার করা যায়। আমরা যদি ৭ সংখ্যাটিকে ৪ দ্বারা গুণ করি, তাহলে তার গুণফল হবে ২৮।

৭×৪=২৮ ;

এখানে ২৮ হলো গুণফল এবং এই গুণফলটিই হলো ৭ এর গুণিতক। এভাবে প্রত্যেকটি সংখ্যারই অসংখ্য গুণিতক নির্ণয় করা সম্ভব। 

গুণিতক সম্পর্কে আরও বেশি জানতে চাইলে গুণিতকের বৈশিষ্ট্যগুলো ভালোভাবে বুঝতে হবে। তাহলে গুণিতকের প্রকৃতি এবং কোন ক্ষেত্রে কেমন ফলাফল হতে পারে তা আরও ভালোভাবে জানা যাবে।

এছাড়াও গুণ সম্পর্কে আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। গুণ সম্পর্কে জানতে নিচের আর্টিকেলটি পড়ুন।

আরো পড়ুন: গুণ কাকে বলে

গুণিতকের বৈশিষ্ট্য 

গুণিতক কাকে বলে তা তো আমরা উদাহরণসহ জেনেছি। এবার এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিতভাবে জানতে গুণিতকের বৈশিষ্ট্যগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করা যাক:

  • সকল সংখ্যার গুণিতক “শূণ্য”।
  • সকল সংখ্যার গুণিতক অসীম। কেননা গুণিতকের সংজ্ঞা অনুযায়ী কোনো সংখ্যাকে যেকোনো সংখ্যা দ্বারা গুণ করলেই গুণিতক পাওয়া যায়। আর এই গুণক সংখ্যাটি অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। তাই এর গুণিতকও অসীম।
  • প্রত্যেকটি সংখ্যা নিজেই তার গুণিতক। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ৬ কে ১ দ্বারা গুণ করলে গুণফল আসে ৬। যেহেতু গুণফলটিই গুণিতক, তাই ৫ এর এর গুণিতক ৬। তেমনি, ৩ এর গুণিতক ৩, ১৫ এর গুণিতক ১৫ ইত্যাদি।
  • সাধারণ গাণিতিক হিসাবে আমরা পূর্ণসংখ্যার গুণিতক বেশি ব্যবহার করি, তবে দশমিক সংখ্যার গুণিতকও সম্ভব।
  • যেকোনো সংখ্যার গুণিতকের মান গুণোত্তর ধারার হারে বাড়তে থাকে। যেমন ৪ এর গুণিতক ৪,৮,১২,১৬,২০,২৪…  ইত্যাদি। অর্থাৎ এখানে একটি নির্দিষ্ট ধারা বজায় থাকবে।
  • কোনো জোড় সংখ্যার গুণিতক সর্বদাই জোড় সংখ্যা হবে, বিজোড় হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যেমন ২ এর গুণিতক ২,৪,৬,৮ ইত্যাদি।
  • গুণিতক দ্বারা যদি গুণনীয়ককে ভাগ করা হয় তবে মূলদ সংখ্যা পাওয়া যাবে। (মূলদ সংখ্যা বলতে বুঝায় যে সংখ্যাকে দুইটি পূর্ণসংখ্যার অনুপাত আকারে প্রকাশ করা যায়।) 
  • ঋণাত্মক সংখ্যার গুণিতক ঋণাত্মক না ধনাত্মক যেকোনোটাই হতে পারর গুণকের চিহ্নের উপর ভিত্তি করে।
  • যেকোনো সংখ্যার সকল গুণিতক ঐ সংখ্যাটি দ্বারা নি:শেষে বিভাজ্য। কারণ গুণিতক যেহেতু ঐ সংখ্যাটিরই গুণোত্তর ধারার উপাদান, তাই ভাগ প্রক্রিয়ায় কোনো অবশেষ থাকবে না।

গুণিতক কত প্রকার

গুণিতকের বৈশিষ্ট্যগুলো এর প্রকৃতি সম্পর্কে সকল ধরণের ধারণা দেয়। এই ধারণাগুলো যদি স্পষ্ট হয়ে থাকে তবে আমরা এর পরবর্তী বিষয় অর্থাৎ গুণিতকের প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করতে পারি। 

গুণিতক সাধারণত দুই প্রকার। যথা: সাধারণ গুণিতক, লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতক। নিম্নের সকল গুণিতক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

সাধারণ গুণিতক

গুণিতকের প্রকারভেদের মধ্যে প্রথমটি হলো সাধারণ গুণিতক। সাধারণ গুণিতক কী তা বিশ্লেষণ করার পূর্বে এটা সম্পর্কিত একটি উদাহরণ দেয়া যাক-

ধরা যাক,

২ এর গুণিতক- ২,৪,৬,৮,১০,১২….

৪ এর গুণিতক- ৪,৮,১২,১৬,২০….

এখানে ২ এবং ৪ এর গুণিতকের মধ্যে ৪, ৮ এবং ১২ এই তিনটি গুণিতক সাধারণ অর্থাৎ এই তিনটি গুণিতক উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তাই এদেরকে বলা হয় সাধারণ গুণিতক। অর্থাৎ যে গুণিতক দুই বা ততোধিক সংখ্যার মধ্যে সাধারণ অর্থাৎ তাদেরকে দুই বা ততোধিক সংখ্যার গুণিতকের লিস্টে পাওয়া যাবে তাদেরকে সাধারণ গুণিতক বলা হয়।

গুণিতক যেমন অসংখ্য, তেমনি দুই বা ততোধিক সংখ্যার সাধারণ গুণিতকের সংখ্যাও অসংখ্য যা অসীম পর্যন্ত চলতেই থাকে। তবে দুটি জোড় সংখ্যার সাধারণ গুণিতকের সংখ্যা দুটি জোড়-বিজোড় সংখ্যার তুলনায় বেশি হয়।

লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতক

সাধারণ গুণিতক সম্পর্কে তো জানা হলো। এখন লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতক সম্পর্কে জানা যাক। মূলত সাধারণ গুণিতকের একই ছোট রূপ হলো লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতক। আবারও ফিরে যাই সেই আগের উদাহরণে, 

২ এর গুণিতক- ২,৪,৬,৮,১০,১২…

৪ এর গুণিতক- ৪,৮,১২,১৬,২০…

এখন, ২ এবং ৪ এর গুণিতকের মধ্যে ৪,৮,১২.. এই গুণিতকগুলো সাধারণ অর্থাৎ এটি দুটোর মধ্যেই বিদ্যমান। এই সাধারণ গুণিতকগুলোর মধ্যে আবার ৪ সবচেয়ে ছোট সাধারণ গুণিতক। এই মানটিকেই বলা হচ্ছে লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতক। অর্থাৎ সাধারণ গুণিতকগুলোর মধ্যে যেটি সবচেয়ে ছোট, তাকেই লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতক বলা হয়।

আমরা আগেই জেনেছি যে, কোনো সংখ্যার গুণিতক অসীম হয়, তাই এর সর্বোচ্চ মান নির্ণয় করা অসম্ভব। একারণেই সাধারণ গুণিতক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে হিসাবের প্রয়োজনে সবচেয়ে ছোট মানটিকেই ধরা হয়। আর এই প্রক্রিয়াও গুণনীয়ক নির্ণয়ের প্রক্রিয়া থেকে সহজ। 

গুণিতক নির্ণয়ের সূত্র

গুণিতক বলতে আমরা আগেই জেনেছি কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যাকে অপর বিভিন্ন সংখ্যা দ্বারা গুণ করলে যেসকল গুণফল আসবে সেগুলোই গুণিতক। তাই গুণিতক নির্ণয়ের জন্য গুণের যে স্বাভাবিক সূত্র সেটাই প্রযোজ্য। অর্থাৎ, 

গুন্য × গুণক= গুণফল।

শুধু সাধারণ গুণের থেকে পার্থক্য হলো, সাধারণ গুণ করার সময় গুণ্য এবং গুণক যেকোনো সংখ্যা হতে পারবে। কিন্তু গুণিতক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে গুণ্য নির্দিষ্ট থাকে এবং গুণক বারবার পরিবর্তিত হতে থাকবে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়,

৫ এর ৪ টি গুণিতক নির্ণয়:

এখানে যেহেতু ৫ এর গুণিতক নির্ণয় করতে হবে, তাই গুণ্য হবে ৫। এবার গুণ্যকে নির্দিষ্ট রেখে গুণক পরিবর্তন করতে হবে। যেমন, 

৫×১=৫ ; ৫×২=১০; ৫×৩=১৫; ৫×৪=২০ ; এভাবে অসীম পর্যন্ত যাওয়া যাবে। যেহেতু আমরা ৪ টি গুণিতক নির্ণয় করব, তাই আপাতত ৪ পর্যন্তই গুণক নেয়া হবে।

এখানে, ৫ গুণ্য এবং ১,২,৩ এবং ৪ এগুলো হলো গুণক। গুণফল হিসেবে পাওয়া যায় ক্রমান্বয়ে ৫, ১০, ১৫ এবং ২০। এই গুণফলগুলোই হলো ৫ এর গুণিতক

তাই সর্বশেষে উত্তরটি দাঁড়ায়, ৫ এর চারটি গুণিতক হলো ৫,১০,১৫ এবং ২০।

এভাবেই, যেকোনো সংখ্যার গুণিতক নির্ণয় করা হয়।

ভগ্নাংশের গুণিতক বের করার নিয়ম

গুণিতক কাকে বলে, গুণিতক কত প্রকার ও কি কি, গুনিতক এর বৈশিষ্ট্য, গুনিতকের সূত্র,

এতক্ষণ আমরা বিভিন্ন সংখ্যার সাধারণ গুণিতক নিয়ে আলোচনা করলাম। এবার একটু জটিল প্রক্রিয়ার দিকে যেতে হবে যেখানে আমরা ভগ্নাংশের গুণিতক বের করার নিয়ম দেখব।

গুণিতক পূর্ণসংখ্যা কিংবা ভগ্নাংশ হোক, সবার ক্ষেত্রেই একই। তবে এটা নির্ণয়ের নিয়ম ভগ্নাংশে কিছুটা আলাদা। পূর্ণসংখ্যার ক্ষেত্রে নামতা অনুযায়ী ঐ সংখ্যাটিকে গুণ করে গেলেই ক্রমান্বয়ে গুণিতক পাওয়া যাবে।

কিন্তু ভগ্নাংশের ক্ষেত্রে এই গুণকগুলো একটি নির্দিষ্ট নিয়মে গুণ হবে। আমরা জানি, ভগ্নাংশে হর এবং লব থাকে। গুণিতক বের করার সময় গুণকগুলো ভগ্নাংশের হরের সাথে গুণ হয়, 

উদাহরণস্বরূপ ধরা যাক-

১/৫ এর ৩ টি গুণিতক নির্ণয়

এখন ১/৫×১= ১/৫

১/৫×২= ২/৫ 

১/৫×৩= ৩/৫ 

প্রতিক্ষেত্রেই ১,২,৩ এই গুণগুলো লব ১ এর সাথে গুণ হওয়ার কারণে গুণফল হয়েছে ১/৫, ২/৫ এবং ৩/৫। তাই ১/৫ এর ৩ টি গুণিতক হলো ১/৫, ২/৫ এবং ৩/৫। 

এছাড়াও ভগ্নাংশ সম্পর্কে আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনি যদি ভগ্নাংশ সম্পর্কে জানতে চান তাহলে নিজের আর্টিকেলটি পড়ুন।

আরো পড়ুন: ভগ্নাংশ কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি 

এখন একটা প্রশ্ন তৈরি হতে পারে যে কেনো গুণক লবের সাথেই গুণ হবে, হরের সাথে কেনো নয়। এই প্রশ্নের যৌক্তিক উত্তর পেতে হলে গুণ করার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার দিকে একটু নজর দিতে হবে।

📌 আরো পড়ুন 👇

আমরা জানি যে, প্রত্যেকটি পূর্ণসংখ্যাই একটি ভগ্নাংশ যার হর ১। এখন আমরা যখন পূর্ণসংখ্যার গুণিতক নির্ণয় করি তখন গুণক এই লবগুলোর সাথেই গুণ হয়। নিচে হর ১ থাকায় এটা আলাদাভাবে উল্লেখ করার প্রয়োজন হয় না। সেই একই নিয়মেই ভগ্নাংশের গুণিতক এভাবে নির্ণয় করা হয়।

গুণিতক সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নউত্তর

গুণিতক থেকে কি গুণক নির্ণয় সম্ভব?

সম্ভব। গুণিতককে গুণ্য দ্বারা ভাগ করলেই সেখান থেকে গুণক বের করা যাবে। শুধু তাই নয়, এর অপর দিকে, গুণিতককে গুণক দ্বারা ভাগ করার মাধ্যমে গুণ্য নির্ণয় করাও সম্ভব।

গুণিতককে সংক্ষেপে বোঝাতে কোন বিষয়টি উল্লেখ করা হয়?

নামতা। নামতার মাধ্যমে যেমন ধারাবাহিক ভাবে কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যার গুণফলগুলো বের করা যায়, সেই প্রক্রিয়াটিকেই গুণিতক বলা হয়। তাই গুণিতককে সহজে বোঝাতে হলে “নামতা” ধারণাটিকে ব্যবহার করা যেতে পারে

গুণিতকে গণিতের কোন মৌলিক প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করা হয়?

গুণ। গুণিতক যে প্রক্রিয়ায় করা হয় তাতে শুধুই গুণের ব্যবহার থাকে। তাই এতে এই মৌলিক প্রক্রিয়াটিই ব্যবহৃত হয়।

গুনিতক সম্পর্কে আমাদের মতামত

গুণিতক সম্পর্কিত আলোচনা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা আবশ্যক। কেননা এই বিষয়গুলো নিয়ে বিভিন্ন গাণিতিক সমস্যা সমাধান করা হয়। আর যেসকল বিষয় এখানে আলোচিত হয়েছে সেগুলো সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারলে আশা করা যায় গুণিতক নিয়ে তেমন কোনো সমস্যা হবে না।

তবে, অবশ্যই গুণিতকের মূল বিষয়গুলো সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে। বিশেষত গুণিতকের বৈশিষ্ট্য অংশে যে আলোচনা করা হয়েছে সেগুলো। এর মাধ্যমেই সব ল.সা.গু. বা লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতক নির্ণয়ের সমাধান অত্যন্ত সহজ এবং শুদ্ধ হবে।

Sharing is Caring

Leave a Comment