বীজ কাকে বলে? বীজ কত প্রকার ও কি কি

5/5 - (1 vote)

সাধারণত নিষেকোত্তর রূপান্তরিত এবং পরিস্ফুটিত ডিম্বককে বীজ বলা হয়ে থাকে। উদ্ভিদ ভেদে কিছু কিছু বীজকে আবার কার্নেল বলা হয়ে থাকে। বীজ বলা হোক বা কার্নেল, বিজ হল গাছের সেই অংশ যেখান থেকে নতুন গাছ উৎপন্ন হয়।

প্রত্যেকটি গাছের বীজ একটি আবরণ দ্বারা আবৃত থাকে এবং এতে বীজের জন্য যে খাদ্য দরকার তা খোলসের মধ্যেই সংরক্ষিত থাকে। আবৃত বীজি এবং নগ্নবীজী উদ্ভিদের পরিপক্ক ডিম্বকের সফল নিষেক এর পরিবর্ধনের ফসল। বীজ কিছু কিছু সময় মাতৃগাছের অভ্যন্তরে কিছু পরিবর্তনের ফসল হিসেবেও সঞ্চিত অবস্থায় থাকে।

বীজের মাধ্যমে উদ্ভিদের বংশবিস্তার সম্পন্ন হয়, যা সাধারণত পরাগায়নের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। নিচে আমরা বীজ কাকে বলে এবং বীজ কত প্রকার, ভালো বীজের বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

বীজ কাকে বলে

বীজ কাকে বলে, বীজ কত প্রকার ও কি কি

বীজ সাধারণত একটি ভ্রূণীয় উদ্ভিদ হিসেবে পরিচিত। বীজের বাইরে যে আবরণ থাকে তা প্রতিরক্ষামূলক হয়ে থাকে। এটি একটি পরিপক্ক ডিম্বাণু যা পরাগ দ্বারা নিষিক্ত হয়। নিষিক্ত হওয়ার পর ভ্রূণকোশ থেকে ভ্রূণ এবং ডিম্বাশয়ের ত্বক থেকে ক্রমশগ বীজের বাইরের প্রতিরক্ষামূলক আবরণ তৈরি হয়।

এক কথায় বলতে গেলে যা কিছু বপন করা যায় তাই হল বীজ। উদাহরণ স্বরূপ বলতে গেলে: আলুর কন্দ বপন করা হয়, ভুট্টার বীজ বপন করা হয় যা সাধারণত একটি খোসা বা ভূষি দ্বারা আবৃত থাকে, সূর্যমুখীর ও বীজ বপন করা হয়ে থাকে যা ভুসি দ্বারা আবৃত থাকে। সুপুষ্পক উদ্ভিদের বীজ সাধারণত ডিম্বাশয় এর মধ্যেই থাকে। আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে বীজ রয়েছে যেগুলো “শুকনো ফল” থেকে তৈরি হয়েছে। ধারণা করা হয়, প্রাচীন যুগের উদ্ভিদ গুলো ছিল নগ্নবীজী এবং এগুলোতে কোনরকম ডিম্বাশয় ছিল না।

বীজের সংজ্ঞা 

উদ্ভিদ তত্ত্ব অনুসারে এবং কৃষি তত্ত্ব অনুসারে বীজের সংজ্ঞা সাধারণত ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। উদ্ভিদ তত্ত্ব অনুসারে, ফুলের পরাগরেণু দ্বারা ডিম্বক নিষিক্ত হওয়ার পর পরিপক্ক যে ডিম্বক তৈরি হয় তাকে বীজ বলে।

অপরদিকে কৃষি তত্ত্ব অনুসারে উদ্ভিদের যে অংশটি পুনরায় বংশবিস্তার এর জন্য ব্যবহার করা হয় তাকে বীজ বলা হয়ে থাকে।

বীজ কত প্রকার ও কি কি

একক ব্রিজের আকার, আকৃতি এবং বৈশিষ্ট্য এক এক রকম হয়ে থাকে। সাধারণত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। চলুন বীজের প্রকারভেদ সম্পর্কে জেনে নেই:

ফসল উৎপাদন করার জন্য যে বীজ ব্যবহার করা হয়ে থাকে তা প্রথমত দুইটি ভাগে ভাগ করা হয়। সেগুলো হল: 

  • উদ্ভিদ তাত্ত্বিক বীজ এবং 
  • কৃষি বীজ।

অন্যভাবে বীজের শ্রেণি বিন্যাস করতে গেলে বীজকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। 

  • ব্রিডার ব্রিজ,
  • ভিত্তিবীজ,
  • প্রত্যায়িত বীজ।

১. ব্রিডার বীজ

বীজ কাকে বলে, বীজ কত প্রকার ও কি কি

সাধারণত গবেষণাগারে বা বিশেষ পরিবেশে নতুন জাতের যে বীজ উৎপন্ন করা হয়ে থাকে তাকে ব্রিডার বীজ বলে। 

২. ভিত্তি বীজ

বীজ কাকে বলে, বীজ কত প্রকার ও কি কি

ব্রিডার বীজ এর মত ফ্রেশ কিন্তু পরিমাণে বেশি এমন ধরনের বীজকে ভিত্তি বীজ বলা হয়ে থাকে। এরাও ব্রিডার নিজের মত বিশুদ্ধ পরিবেশে তৈরি হয়। 

৩. প্রত্যায়িত বীজ 

বীজ কাকে বলে, বীজ কত প্রকার ও কি কি

ভিত্তি বীজ থেকে যে বীজ তৈরি করা হয় এবং পরবর্তীতে কৃষকদের জন্য বাজারজাতকরণ করা হয় তাকে প্রত্যায়িত বীজ বলা হয়ে থাকে।

ভালো বীজের বৈশিষ্ট্য কি কি

ভালো মানের ফসল উৎপাদন করার পূর্ব শর্ত হলো নিখুঁত বীজ সংগ্রহ করা। কয়েকটি বৈশিষ্ট্য দেখলেই অনুমান করা যায় ভালো বীজ কোনটি এবং কোনটি খারাপ বীজ। চলুন এক নজরে ভালো বীজের কিছু বৈশিষ্ট্য দেখে নেওয়া যাক: 

  • অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা ৮০ভাগ এর উপরে হতে হবে, 
  • ভালো বীজ উজ্জ্বল রংয়ের হয়, 
  • বীজের আদ্রতা থাকতে হবে প্রায় ১২ শতাংশ এর কাছাকাছি,
  • সবগুলো বীজের আকার প্রায় সমান হবে, এক্ষেত্রে বীজের ওজনগুলো প্রায় একই রকমই হবে, 
  • ভালো বীজের তেজ দেখলেই বোঝা যায় এর অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা কতটুকু, 
  • বীজের সুপ্ততা থাকা জরুরী, 
  • বীজ ধুলাবালি মুক্ত এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হতে হবে, 
  • বীজ গজানোর ক্ষমতা থাকতে হবে ৭০ থেকে ৮০ভাগ, 
  • ভালো বীজ দ্রুততম সময়ের মধ্যেই গজাবে, 
  • ভালো বীজের সাথে অন্য কোন বীজের মিশ্রণ থাকবে না,
  • বীজ সম্পূর্ণভাবে আগাছা মুক্ত থাকবে।

ভালো বীজের আকৃতি 

ভালো নিজের আকৃতি নির্ধারণ করার জন্য বিভিন্ন সংখ্যক পদ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে: রিনিফর্ম আকৃতির বীজ, বর্গাকার বা আয়তাকার আকৃতির বীজ, ত্রিভুজ আকৃতির বীজ, ডিম্বাকার বা ওবোভেট আকৃতির বীজ, উপবৃত্তাকার আকৃতির বীজ, লেন্টিকুলার, আবলং আকৃতির বীজ ইত্যাদি। উদ্ভিদ ভেদে নিজের আকৃতি ও সাধারণত বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। তবে বেশিরভাগ বীজ ডিক্স বা প্লেট এর মত, গোলাকার বা ডিম্বাকৃতি ধরনের হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ভালো রং হয়ে থাকে বাদামী এবং কালো।

📌 আরো পড়ুন 👇

এছাড়া অন্যান্য রঙেরও বীজ থাকতে পারে, তবে সেগুলো আমাদের দেশের খুব বিরল।

বীজ সম্পর্কে আমাদের মতামত

যেকোনো জমি থেকে ভালো মানের ফসল পাওয়ার জন্য অবশ্যই বীজের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বীজ যাচাই-বাছাই করার আগে অবশ্যই জেনে নিন বীজ কাকে বলে, ভালো বীজের বৈশিষ্ট্য কি, ভালো বীজের আকৃতি সম্পর্কে। বীজ সম্পর্কে যদি আপনাদের আর কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে আমাদের অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানান এবং এরকম আরো শিক্ষামূলক এবং তথ্যবহুল আর্টিকেল পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন।

Sharing is Caring

Leave a Comment