বিয়োগ কাকে বলে? বিয়োগ করার নিয়ম

5/5 - (2 votes)

আমরা প্রতিনিয়তই বিয়োগ এর ব্যবহার করে থাকি। যেমন ধরুন আপনার কাছে ১৫ টাকা ছিলো, সেখান থেকে আপনি ৫ টাকা দিয়ে একটি কলম কিনলেন। তাহলে এখন আপনার কাছে অবশিষ্ট কত টাকা আছে? এই হিসাব করার জন্য আমরা বিয়োগের ব্যবহার করে থাকি।

আজকের এই আর্টিকেল আপনাদেরকে জানাবো বিয়োগ কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি এবং বিয়োগ করার নিয়ম।  বিয়োগ সম্পর্কে জানতে আজকের আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ুন।

বিয়োগ কাকে বলে

বিয়োগ কাকে বলে, বিয়োগ করার নিয়ম,

গাণিতিক প্রক্রিয়ার মূল চারটি বিষয়ের মধ্যে অন্যতম একটি হলো বিয়োগ। সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক জিনিস থেকে আরেকটি নির্দিষ্ট সংখ্যক জিনিস বাদ দেয়া বা পৃথক করার প্রক্রিয়াকে বিয়োগ বলে। 

কোনো জিনিসের হ্রাস করার জন্যই মূলত বিয়োগের প্রয়োগ করা হয়। আর এই হ্রাস বা পৃথক করার পর যে ফলাফল পাওয়া যায় তা হলো বিয়োগফল। যেমন ৫ টি আপেল থেকে ৩ টি বাদ দিলে ২ টি আপেল থাকে।

বিয়োগের কিছু সাধারণ ধর্ম 

বিয়োগ বলতে আসলে কী বোঝায় তা আমরা ইতিমধ্যে জেনে গেছি। তবে বিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয় আছে যেগুলো সব ধরণের বিয়োগ মেনে চলে। এ বিষয়গুলোকে সাধারণ ধর্ম হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। নিচে এগুলো উল্লেখ করা হল-

  • বিয়োগ সবসময় একইজাতীয় বস্তুর ক্ষেত্রে করতে হবে। অর্থাৎ দিন, সময়, ব্যক্তি বা বস্তু যাই-ই হোক না কেনো একই জাতীয় জিনিস না হলে বিয়োগ সম্ভব নয়। যেমন ২ দিন থেকে ২ টি ফল বাদ দেওয়া যাবে না। দিন থেকে দিন বা ফল থেকে ফলই বাদ দেওয়া সম্ভব।
  • বিয়োজন সর্বদাই বিয়োগফলের থেকে বড় হবে।
  • বিয়োগ সবসময় দুটি সংখ্যার মধ্যে হবে। আর এক্ষেত্রে বড় সংখ্যা থেকে ছোট সংখ্যাটি বাদ দিতে হবে।
  • বিয়োগ করার সময় ছোট সংখ্যাটির পূর্বে বিয়োগ চিহ্ন (-) দিতে হবে। বড় সংখ্যার আগে কোনো চিহ্নের প্রয়োজন নেই। তবে যদি বড় সংখ্যার আগে বিয়োগ চিহ্ন দেওয়া হয়, ফবে ফলাফল ঋণাত্মক আসবে।
  • বিয়োগের ক্ষেত্রে সংখ্যাগুলোর স্থান পরিবর্তন করলে ফলাফলও পরিবর্তন হয়ে যাবে। অর্থাৎ ক-খ এর মান কখনোই খ-ক এর মানের সমান হবে না।  
  • কোনো সংখ্যা থেকে শূণ্য বিয়োগ করা হলে উত্তর ঐ সংখ্যাটিই হবে এবং সংখ্যাটি ধনাত্মক হবে। আবার, শূণ্য থেকে কোনো সংখ্যা বাদ দিলে সেক্ষেত্রেও উত্তর ঐ সংখ্যাটিই হবে তবে তার চিহ্ন হবে ঋণাত্মক।
  • কোনো ধনাত্মক সংখ্যা থেকে ঋণাত্মক সংখ্যা বিয়োগ করতে চাইলে তা হিসাবের পর ফলাফল ধনাত্মক মান ধারণ করে। অর্থাৎ ১০-(-৫)= ১৫ হবে। তবে, ঋণাত্মক মান থেকে আবার ঋণাত্মক মান বিয়োগ করলে ফলাফল ধনাত্মক বা ঋণাত্মক উভয়ই হতে পারে। যেমন, -১৫-(-৫)= -১০ হবে, আবার, -৫-(-১০)= ৫ হবে।

বিয়োগের বড় সংখ্যাকে কি বলে

বিয়োগের ধর্মগুলো আরও পরিষ্কারভাবে বুঝতে হলে জানতে হবে বিয়োগের সংখ্যা দুটো সাধারণত কেমন হয়। বিয়োগের নিয়মে বড় সংখ্যা এবং ছোট সংখ্যা বলে দুটো বিষয় উল্লেখ থাকে। এখানে এই দুটো সংখ্যাই নির্দিষ্ট নাম দ্বারা উল্লেখ করা হয় বা আলাদাভাবে বোঝা যায়।

বিয়োগের এই নিয়মে বড় সংখ্যাটি বলা হয় বিয়োজন। অর্থাৎ যে সংখ্যাটি প্রথমে বসে এবং যার থেকে অপর সংখ্যাটি বাদ দেয়া হয় তাকে বিয়োজন বলা হয়।

যে সংখ্যাকে বিয়োগ করা হয় তাকে কি বলে

আবার আসা যাক, বিয়োগের ছোট সংখ্যাটিত বিষয়ে। এই সংখ্যাটিরও নির্দিষ্ট নাম রয়েছে এবং তা হলো বিয়োজ্য।

অর্থাৎ বিয়োজন বা বড় সংখ্যাটি থেকে যে সংখ্যাটি বাদ দেওয়া হয় তাকে বিয়োজ্য হিসেবে ধরা হয়।

বিয়োজ্য ঋণাত্মক কিংবা ধনাত্মক যাই হোক না কেনো এটি সাধারণত বিয়োজন অপেক্ষা ছোট হয়। তবে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম দেখা যেতে পারে।

বিয়োগ করার নিয়ম

বিয়োগ কাকে বলে, বিয়োগ করার নিয়ম,

ইতিমধ্যে, আমরা বিয়োগের কিছু সাধারণ ধর্ম সম্পর্কে জেনেছি। বিয়োগের ধর্ম সঠিকভাবে বুঝতে পারলে বিয়োগের নিয়ম বোঝাটাও সহজ হয়ে যায়। 

বিয়োগের সাধারণ নিয়ম হলো বড় সংখ্যাটি থেকে ছোট সংখ্যাটি বাদ দিতে হবে। বিয়োগের ধর্মের মাঝে বলা হয়েছে যে একই সাথে কেবল দুটো সংখ্যার মাঝেই বিয়োগ করা সম্ভব।

তাই, বিয়োগ করার জন্য বড় সংখ্যাটিকে আগে বসিয়ে তারপর বিয়োগ চিহ্ন (-) দিয়ে ছোট সংখ্যাটি বসাতে হবে। উপরে নিচে বসিয়ে বিয়োগ করতে হলেও উপরে বড় সংখ্যাটি বসাতে হবে এবং নিচে ছোট সংখ্যাটি। এরপর প্রথম থেকে দ্বিতীয় সংখ্যাটি বাদ দিয়ে হিসাব করে ফলাফল নির্ণয় করতে হবে।

হাতে রেখে বিয়োগ করার নিয়ম?

প্রাথমিক গণিতে যে স্বাভাবিক নিয়মে বিয়োগ করা হয় তা তুলনামূলক সহজ এবং জটিলতামুক্ত। তবে বিয়োগ করার স্বাভাবিক নিয়মের পাশাপাশি হাতে রেখে বিয়োগ করার একটি নিয়ম আছে যা তুলনামূলক জটিল। 

এই নিয়মের ক্ষেত্রে বড় সংখ্যাটি থেকে ছোট সংখ্যাটি বিয়োগ করা হয় তবে সংখ্যার অংকের বড় ছোট এর কারণে এই জটিলতা সৃষ্টি হয়। একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বোঝা যাবে।

ধরা যাক, ২৫ থেকে ১৭ বিয়োগ করতে হবে। এখন ১৭ অবশ্যই ২৫ সংখ্যাটি থেকে ছোট। কিন্তু বিয়োগের নিয়মে প্রথমে ৫ অংক থেকে ৭ অংকটি বিয়োগ করতে হবে। কিন্তু ৭ অংকটি তো ৫ থেকে বড়।  

তাই, ৫ এর স্থলে এখানে ৫ এর আগে ১ বসিয়ে ১৫ ধরা হয়। ১৫ থেকে ৭ বাদ দিলে হবে ৮, এই ৮ সংখ্যাটি প্রথম অংকের নিচে বসাতে হবে। কিন্তু এই যে ১ অতিরিক্ত যোগ করা হলো তা তো বাদ দেয়া প্রয়োজন। এই ১ তখন নিচের বা ছোট সংখ্যার দ্বিতীয় অংকটি সাথে যোগ করে বড় সংখ্যার দ্বিতীয় অংক থেকে বাদ দেয়া হয়। তাহলে ২ থেকে ২ বাদ দিলে ০ আসে। ফলাফল আসবে ৮।

     ২৫

 (-)১৭

–——– 

  ৮

এভাবে হাতে রেখে বিয়োগ করা হয়।

বিয়োগ কত প্রকার ও কি কি

বিয়োগের নিয়মে যেমন কিছু পার্থক্য আছে। ঠিক তেমনি, বিয়োগের কিছু প্রকারভেদও আছে। বিয়োগ সাধারণত দুই প্রকার। 

  • সাধারণ বিয়োগ
  • ণাত্মক বিয়োগ

নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :

১. সাধারণ বিয়োগ 

সাধারণ বিয়োগ পদ্ধতি বলতে বড় সংখ্যা বা বিয়োজন থেকে ছোট সংখ্যা বা বিযোজ্যকে স্বাভাবিকভাবে বিয়োগ করাকে বোঝায়। এর দ্বারা সাধারণত দুটো সংখ্যার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা হয়। দুটো সংখ্যা বিয়োগ করে যে ফলাফল পাওয়া যায় সেটিই প্রাপ্ত ফল।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ১৪ থেকে ৫ সংখ্যাটি বিয়োগ করলে দাঁড়ায়, ১৪-৬=৯। এখানে স্বাভাবিক নিয়মেই বিয়োগ করা হয়েছে যাতে অন্য কোনো জটিলতা নেই। তাই এই প্রক্রিয়াটিকে সাধারণ বিয়োগ বলা হয়।

২. ঋণাত্মক বিয়োগ 

দ্বিতীয় প্রকারটি হলো ঋণাত্মক বিয়োগ। এই বিয়োগে সাধারণত একটি ছোট সংখ্যার থেকে একটি বড় সংখ্যা বাদ দেয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, (১০-১৫)। এখানে ১০ অপেক্ষা ১৫ সংখ্যাটি বড়। 

📌 আরো পড়ুন 👇

এর ফলে ১০ থেকে যদি ১৫ বাদ দেওয়া হয়, তাহলে উত্তর আসবে -৫ যা একটি ঋণাত্মক মান। তাই এই বিয়োগকে ঋণাত্মক বিয়োগ বলা হয়। এরূপ বিয়োগের মান সর্বদাই ঋণাত্মক হবে।

বিয়োগ সম্পর্কে আমাদের মতামত

বিয়োগ হলো এমন একটি ধারণা যা গণিতের মূল আলোচনার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একারণেই বিয়োগের সকল খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন। এতে বিভিন্ন জটিল গাণিতিক সমস্যা খুব সহজেই সমাধান করা যায়।

বিয়োগ সম্পর্কে আপনাদের আর কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদেরকে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানান। এবং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এমন আরো শিক্ষামূলক আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।

বিয়োগ সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নউত্তর

বিয়োগের বিপরীত রূপ কী?

বিয়োগের বিপরীত রূপ ধরা হয় যোগকে। কারণ যোগের মাধ্যমে দুটো জিনিস একত্র করে বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু, বিয়োগের ক্ষেত্রে একত্রিত দুটো জিনিস থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ জিনিস বাদ দিয়ে বিভক্ত করা হয়।

বিয়োগের সংক্ষিপ্ত রূপ কী?

বিয়োগের সংক্ষিপ্ত রূপ হিসেবে ধরা হয় “ভাগ” কে। আমরা জানি, একসাথে কেবল দুটি সংখ্যার মধ্যেই বিয়োগ করা সম্ভব। কিন্তু অনেকগুলো সংখ্যা যদি বিয়োগ করার থাকে তাহলে তা সময়সাপেক্ষ। সেক্ষেত্রে ভাগের প্রয়োগ করা হয় এবং এক্ষেত্রে উত্তরও একই হবে।

বিয়োগের প্রাত্যহিক ব্যবহার কী?

দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন হিসাব নিকাশে যেমন অর্থ,সময়, কাজের পরিমাণ ইত্যাদি, ব্যবসার ক্ষেত্রে, প্রাত্যহিক বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক বিষয়ে যেমন দ্রুতি, সময়, ভর ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিয়োগ ব্যবহার করা হয়।

বিয়োগ সম্পর্কে আমাদের মতামত

বিয়োগ হলো এমন একটি ধারণা যা গণিতের মূল আলোচনার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একারণেই বিয়োগের সকল খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন। এতে বিভিন্ন জটিল গাণিতিক সমস্যা খুব সহজেই সমাধান করা যায়।

বিয়োগ সম্পর্কে আপনাদের আর কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদেরকে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানান। এবং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এমন আরো শিক্ষামূলক আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।

Sharing is Caring

Leave a Comment