বনভূমি কাকে বলে? বনভূমি কত প্রকার? বনভূমির গুরুত্ব

5/5 - (1 vote)

যখন একটি বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে গাছপালা দ্বারা আচ্ছাদিত থাকে এবং প্রাকৃতিকভাবে বন্য পশুপাখি এবং কীটপতঙ্গ একসাথে নির্বিঘ্নে বসবাস করতে পারে তখন তাকে বনভূমি বলে। বর্তমানে বাংলাদেশে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে প্রায় ২২ লক্ষ হেক্টর এর বেশি বনভূমি বিদ্যমান। 

বাংলাদেশের বনভূমির এই বিস্তীর্ণ এলাকা অধিকাংশ পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্ব এবং দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। বাংলাদেশের এই দক্ষিণ, দক্ষিণপূর্ব, দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে পাহাড়ি বন, ম্যানগ্রোভ বন, শালবন এবং কৃত্রিম বন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। 

আজকের এই সম্পূর্ণ আর্টিকেল জুড়ে আমরা বনভূমি কাকে বলে, বনভূমির সংজ্ঞা, বনভূমি কত প্রকার ও কি কি, বনের বৈশিষ্ট্য এবং বনভূমির গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

বনভূমি কাকে বলে

বনভূমি কাকে বলে, বনভূমি কত প্রকার, বনভূমির গুরুত্ব,

সাধারণত যখন লোকালয় থেকে দূরে যখন বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা একসাথে একই স্থানে প্রাকৃতিকভাবে জন্মায় এবং বন্য পশুপাখি ও কীটপতঙ্গ সে স্থানের নির্বিঘ্নে বসবাস করতে পারে তখন তাকে বনভূমি বলে। বনভূমিতে যখন একটি গাছের পাতার ছায়া অন্য গাছের পাতার ছায়ার সাথে মিলিত হয় তখন পুরো বনভূমি গাছের ছায়ায় ঢেকে যায়। বাংলাদেশের সুন্দরবন, শালবন এবং পাহাড়ি বনগুলো পুরোপুরি ভাবে গাছের ছায়ায় আবৃত হয়ে রয়েছে। 

বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলে বাসা বাড়ির আশেপাশে যেসব বন সৃষ্টি হয় তাকে গ্রামীণ বন বলা হয়, যেগুলো সাধারণত প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করা হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক বনগুলো সৃষ্টি হয় সাধারণত বিভিন্ন ধরনের গাছপালা, পশুপাখি এবং জানা-অজানা বৃক্ষরাজির সমন্বয়ে।

বনভূমি কত প্রকার ও কি কি

সৃষ্টির উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের বনভূমিকে সাধারণত দুইটি ভাগে ভাগ করা হয়। 

  • প্রাকৃতিক বন, 
  • কৃত্তিমবন। 

১. প্রাকৃতিক বন

বনভূমি কাকে বলে, বনভূমি কত প্রকার, বনভূমির গুরুত্ব্‌

কোন মানুষের হাতের স্পর্শ বা বুদ্ধিমত্তা ছাড়াই যে বন গড়ে ওঠে তাকে প্রাকৃতিক বন বলে। বাংলাদেশের সুন্দরবন, শালবন এবং গজারি বন প্রাকৃতিক বন এর উদাহরণ। বাংলাদেশের সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বোনগুলো ও প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে উঠেছে। পৃথিবীর বেশিরভাগ ঘন অরণ্যগুলো প্রাকৃতিক বনের ই উদাহরণ।

২. কৃত্রিম বন

বনভূমি কাকে বলে, বনভূমি কত প্রকার, বনভূমির গুরুত্্‌

মানুষ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহারের জন্য যে বন সৃষ্টি করে তাকে কৃত্রিম বনাঞ্চল বলে। বন বিভাগ কর্তৃক অনেক সময় কৃত্রিম বন তৈরি করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলে বাসা বাড়ির আশেপাশে যেসব বন তৈরি করা হয় সেগুলো কৃত্রিম বনের উদাহরণ।

তবে সামগ্রিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে বনভূমিকে ৪ টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সেগুলো হলো: 

  • গ্রীষ্মমন্ডলীয় বন, 
  • নাতিশীতোষ্ণ বন, 
  • বোরিয়াল বন,
  • বৃক্ষরোপন বন। 

গ্রীষ্মমন্ডলীয় বন

যে বন গুলো উষ্ণতম অঞ্চলে অবস্থিত হয় এবং এই বনাঞ্চলে সারা বছরই কম বেশি বৃষ্টিপাত হয় তাকে গিসমুণ্ডলীয় বনাঞ্চল বলা হয়। পৃথিবীর বেশিরভাগ উদ্ভিদ এবং প্রাণীকুল গ্রীষ্ম মন্ডলী ও বনাঞ্চলে অবস্থান করে।

নাতিশীতোষ্ণ বন

পৃথিবীর যে বনাঞ্চলগুলো মধ্যম তাপমাত্রায় গড়ে ওঠে এবং সময়ে সময়ে ঋতুর পরিবর্তন হয় তাকে নাতিশীতোষ্ণ বনাঞ্চল বলা হয়। নাতিশীতোষ্ণ বনাঞ্চলের গাছের পাতা ঋতু অনুযায়ী ঝরে পড়ে এবং অন্য ঋতুতে আবার নতুন করে গাছের সৃষ্টি হয় এবং গাছের পাতাও গজায়।

বোরিয়াল বন

শীতকালে যেসব অঞ্চলে তুষারপাত হয় সেসব অঞ্চলেই বোরিয়াল বন গড়ে ওঠে। এসব অঞ্চলের গাছপালার ঘনত্ব তুলনামূলক কম থাকে এবং কানাডা, আলাস্কা, রাশিয়া এবং এশিয়ার উত্তরাংশে বোরিয়াল বন এর দেখা পাওয়া যায়। অন্যান্য বনের তুলনায় বোরিয়াল বন এ গাছপালার ঘনত্ব তুলনামূলক কম। এবং এই বনে পাখি, বিভিন্ন ধরনের স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়।

বৃক্ষরোপন বন 

মানুষের নিজ চেষ্টায় যেসব বন তৈরি করা হয় তাকে বৃক্ষরোপণ বনাঞ্চল বলা হয়। সাধারণত পরিবেশ দূষণ কমানোর জন্য এবং জলবায়ুর পরিবর্তন রোধ করার জন্য বৃক্ষরোপণ বনাঞ্চল সৃষ্টি করা হয়ে থাকে। বৃক্ষরোপন বনাঞ্চল থেকে কাঠ, ফল এবং ঔষধ প্রতিনিয়ত আহরণ করা হয়ে থাকে। বৃক্ষরোপন বনাঞ্চলের মাধ্যমে একাধারে সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় এবং আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণের জন্যও জরুরী।

বনের বৈশিষ্ট্য কি কি

বন সাধারণত প্রাকৃতিকভাবে এবং কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট হয়ে থাকে। তবে যেভাবেই শ্রেষ্ঠ হোক না কেন বনের স্বাভাবিক কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বনের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য গুলো হল: 

  • বনে নির্বিঘ্নে বিভিন্ন ধরনের পশু পাখি এবং কীটপতঙ্গ তাদের অবশিষ্ট গড়ে তুলতে পারবে।
  • বনের ভূপ্রকৃতি বিচিত্র ধরনের হতে হবে, অর্থাৎ বনে কোথাও কোথাও জলবদ্ধতা থাকতে পারে, কোথাও ভূমি উঁচু হবে আবার কোথাও নিচু হবে, কোথাও বা সমতল হবে।
  • বনের বিভিন্ন সাইজের বৃক্ষ এবং বৃক্ষরাজী থাকবে, কিছু কিছু বৃক্ষ ছোট্ট হবে, কিছু বৃক্ষ মাঝারি আকৃতির হবে এবং কিছু বৃক্ষ বড় হবে।
  • বনে প্রাকৃতিকভাবে বা কৃত্রিমভাবে গড়ে ওঠা ঝোপ ঝাড় থাকতে হবে, যেখানে পশুপাখি নিরাপদে তাদের আবাসস্থল তৈরি করতে পারবে।
  • বনে প্রচুর পরিমাণে না হলেও কিছু পরিমাণে বড় সাইজের বৃক্ষ থাকবে।
  • বনে যেসব পশুপাখি বাস করবে তাদের মধ্যে খাদ্য শিকলের একটি আন্ত: ক্রিয়া  থাকবে।
  • যে ভূপৃষ্ঠের উপর বন অবস্থিত পঁচা পাতা বা আধা পঁচা পাতার একটি স্তর থাকবে, যা বৃক্ষরাজের খাদ্য সংস্থানের ব্যবস্থা করবে।

বনভূমির গুরুত্ব

বনভূমি কাকে বলে, বনভূমি কত প্রকার, বনভূমির গুরুত্ব,

বনে অগণিত পরিমাণে প্রচুর পরিমাণ জীবজন্তু, কীটপতঙ্গ এবং উদ্ভিদ রাজি থাকে। এবং বনে যেসব উদ্ভিদ ও প্রাণী বাস করে তাদের বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষার জন্য বন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বনের গুরুত্ব আমরা কোনোভাবেই অস্বীকার করতে পারি না। 

এছাড়াও বন ওতপ্রোতভাবে মানুষের জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে। নিচে বনভূমির গুরুত্ব তুলে ধরা হলো: 

বনভূমির অর্থনৈতিক গুরুত্ব সমূহ: 

  • সভ্যতার বাহনে হিসেবে কাজ করে, 
  • জ্বালানির যোগান দেয়,
  • শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে বনের গুরুত্ব রয়েছে,
  • বনোজ উদ্ভিদের বিশেষ ভেষজ গুনাগুন রয়েছে, 
  • প্রসাধনের মধ্যে বিশেষ করে আতর এবং সুগন্ধি তৈরিতে বনের অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। 

বনভূমির পরিবেশগত গুরুত্ব সমূহ: 

  • একটি দেশের আবহাওয়া সে দেশের বনাঞ্চলের উপর নির্ভর করে, 
  • প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধে বনের পরিবেশগত গুরুত্ব রয়েছে,
  • সুস্বাস্থ্য এবং চিত্ত বিনোদনের জন্য প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট হওয়া বনগুলোর পরিবেশগত গুরুত্ব রয়েছে। 

বাংলাদেশী প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট হওয়া কিছু বন যেমন: সুন্দরবন, সিলেটের বিভিন্ন পাহাড়ি বন, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ির প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট হওয়া পাহাড়ি বন, ভাওয়াল, মধুপুর বন মানুষের চিত্ত বিনোদনের জন্য বিশেষভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

📌 আরো পড়ুন 👇

 

বনভূমি সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নউত্তর

বন থেকে আমরা কি কি পাই?

বন আমাদের জীবনধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপাদান যেমন জ্বালানী কাঠ, কাঠ, কাঠের সজ্জা, মধু, লাখ, ঔষধির যোগান দিয়ে থাকে।

বন ধ্বংসের কারণ কি?

আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, বন্যা, মানুষের হস্তক্ষেপ বন ধ্বংসের জন্য দায়ী। এছাড়া নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলা, ভূমিকম্প এবং মাঝে মাঝে ঘটতে থাকা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেও বনভূমি ক্রমান্বয়ে ধ্বংস হচ্ছে।

বনভূমি সংরক্ষণের প্রধান উপায় কি কি?

বনভূমি সংরক্ষণের প্রধান উপায় গুলো হলো: নতুন চারাগাছ লাগানো, গাছ কাটা কমানো, বনাঞ্চলে আগুন লাগা থেকে বনাঞ্চলকে রক্ষা করা, দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পায় এমন কিছু গাছ রোপন করা ইত্যাদি।

বনভূমি নিয়ে আমাদের মতামত

বনভূমি যেহেতু আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে তাই বনভূমি কি, বনভূমি কাকে বলে, বনভূমির সংজ্ঞা, বনভূমির প্রকারভেদ, বনভূমির গুরুত্ব জেনে রাখা খুবই প্রয়োজন। আশা করি আমাদের এই শিক্ষামূলক আর্টিকেলটি পড়ে আপনার উপকৃত হয়েছেন এবং এরকম আরো শিক্ষামূলক আর্টিকেল পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে অবশ্যই আপনাদের মতামত কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে জানান। এবং সম্পূর্ণ আর্টিকেল আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Sharing is Caring

Leave a Comment