গ্যালাক্সি কি? সবচেয়ে বড় গ্যালাক্সির নাম কি

5/5 - (1 vote)

কখনো কি ভেবে দেখেছেন, এই মহাবিশ্বে আমরা একা নই। সূর্য যেমন মিল্কিও গ্যালাক্সির একটি অংশ। তেমনি আমরা রাতের আকাশে যে অসংখ্য তাঁরা দেখা যায়। এগুলো কোন না কোন গ্যালাক্সির একটি অংশ। 

আজকের আর্টিকেল আমরা জানবো  গ্যালাক্সি কি, গ্যালাক্সি ধরন ও গ্যালাক্সি কয়টি। এছাড়াও জানবো সবচেয়ে বড় গ্যালাক্সির নাম কি। গ্যালাক্সি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আজকের আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ুন।

গ্যালাক্সি কি

গ্যালাক্সি কি ও কয়টি, সবচেয়ে বড় গ্যালাক্সির নাম কি

মহাবিশ্ব এতটাই রহস্যময় যে প্রাচীনকাল থেকেই এর বিষয়বস্তু মানুষকে আকৃষ্ট করেছে। আর তার মধ্যে গ্যালাক্সির ধারণা অন্যতম। 

সংক্ষেপে বলতে চাইলে, গ্যালাক্সি হলো নক্ষত্র, ধূলিকণা, গ্যাস এবং অন্যান্য বিভিন্ন অন্তরীক্ষ পদার্থের সমষ্টি যা মাধ্যাকর্ষণ শক্তির মাধ্যমে একে অন্যের সাথে সংযুক্ত থাকে। গ্যালাক্সিতে এই সকল বস্ত একটি নির্দিষ্ট ছায়াপথ অনুযায়ী সজ্জিত থাকে যেনো একে অপরের সাথে সংঘর্ষ না হয়।

এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীগণ প্রায় ২ ট্রিলিয়ন গ্যালাক্সির সন্ধান পেয়েছেন। এগুলো আকার, আকৃতি এবং উপাদানগত দিক থেকে একে অপরের থেকে অনেকটাই আলাদা। তবুও গঠনের প্রকৃতি অনুযায়ী এদের মধ্যে সামঞ্জস্য বিদ্যমান।

গ্যালাক্সির গঠন

গ্যালাক্সি কী তা তো আমরা জানলাম। কিন্তু এই ১২০০ কোটি বছর বয়সী গ্যালাক্সি কীভাবে তৈরি হলো সেটি নিয়ে অবশ্যই মনে প্রশ্ন জাগছে? তাহলে এখন এই উত্তরে আসা যাক।

আমরা আগেই জেনেছি, গ্যালাক্সির অভ্যন্তরীণ অংশগুলো মাধ্যাকর্ষণ শক্তির মাধ্যমে একে অন্যের সাথে যুক্ত থাকে। গ্যালাক্সির মূলত ৩ টি অংশ রয়েছে। 

  • কেন্দ্র (৩০ হাজার আলোকবর্ষ ব্যাস সম্বলিত স্ফীত অংশ).
  • চাকতি ( চাকতি বা ডিস্ক এর মত অংশ যাতে সৌরজগত থাকে, লম্বা-১ লাখ আলোকবর্ষ এবং পুরু- ১০০০ আলোকবর্ষ)। 
  • বলয় বা হ্যালো (৩ লাখ আলোকবর্ষ ব্যাস সম্বলিত স্থান যাতে নক্ষত্রসমূহ থাকে)।

গ্যালাক্সির কেন্দ্রকে ঘিরে মূলত সৌরজগতসমূহ একটি সর্পিল বা পেঁচানো বাহুতে সাজানো থাকে। এই পেঁচানো বাহুতে সৌরজগত এবং নক্ষত্রসমূহ প্রতি ২০ কোটি বছরে গ্যালাক্সিকে একবার প্রদক্ষিণ করে যার দূরত্ব ২৮ হাজার আলোকবর্ষ।

গ্যালাক্সি কত প্রকার

গ্যালাক্সির গঠন অনুযায়ী গ্যালাক্সিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। সেগুলো হলো-

  • উপবৃত্তাকার গ্যালাক্সি
  • সর্পিল গ্যালাক্সি
  • অনিয়তাকার গ্যালাক্সি
  • বামন গ্যালাক্সি

নিম্নে এই সকল গ্যালাক্সি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

১. উপবৃত্তাকার গ্যালাক্সি 

উপবৃত্তাকার গ্যালাক্সি হলো যেগুলো বৃত্তাকার বা গোলকের মত দেখতে। অর্থাৎ এর উপাদানগুলো একটি গোলকীয় ছায়াপথে সজ্জিত থাকে। তবে এতে নতুন নতুন তারা তৈরি হচ্ছে। এর কিছু স্থানে সামান্য ধূলিকণা বা গ্যাসীয় উপাদান ছাড়া অন্য কিছু পাওয়া যায় না।

২. সর্পিল গ্যালাক্সি

সর্পিল বা স্পাইরাল গ্যালাক্সি হলো আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির মত যাতে নক্ষত্রসমূহ একটি সর্পিলাকার ছায়াপথে কেন্দ্রের চারপাশে সজ্জিত থাকে। এতে প্রচুর পরিমাণ নক্ষত্র এবং অন্যান্য উপাদানের উপস্থিতি পাওয়া যায়। 

৩. অনিয়তাকার গ্যালাক্সি

অনিয়তাকার গ্যালাক্সির কোনো নির্দিষ্ট গঠন আকৃতি নেই। এটি যেকোনো সময়ই উপবৃত্তাকার বা সর্পিলাকার গ্যালাক্সির আকৃতি ধারণ করতে পারে। তাই এর গঠন বিকৃতি ঘটে।

৪. বামন গ্যালাক্সি

এই গ্যালাক্সিগুলোকে বৃহৎ গ্যালাক্সিগুলোর চারপাশে আবর্তন করতে দেখা যায়। ধারণা করা হয় বৃহৎ গ্যালাক্সিগুলোর তৈরির মূল কারিগর বা “বিল্ডিং ব্লক” হলো এই বামন গ্যালাক্সিগুলো যাতে কয়েক বিলিয়ন নক্ষত্র থাকে।

গ্যালাক্সি গ্রুপ কি

গ্যালাক্সি সম্পর্কিত আরেকটি খুব পরিচিত ধারণা হলো গ্যালাক্সি গ্রুপ। এই গ্রুপ দ্বারা আসলে কিছু গ্যালাক্সির সমষ্টি বোঝায় যারা মূলত মাধ্যাকর্ষণ শক্তি দ্বারা একে অন্যের সাথে সংযুক্ত থাকে। এই গ্যালাক্সি গ্রুপেরও কিছু প্রকারভেদ রয়েছে। সংক্ষেপে সেগুলো সম্পর্কে কিছু জানা যাক-

  • কম্প্যাক্ট গ্রুপ– গ্যালাক্সি গ্রুপের এই প্রকারটিতে সবচেয়ে কম সংখ্যক গ্যালাক্সির সংমিশ্রণ থাকে যা প্রায় ৫ টির কাছাকাছি। সর্বপ্রথম আবিষ্কৃত কম্প্যাক্ট গ্যালাক্সি গ্রুপ হলো স্টেফানস কুইটেন্ট, যা সবচেয়ে ফটোজেনিক গ্যালাক্সি গ্রুপ। এতে অন্ধকার পদার্থের ভূমিকাই বেশি।
  • জীবাশ্ম গ্যালাক্সি গ্রুপ– এটি মূলত গ্যালাক্সিগুলোর মধ্যে গতিশীল ঘর্ষণের কারণে সৃষ্টি হয়। একই গোষ্ঠীর গ্যালাক্সিগুলো পরস্পরের সাথে মিলিত হওয়ার ফলে বা মিথস্ক্রিয়ার কারণে এই ফসিল গ্রুপের উৎপত্তি। এদের পূর্বপুরুষ গোষ্ঠীর এক্স-রে হ্যালোর কথাও এক্ষেত্রে উল্লেখ্য।
  • প্রোটো গ্রুপ– প্রোটো গ্রুপ বলতে বোঝায় যে গ্যালাক্সি গ্রুপ তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়ার মাঝে রয়েছে। অর্থাৎ গ্যালাক্সি এবং প্রোটোগ্যালাক্সি ডার্ক হ্যালোতে সংযুক্ত হওয়ার সময়কালীন গ্রুপটিকেই প্রোটো গ্রুপ বলা হয়।
  • বুলেট গ্রুপ– এই গ্রুপটি গ্যালাক্সির স্বাভাবিক পদার্থ এবং অন্ধকার পদার্থের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে সেটি প্রদর্শন করে। অর্থাৎ উজ্জ্বল গ্রুপ এবং অন্ধকার মাঝে যে দলটি একত্রিত হয় তাকেই বুলেট গ্রুপ বলে।

এছাড়াও লোকাল বা স্থানীয় কিছু গ্রুপ আছে যা বিশেষভাবে কোনো গ্রুপের সাথে উল্লেখ্য নয়। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিও এই স্থানীয় গ্রুপেরই সদস্য।

সবচেয়ে বড় গ্যালাক্সির নাম কি

গ্যালাক্সি কি ও কয়টি, সবচেয়ে বড় গ্যালাক্সির নাম কি

গ্যালাক্সি গ্রুপগুলোর পাশাপাশি অন্তরীক্ষের সবচেয়ে বড় গ্যালাক্সির নামটা জানাও জরুরী আর তা হলো “আলসিওনিয়াস”(Alcyoneus)। পৃথিবী থেকে প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এই গ্যালাক্সি আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির থেকে প্রায় ১০০ গুণ বড়।

সবচেয়ে বড় এই রেডিও গ্যালাক্সি কীভাবে এতটা বিস্তৃত হলো তা এখনো সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করা যায় নি। তবে অনুমান করা হয় এর আশপাশের কসমিক পরিবেশ অন্য গ্যালাক্সিগুলোর তুলনায় কম ঘনত্বসম্পন্ন। একারণেই এরা দ্রুত এবং সহজে বিস্তৃত হতে পারে। এখনো খুবই ধীর গতিতে সামান্য পরিমাণ বিস্তৃতি চলছে এর। আর এই রেডিও গ্যালাক্সিগুলো সাধারণ গ্যালাক্সির থেকে আলাদা।

সূর্য এবং পৃথিবী কোন গ্যালাক্সির অংশ

সূর্য এবং পৃথিবী যে গ্যালাক্সির অংশ অর্থাৎ সৌরজগত ধারণকারী আমাদের গ্যালাক্সির নাম হলো মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি। এটি একটি স্পাইরাল বা সর্পিলাকার গ্যালাক্সি যা সূর্যসহ আরও ১০০-৪০০ বিলিয়ন নক্ষত্র এবং বহু গ্রহ-উপগ্রহ, ধূলিকণা এবং গ্যাসীয় বস্তুসমূহ ধারণ করে।

📌 আরো পড়ুন 👇

মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে কৃষ্ণ গহ্বর বা ব্ল্যাক হোল নামে একটি অংশ আছে যাতে ধারণা করা হয় যেকোনো পদার্থই বিলীন হয়ে যেতে পারে। এখন পর্যন্ত ব্ল্যাক হোলের ভেতরের কোনো তথ্য একারণে সংগ্রহ করা যায়নি।

গ্যালাক্সি সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নউত্তর

সবচেয়ে ছোট গ্যালাক্সির নাম কি?

সবচেয়ে ছোট গ্যালাক্সি হলো ক্যানিস মেয়ার ০২। এটি শুধু ছোটই নয়, বরং মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির সবচেয়ে কাছের গ্যালাক্সি যা মিল্কিওয়ে থেকে মাত্র ১.২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আকারে এটি মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির ১/৪০ থেকে ১/৭০ অংশের সমান।

গ্যালাক্সি ক্লাস্টার কি?

গ্যালাক্সি ক্লাস্টার হলো এমন একটি গ্যালাক্সি দল যাতে শত শত বা হাজার হাজার ছায়াপথ মাধ্যাকর্ষণ শক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে। মূলত কয়েকটি বা অনেকগুলো গ্যালাক্সি গ্রুপ নিয়ে যে সমষ্টি গঠিত হয়, সেটিই গ্যালাক্সি ক্লাস্টার।

গ্যালাক্সির গুরুত্ব কি?

গ্যালাক্সি মূলত প্রয়োজন মহাবিশ্বের বিভিন্ন উপাদানকে একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে সজ্জিত করার জন্য। মহাবিশ্বের এত এত নক্ষত্র, গ্রহ, উপগ্রহ এবং বিভিন্ন পদার্থ- এত কিছু যদি একটি নির্দিষ্ট নিয়মে ধারণ না করা হয় তবে এগুলো পরস্পরের সাথে সংঘর্ষ করে ধ্বংস হয়ে যাবে। আর এমনটা যেনো না হয় তা নিশ্চিত করে গ্যালাক্সি।

গ্যালাক্সি সম্পর্কে আমাদের মতামত

এতক্ষণ আমরা যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করলাম তাতে গ্যালাক্সির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। গ্যালাক্সি সম্পর্কে জানতে হলে যে বিষয়টি সবার প্রথমে আসে তা হলো এর গঠন, প্রকার এবং বিভিন্ন উপাদান। 

মহাবিশ্বের এই কোটি কোটি গ্যালাক্সিতেই রয়েছে প্রাণের স্পন্দন। অদূর ভবিষ্যতে আমাদের বিজ্ঞানীগণ হয়ত গবেষণার মাধ্যমে আরও চমকপ্রদ তথ্য উপস্থাপন করবেন গ্যালাক্সি সম্পর্কে।

গ্যালাক্সি সম্পর্কে আপনাদের আর কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদেরকে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানান। এবং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এমন আরো শিক্ষামূলক আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।

Sharing is Caring

Leave a Comment