হিসাবের ক্ষেত্রে আমরা অনেক সময় গুণ অংকের ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু আমরা আসলে জানি না গুণ কাকে বলে, ও গুণের সূত্র কি?
আজকের আর্টিকেলে আমরা গুণ কাকে বলে, গুণের সূত্র কি, গুণের কয়টি অংশ কি কি ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করবো। গুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
গুণ কাকে বলে
গাণিতিক সমাধান করতে যে চারটি প্রক্রিয়া অথবা প্রাথমিক হিসাব-নিকাশের অবশ্য প্রয়োজন তার মধ্যে একটি হলো গুণ। গণিতের মৌলিক এই প্রক্রিয়াটি দ্বারা মূলত যোগের সংক্ষিপ্ত নিয়মকে বোঝায়।
বিষদভাবে বলতে গেলে, দুই বা ততোধিক সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে যোগ করলে যে ফল পাওয়া যেত সেই সংখ্যাগুলোকেই গুণ চিহ্ন (✖) দ্বারা পাশাপাশি বসিয়ে ঐ একই ফল সংক্ষেপে নির্ণয় করার পদ্ধতিকেই গুণ বলা হয়।
গুণ করার মাধ্যমে সাধারণত কোনো জিনিসের বৃদ্ধি বোঝায়। কেননা গুণের কারণে ঐ জিনিসটির পূর্বে যে পরিমাণ ছিল সেই পরিমাণের সাথে আরও অতিরিক্ত অংশ সংযুক্ত হয় এবং এভাবে বৃদ্ধি ঘটে।
গুণের কিছু প্রাথমিক বিষয়
গণিতে গুণ প্রক্রিয়াটি বলতে কী বোঝায় তা আমরা ইতিমধ্যে জেনে গেছি। তবে এর পরবর্তী বিষয়গুলো যেমন গুণ কীভাবে করতে হয় বা গুণের অংশ- এগুলো বুঝতে হলে গুণ সম্পর্কিত কিছু প্রাথমিক বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক। সেগুলো হলো-
- গুণ দুই বা তার থেকে বেশি পূর্ণসংখ্যার মধ্যে হতে পারে।
- গুণ প্রকাশ করার জন্য (✖) চিহ্নটি ব্যবহার করা হয়।
- কোনো সংখ্যাকে “০” দ্বারা গুণ করলে তার গুণফল হবে শূণ্য।
- কোনো সংখ্যাকে “১” দ্বারা গুণ করলে গুণফল ঐ সংখ্যাটিই হবে।
গুণ যত বড় বা ছোট যেমনই হোক না কেনো এই নিয়মগুলো সকল প্রকার গুণের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে।
গুণের কয়টি অংশ
গুণের সাধারণ নিয়ম তো আমরা জেনে নিলাম। এবার তাহলে জানা যাক গুণের অংশ কয়টি। গুণ তিনটি অংশের সমন্বয়ে গঠিত যার প্রত্যেকটি অপরিহার্য। সেগুলো হলো-
- গুণ্য
- গুণক
- গুণফল
নিম্নে গুণের অংশগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
১. গুণ্য
গুণ্য বলতে বোঝায় যে সংখ্যাটিকে অপর সংখ্যা দ্বারা গুণ করা হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ,
৩✖৫= ১৫ ; এখানে ৩ সংখ্যাটিকে গুণ করা হয়েছে, তাই এটি গুণ্য।
২. গুণক
যে সংখ্যাটি দ্বারা গুণ্যকে গুণ করা হয় তাকে গুণক বলে।
আবারও আগের উদাহরণে ফিরে যাই,
৩✖৫= ১৫; এখানে ৫ সংখ্যাটি দ্বারা গুণ করা হয়েছে, তাই ৫ হলো গুণক।
৩. গুণফল
সর্বশেষ, গুণ্য এবং গুণকের গুণের ফলে যে সংখ্যা বা ফলাফল পাওয়া যায় তাকে গুণফল বলে।
পূর্বের উদাহরণটি যদি আমার দেখি তাহলে,
৩✖৫= ১৫ ; এখানে ৩ এবং ৫ এর গুণের মাধ্যমে ফলাফল পাওয়া গেছে ১৫। অর্থাৎ এখানে গুণফল ১৫।
গুণের সূত্র
গুণ করার সূত্র বা নিয়ম যাই-ই বলা হোক না কেনো তা নির্দেশ করে গুণ্য এবং গুণকের পারস্পরিক ক্রিয়া। অর্থাৎ গুণ্য এবং গুণকে গুণ করার মাধ্যমে ফলাফল নির্ণয়ের প্রক্রিয়াই হলো গুণের নিয়ম। এখন, সূত্র পর্যালোচনা করলে দাঁড়ায়,
গুন্য×গুণক = গুণফল।
গুণফল নির্ণয়ের পাশাপাশি গুণ্য এবং গুণকও নির্ণয় করা যাবে এই একই সূত্র থেকে।
গুণ্য নির্ণয়ের সূত্র
গুণ্য= গুণফল÷ গুণক
আবার বিপরীত দিকে, গুণক নির্ণয়ের সূত্র
গুণক= গুণফল ÷ গুণ্য
এভাবে এই তিনটি সূত্রের মাধ্যমে গুন্য, গুণক এবং গুণফল অতি সহজেই নির্ণয় করা সম্ভব।
গুণের সহজ নিয়ম
গুণের সূত্রের পাশাপাশি গুণের সহজ একটি নিয়ম তুলে ধরা যাক-
গুণ করার সময় ছোট সংখ্যাটিকে গুণক হিসেবে ধরা উচিৎ। তাহলে গুণের প্রক্রিয়া সহজ হয়। যেমন ৩৫✖৩ এই দুটো সংখ্যার মধ্যে ৩৫ কে গুণক ধরলে প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল হবে, কারণ সেক্ষেত্রে ৩৫ এর ৫ দিয়ে একবার ৩ কে গুণ করতে হবে, আবার ৩৫ এর ৩ দিয়ে একবার গুণ্য ৩ কে গুণ করতে হবে যা হিসাব করা কঠিন হয়ে যাবে।
কিন্তু, যদি ৩ কে গুণক ধরা হয় তবে ৩৫ কে ৩ দ্বারা গুণ করলেই উত্তর পাওয়া যাবে। একারণেই ছোট সংখ্যাটিকে গুণক ধরা সবচেয়ে সহজ উপায়।
গুণকে কেনো পর্যায়ক্রমিক যোগ প্রক্রিয়া বলা হয়
গুণকে পর্যায়ক্রমিক যোগ বলা হয় কারণ গুণ মূলত ধারাবাহিক যোগের সংক্ষিপ্ত রূপের প্রতিনিধিত্ব করে। অর্থাৎ দুই না ততোধিক ধারাবাহিক সংখ্যার যোগ বারবার করা হলে যে ফলাফল হবে তাকেই সংক্ষেপে প্রকাশ করতে হলে গুণ করতে হয়।
একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি বিস্তারিত আলোচনা করা যাক-
৫+৫+৫+৫+৫+৫+৫+৫=৪০ ; এখানে ৫ সংখ্যাটিকে ৮ বার পরপর যোগ করা হয়েছে।
এখন, একই সংখ্যা ৮ বার যোগ চিহ্ন দিয়ে পরপর সাজানো অবশ্যই কষ্টসাধ্য এবং সময়সাপেক্ষ। যদিও এক্ষেত্রে কষ্টকর হলেও সম্ভব। কিন্তু আরও বড় কোনো সংখ্যা যদি আরও বেশি সংখ্যক বার এভাবে যোগ করতে হয় তবে তা কষ্টকর তো বটেই, এমনকি ভুল হওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল।
এখন, এই ৫ সংখ্যাটি বারবার না লিখে যদি ৫ কে ৮ দ্বারা গুণ করা হয়, তবে সেক্ষেত্রেও উত্তর আসবে ৫×৮=৪০। অর্থাৎ ৫ সংখ্যাটিকে ৮ বার যোগ করা হয়েছে বলেই ৮ দ্বারা গুণ করা হয়েছে।
📌 আরো পড়ুন 👇
লক্ষণীয় যে, দুই ক্ষেত্রেই উত্তর কিন্তু একই। তাই এই উদাহরণের প্রেক্ষিতে আমরা সহজেই বলতে পারি যে গুণ হলো পর্যায়ক্রমিক যোগেরই সংক্ষিপ্ত প্রক্রিয়া।
গুণ সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নউত্তর
গুণের বিপরীত রাশি কোনটি?
গুণের বিপরীত রাশি হলো ভাগ। গুণ করার মাধ্যমে যেমন কোনো জিনিসের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়, তেমনি ভাগের প্রক্রিয়ায় সমষ্টিগত বা অনেক জিনিস থেকে ছোট অংশ আলাদা করা হয়, যার ফলে সংখ্যায় জিনিসটি হ্রাস পায়। একারণেঈ ভাগকে গুণের বিপরীত রাশি ধরা হয়।
ঋণাত্মক সংখ্যার গুণ কি সম্ভব?
অবশ্যই সম্ভব। যেকোনো ঋণাত্মক+ঋণাত্মক অথবা ধনাত্নক+ঋণাত্মক সংখ্যার গুণ নির্ণয় করা সম্ভব। তবে ঋণাত্মক মান দ্বারা ধনাত্মক সংখ্যাকে গুণ করলে গুণফল ঋণাত্মক আসবে। কিন্তু ঋণাত্মক দুটি সংখ্যার উত্তরে গুণফল আসবে ধনাত্মক।
গুণের প্রাত্যহিক ব্যবহার কী?
গুণের মাধ্যমে যেকোনো জিনিসের পরিমাণ বৃদ্ধি করা যায়। অনেকগুলো জিনিস একত্রিত করলে তার ফলাফল সহজে নির্ণয়ের জন্য গুণের প্রক্রিয়া অত্যন্ত কার্যকরী। শুধু তাই নয়, দৈনন্দিন সকল হিসাবে রয়েছে গুণের ব্যবহার।
গুণ সম্পর্কে আমাদের মতামত
গণিতের সমস্যা সমাধানে শুদ্ধ গুণের প্রক্রিয়ার ব্যবহার অপরিহার্য। কেননা গুণের মাধ্যমে অনেক বড় বড় সমাধানও সহজে করা যায়। আর গুণের মূল বিষয়গুলো সঠিকভাবে অনুধাবন করলে যেকোনো গুণফলই ভুল ছাড়া নির্ণয় করা সম্ভব।
গুণ সম্পর্কে আপনাদের আর কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদেরকে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানান। এবং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এমন আরো শিক্ষামূলক আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।