যোগ কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি

5/5 - (1 vote)

পাটিগণিতের গাণিতিক যে চারটি মৌলিক বিষয় রয়েছে তার মধ্যে প্রথমটি হলো যোগ। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের বিভিন্ন কার্যক্রমে যোগের হিসাবটি জড়িত থাকে।

একারণেই প্রাথমিক গণিতে এই অংশটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যার মধ্যে রয়েছে, যোগ কাকে বলে, যোগ কত প্রকার ও কি কি, যোগের কয়টি অংশ ও কি কি, যোগের অর্থ এবং যোগের বিভিন্ন রূপ।

এসকল বিষয় সম্পর্কে জানতে আজকের এই  আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ুন। কেননা আজকের আর্টিকেলে যোগের খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করবো। চলুন শুরু করা যাক –

যোগ কাকে বলে

যোগ কাকে বলে, যোগ কত প্রকার ও কি কি, যোগের কয়টি অংশ ও কি কি, যোগের সংক্ষিপ্ত রূপ,

যোগ সম্পর্কিত ধারণার ক্ষেত্রে প্রথমেই আলোচনার বিষয় হলো যোগ আসলে কী। যোগ বলতে মূলত দুটো সমজাতীয় জিনিসটি একসাথে যুক্ত করার প্রক্রিয়াকে বোঝায় যার মাধ্যমে তারা দুটো স্বাধীন অস্তিত্ব থেকে একটি নতুন অস্তিত্বে রূপান্তরিত হয়।

ধরা যাক, দুটো ব্যাগে ২ কেজি করে চাল আছে। এখন আলাদা দুটো ব্যাগ থেকে এই ২ কেজি করে চালকে যদি একটি ব্যাগে ঢালা হয় তবে নতুন ব্যাগটিতে এর পরিমাণ দাঁড়াবে ২ কেজি+২ কেজি =৪ কেজি। এই পুরো প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় যোগ। এবার তবে এর বিভিন্ন দিক সম্পর্কে বিষদ বিশ্লেষণ করা যাক।

যোগের কিছু সাধারণ ধর্ম

যোগ বিষয়টি সম্পর্কে মূল ধারণা ইতিমধ্যে আমরা পেয়ে গেছি। এবার তবে যোগের কিছু সাধারণ ধর্ম সম্পর্কে জানা যাক-

  • যোগ সর্বদাই সমজাতীয় জিনিস বা সংখ্যার মধ্যে হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২ টি ফলের সাথে আরও ২ টি ফল যোগ করা সম্ভব। তবে ২ টি ফলের সাথে ২ জন মানুষ যোগ করা সম্ভব নয়। কিংবা বাংলা “২” অংকের সাথে ইংরেজি “2” যোগ করা সম্ভব নয়। একই জাতীয় বস্তু দ্বারাই যোগ করতে হবে।
  • যোগের ক্ষেত্রে সংখ্যার পরিবর্তন হলে যোগফলে কোনো সমস্যা হবে না। অর্থাৎ আগের সংখ্যাটি পরে এবং পরেরটি আগে হলে তাতে কোনো সমস্যা নেই। যেমন, ক+খ=খ+ক।
  • কোনো সংখ্যার সাথে শুণ্য যোগ করা হলে এর মানের কোনো পরিবর্তন হয় না। যেমন, ক+০=ক।
  • কোনো সংখ্যাকে আলাদা আলাদা অংশে ভাগ করে যোগ করলেও উত্তর একই থাকবে। যেমন, ক+(খ+গ)=(ক+খ)+গ।
  • যোগফল কখনোই যে সংখ্যাগুলো যোগ করা হয়েছে তার থেকে ছোট হবে না। যেমন, ৭+১<৮। তবে যদি ০ যোগ করা হয় তবে সমান হতে পারে। অন্যথায়, সর্বদাই বড় হবে।
  • যোগ করার সময় সংখ্যাগুলোর মাঝখানে (+) চিহ্ন দিতে হবে। তবে উপরে নিচে বসিয়ে যোগ করলে নিচের সংখ্যাটির বামে দিকে এই চিহ্ন দিতে হবে। প্রথম সংখ্যার আগে (+) চিহ্ন দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।

যোগের কয়টি অংশ ও কি কি

যোগ কাকে বলে, যোগ কত প্রকার ও কি কি, যোগের কয়টি অংশ ও কি কি, যোগের সংক্ষিপ্ত রূপ,

প্রত্যেকটি যোগের প্রক্রিয়ার সাধারণত ৩ টি অংশ থাকে। সেগুলো হলো-

  • যোজ্য
  • যোজক
  • এবং যোগফল।

এখানে যোজ্য এবং যোজক হলো সেই দুটি সংখ্যা যা একত্রিত করা হয় বা যোগ করা হয় এবং যোগফল হলো যোগের ফলে প্রাপ্ত ফলাফল বা সমাধান। যোগের এই তিনটি অংশ দ্বারাই পৃথিবীর সকল যোগ করা হয়।

যোগের এই তিনটি অংশের জন্য আলাদা আলাদা সূত্র প্রযোজ্য। সেগুলো হলো-

  • যোজ্য+ যোজক = যোগফল
  • যোজ্য= যোগফল – যোজক
  • যোজক= যোগফল – যোজ্য

যোগ কত প্রকার ও কি কি

এখন আমরা জানি যে, যোগের অংশ কয়টি এবং সেগুলো কী। তবে যোগের কৌশলের মাঝেও কিছু প্রকারভেদ আছে। যোগ বিভিন্ন ভাবে করা যায় এবং তার ভিত্তিতেই যোগের প্রকারভেদ করা হয়ে থাকে। তাহলে এবার সেগুলো জেনে নেয়া যাক-

১. সাধারণ যোগ

সাধারণ যোগ বলতে যোগের যে মূল সূত্র সেটাকেই বোঝায়। অর্থাৎ যোজ্য এবং যোজককে পাশাপাশি যোগ চিহ্ন দ্বারা বসিয়ে তাদের অংকের হিসাব করার মাধ্যমে যে ফলাফল পাওয়া যায় তাকে সাধারণ যোগ বলে।

উদাহরণস্বরূপ,

২৯৯+৩৫৬=৬৫৫

এভাবে সাধারণ নিয়মে যোগ করা যায়।

২. পূরণ করা 

এবার আসা যাক দ্বিতীয় প্রকারে যার নাম পূরণ করা। এখানে প্রক্রিয়াটি বলার আগে একটি উদাহরণ দেখা যাক,

“২৯৯+৩৫৬” এই যোগটি যদি কেউ তাড়াতাড়ি বা মুখে মুখে করতে যায়, তবে ২৯৯ সংখ্যাটির কারণে ভুল হতে পারে। 

সেক্ষেত্রে, যোগ করার সময় ২৯৯ এর স্থলে ৩০০ ধরে যোগ করতে হবে। এতে খুব সহজেই ৩০০+৩৫৬= ৬৫৬ বের করা সম্ভব। এরপর যেহেতু প্রথমে আমরা ১ বেশি ধরে নিয়েছিলাম, তাই এখন মূল ফলাফল থেকে ১ বিয়োগ করে (৬৫৬-১=৬৫৫) বের করা সম্ভব। 

এই প্রক্রিয়াটি সাধারণত তাড়াতাড়ি কোনো হিসাব বের করার জন্য খুবই উপযোগী এবং এতে ভুলের সম্ভাবনাও কম থাকে।

৩. দেওয়া এবং নেওয়া

দেওয়া এবং নেওয়া, এটি হলো তৃতীয় কৌশল। এখন এটা বলতে আসলে কী বোঝায়? এক্ষেত্রেও প্রথমে উদাহরণ দিলে প্রক্রিয়াটি সহজে বোঝা যাবে।

আবারও আগের সংখ্যাগুলোই নেয়া যাক। “২৯৯+৩৫৬”, এক্ষেত্রে ৩৫৬ এর থেকে ১, ২৯৯ কে দিয়ে দেয়া হবে। যার ফলে সংখ্যাগুলো দাঁড়াবে, ৩০০ এবং ৩৫৫।  এবার খুব সহজেই ৩০০+৩৫৫=৬৫৫ ফলাফল বের করা সম্ভব। 

দ্রুত গণনার ক্ষেত্রে “পূরণ করা” প্রক্রিয়াটির মতই “দেওয়া এবং নেওয়া” প্রক্রিয়াটিও অত্যন্ত কার্যকরী। 

৪. ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করা

এবার শেষ অংশ, যা হলো “ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করা”। এই প্রক্রিয়ায় সংখ্যাগুলোকে কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করে যোগ করা হয়। আবারও ফিরে যাই সেই আগের উদাহরণে, 

“২৯৯+৩৫৬”

এখন, এই সংখ্যাগুলোকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করা যায়। যেমন, ২০০+৩০০+৯০+৯+৫০+৬। এভাবে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে নিলে যোগের প্রক্রিয়া সহজ হয়। তবে এই প্রক্রিয়াটি কিছুটা দীর্ঘ।

সাধারণত ছোটদের জন্য এটি বেশি উপযোগী যারা বড় সংখ্যার যোগ করতে ভুল করে ফেলে।

যোগের সংক্ষিপ্ত রূপ

যোগ কাকে বলে, যোগ কত প্রকার ও কি কি, যোগের কয়টি অংশ ও কি কি, যোগের সংক্ষিপ্ত রূপ,

এতক্ষণে আমরা যোগের ধর্ম, অংশ এবং প্রকার সম্পর্কিত বিভিন্ন আলোচনা করলাম। এবার যোগের অন্যান্য দিকগুলোও দেখে নেয়া যাক।

যোগের সংক্ষিপ্ত রূপ ধরা হয় “গুণ” কে। বিষয়টি নিয়ে একটু বিস্তারিত আলোচনা করলে পরিষ্কারভাবে বোঝা যাবে। উদাহরণস্বরূপ, ৩+৩+৩+৩=১২, অর্থাৎ ৩ কে ৪ বার যোগ করলে ফলাফল পাওয়া যাবে ১২। এখন অল্প সংখ্যার ক্ষেত্রে এটি সহজ। কিন্তু বেশি সংখ্যা যেমন ৩ কে যদি ১২ বার যোগ করতে চাই তবে এভাবে পাশাপাশি বসিয়ে বারবার যোগ করা কষ্টসাধ্য এবং সময়সাপেক্ষ। 

তাই, এই কাজকে সহজ করার জন্য ৩ কে ১২ দ্বারা গুণ করা যায়। যার ফলাফল আসবে ৩৬। এখন যদি ৩ কে ১২ বার পাশাপাশি বসিয়ে যোগ করা হয়, তবে সেক্ষেত্রেও উত্তর ৩৬ ই আসবে। একারণেই “গুণ” কে যোগের সংক্ষিপ্ত রূপ ধরা হয়।

যোগের বিপরীত রূপ

একইসাথে, যোগের বিপরীত রূপটিও তার সংক্ষিপ্ত রূপের মত জেনে নেয়া যাক। যোগের বিপরীত রূপ ধরা হয় “বিয়োগ”। কারণ আমরা দুটো জিনিস একত্রিত করতে যোগ করছি। তেমনি, যদি জিনিস দুটো থেকে একটি জিনিস আলাদা করে নিতে চাই তবে ঐ একত্রিত অংশ থেকে বাদ দিয়েই নিতে হবে।

📌 আরো পড়ুন 👇

এ সূত্র যোগের অংশগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য যা ইতিমধ্যে উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।

যোগের অর্থ কত প্রকার

আমরা বিভিন্ন অংকের সমাধানে যে যোগগুলো করে থাকি তা সাধারণত দুই ধরনের অর্থ বহন করে।

  • একত্র করা বা একত্রিকরণ
  • বৃদ্ধি করা

বিষয়টা একটু বিশ্লেষণ করা যাক। দুটো জিনিস যখন আমরা যোগের মাধ্যমে সংযোগ করব তখন তারা দুটো আলাদা আলাদা জায়গা থেকে একত্রিত হবে। পাশাপাশি একটির সাথে আরেকটি যুক্ত হওয়ায় পরিমাণে বা সংখ্যাটেও বৃদ্ধি পাবে। তাই এই দুই ধরণের অর্থই যোগ বহন করে।

যোগ সম্পর্কে আমাদের মতামত

গণিতে প্রাথমিক বিষয়গুলোর মধ্যে একটি হওয়ায় যোগ সম্পর্কিত সকল মূল জ্ঞান থাকা আবশ্যক। তাই তো, উপরে এ সম্পর্কিত সকল বিষয় উপস্থাপন করা হয়েছে। এই অংশগুলো সঠিকভাবে বুঝতে পারলে যে কেউ যোগ সম্পর্কিত সকল প্রাথমিক ধারণা পেয়ে যাবে।

যোগ সম্পর্কে আপনাদের আর কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদেরকে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানান। এবং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এমন আরো শিক্ষামূলক আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।

Sharing is Caring

Leave a Comment