কৃষি খামার কি? কৃষি খামার কত প্রকার , বৈশিষ্ট্য ও কার্যাবলী

5/5 - (1 vote)

বাংলাদেশ যেহেতু একটি কৃষিভিত্তিক দেশ তাই বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে কৃষি খামার গড়ে উঠেছে। কৃষিভিত্তিক এই সমাজ ব্যবস্থায় রয়েছে ডেইরি ফার্ম, মাছের খামার, ঝিনুকের খামার, কাঁকড়ার খামার, হরিণের খামার, কুমিরের খামার, মৌমাছির খামার ছাড়াও আরো অনেক প্রকারের খামার।

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা কৃষি খামার এর সংজ্ঞা, কৃষি খামার কি, কৃষি খামারের বৈশিষ্ট্য, কৃষি খামারের কার্যাবলী, কৃষি খামার ব্যবস্থাপনা, কৃষি খামার পরিচালনার নীতিমালা, কৃষি খামার স্থাপন পরিকল্পনার ধাপসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। চলুন তাহলে কথা না বাড়িয়ে কৃষি খামার কি সে সম্পর্কে আলোচনা করা যাক:

কৃষি খামার কি

কৃষি খামার কি, কৃষি খামার কত প্রকার , কৃষি খামারের বৈশিষ্ট্য, কৃষি খামারের কার্যাবলী,

যেখানে কৃত্রিম পদ্ধতি অবলম্বন করে উদ্ভিদ ও প্রাণী উৎপাদন এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় এবং বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবসা প্রসারণ করা হয় তাকে কৃষি খামার বলা হয়ে থাকে। কৃষি খামারে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে উদ্ভিদ এবং প্রাণী উৎপাদন এবং বিপণন করা হয়।

কৃষি খামার এর সংজ্ঞা 

কৃষিজ উপাদান উৎপাদনের জন্য যে ইউনিট ব্যবহার করা হয় তাকেই কৃষি খামার বলা হয়। কৃষি খামারে প্রধানত হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল সহ বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করা হয়ে থাকে। আরো সহজ ভাবে বলতে গেলে, কৃষি খামার হলো এমন একটি ভূখণ্ড যেখানে একটি ব্যক্তি নিজ উদ্যোগে বা যৌথ ব্যবস্থাপনায় কৃষিজ পণ্য উৎপাদন করতে পারে। কৃষি খামারের জন্য কৃষকের নিজ ভূমি থাকতে পারে, বন্ধকৃত ভূমি থাকতে পারে, বর্গা ভুমি ও থাকতে পারে। কৃষিজ খামারে ব্যক্তির নিজেই বা শ্রমিক দ্বারা কৃষি পণ্য উৎপাদন করতে পারেন। কৃষি খামারের জন্য যে অর্থের প্রয়োজন হয় তারা সাধারণত তিনটি উৎস থেকে সংগৃহীত হতে পারে। উৎসগুলো হল: 

  • পারিবারিক উৎস থেকে,
  • ব্যাংকিং খাত থেকে, 
  • ধার করা অর্থ অথবা আত্মীয়-স্বজন এর কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থের মাধ্যমে।

কৃষি খামার কত প্রকার ও কি কি

কৃষি খামার কি, কৃষি খামার কত প্রকার , কৃষি খামারের বৈশিষ্ট্য, কৃষি খামারের কার্যাবলী,

সুস্থ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত এবং তত্ত্বাবধায়নের মাধ্যমে বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করে যেখানে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য সাধন করা হয় সে স্থানকে কৃষিখামার বলা হয়। বিভিন্ন বিষয়ের উপর আলোকপাত করে কৃষি খামারকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। কৃষি খামার এর প্রকারভেদ গুলো হলো: 

কৃষির খাতের উপর ভিত্তি করে কৃষি খামারকে ছয় ভাগে ভাগ করা হয়। সেগুলো হলো: 

  • পোল্ট্রি খামার: পোল্ট্রি খামারে বিশেষ করে হাঁস মুরগির, কবুতর, কোয়েল পাখি পালন করা হয়ে থাকে। পোল্ট্রি খামারের মূল উদ্দেশ্য হলো ডিম এবং মাংস উৎপাদন করা।
  • ফসলের খামার: ফসলের খামারে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন প্রকার ফসল উৎপাদন করা হয়ে থাকে। ফসল খামারের মূল উদ্দেশ্য হলো বিভিন্ন প্রকার সবজি এবং শাক উৎপাদন করা।
  • গবাদি পশুর খামার: গবাদি পশু খামারে গরু, ছাগল, ভেড়া, শুকর, মহিষ ইত্যাদি পালন করা হয়ে থাকে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো মাংস এবং দুধ উৎপাদন করা।
  • মাছের খামার: মাছের খামারে বিভিন্ন প্রকার মাছ কৃত্রিমভাবে চাষ করা হয়ে থাকে। মাছের খামারের মূল উদ্দেশ্যই মাছ উৎপাদন করা।
  • নার্সারি: নার্সারিতে প্রচুর পরিমাণে ছোট এবং বড় ভেষজ গাছ, ফসলি চারা উৎপাদন করা হয়।
  • গৃহপালিত পশুর দুগ্ধ খামার: গৃহ পালিত পশুর দুগ্ধ খামারে গরু, ছাগল, মহিষ পালন করা হয়ে থাকে এবং এর মূল উদ্দেশ্য থাকে দুধ উৎপাদন করা।

আকার এবং আয়তনের দিক থেকে ও কৃষি খামারকে দুইটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সেগুলো হল: 

  • বাণিজ্যিক খামার: যে খামারে বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন উপাদান বিক্রয় করার জন্য বড় পরিসরে এবং বেশি পুঁজি নিয়ে খামার পরিচালনা করা হয় তাকে বাণিজ্যিক খামার বলে। এই খামারের মূল লক্ষ্য হল মুনাফা অর্জন করা।
  • পারিবারিক খামার: স্বল্প পরিসরে নিজেদের জীবনযাপন করার জন্য এবং অতিরিক্ত মূলধন বিনিয়োগ ছাড়াই যে খামার পরিচালনা করা হয় তাকে পারিবারিক খামার বলে। বাণিজ্যিক খামারে কিছুটা ঝুঁকি থাকলেও পারিবারিক খামারে ঝুঁকির পরিমাণ নেই বললেই চলে। 

পণ্যের উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে কৃষি খামারকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সেগুলো হলো: 

  • বিশেষায়িত খামার: যে খামারে একটি বিশেষ ধরনের ফসল উৎপাদন করা হয় তাকে বিশেষায়িত খামার বলে।
  • মিশ্র খামার: যে খামারে একই সাথে বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করা হয় তাকে মিশ্র খামার বলে।

মালিকানার উপর ভিত্তি করেও কৃষি খামারকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সেগুলো হলো: 

  • যৌথ খামার: একজন এলাকার কয়েকজন উদ্যোক্তা মিলে যখন একটি খামার পরিচালনা করে তখন তাকে যৌথ খামার বলে। এখানে মুনাফা সবাই সমান ভাগে ভাগ করে নেয়।
  • রাষ্ট্রীয় খামার : রাষ্ট্রীয় মালিকানায় যেসব খামার পরিচালিত হয় তাকে রাষ্ট্রীয় খামারস বলা হয়ে থাকে। রাষ্ট্র খামারের মুনাফা সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্র ভোগ করে।
  • ব্যক্তি মালিকানাধীন খামার: যেসব খামার একজন ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয় তাকে ব্যক্তি মালিকানাধীন খামার বলা হয়।

কৃষি খামারের বৈশিষ্ট্য 

কৃষি খামার কি, কৃষি খামার কত প্রকার , কৃষি খামারের বৈশিষ্ট্য, কৃষি খামারের কার্যাবলী,

একটি কৃষি খামারের অবশ্যই আদর্শ খামার হওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। একটি কৃষি খামারকে আদর্শ খামারে পরিণত করার জন্য কয়েকটি বৈশিষ্ট্য থাকা একান্ত প্রয়োজন। বৈশিষ্ট্যগুলো হল: 

  • কৃষি খামারে যেসব যন্ত্রপাতির প্রয়োজন তা হাতের কাছেই থাকতে হবে, 
  • খামার থেকে পণ্য বাজারে পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় যানবাহনের ব্যবস্থা থাকতে হবে, খাবারের সাথে যাতে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা বজায় থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে,
  • কৃষি খামারের পণ্য যেন নষ্ট না হয় সেজন্য মূল বাজারের পাশে বা বড় রাস্তার পাশে কৃষি খামারটি স্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে,
  • কৃষি খামারের মূলধন পরিমিত পর্যায়ে থাকতে হবে, অর্ধের প্রয়োজন হলে যাতে সংস্থান করা যায় তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে, 
  • খামারের শ্রমিকদের অবশ্যই দক্ষ হতে হবে।

কৃষি খামারের কার্যাবলী 

কৃষি খামার কি, কৃষি খামার কত প্রকার , কৃষি খামারের বৈশিষ্ট্য, কৃষি খামারের কার্যাবলী,

কৃষি খামারের কার্যাবলী গুলো লিখে তুলে ধরা হলো: 

  • কৃষি খামারে যেসব উপকরণ দরকার তার সহজ পাচ্যতা থাকতে হবে,
  • যোগাযোগের ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে, 
  • সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্য পরিচালনা করতে হবে, 
  • খামার পরিচালনা করার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করার মানসিকতা থাকতে হবে,
  • উৎপাদিত পণ্য যথাক্রমে বাজারজাতকরণ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ এর ব্যবস্থা করতে হবে,
  • পণ্য উৎপাদন করার জন্য যেসব উপকরণ দরকার তার প্রত্যেকটির সদ্য ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। 

📌 আরো পড়ুন 👇

কৃষি খামার সম্পর্কে আমাদের মতামত

বাংলাদেশ যেহেতু একটি কৃষি নির্ভরশীল দেশ তাই বাংলাদেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের কৃষি খামার কি, কৃষি খামারের প্রকারভেদ এবং কৃষি খামারের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকা দরকার। আমাদের আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন এবং এরকম আরো শিক্ষামূলক কন্টেন্ট পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন

Sharing is Caring

Leave a Comment