মানবীয় উৎস কাকে বলে? মানবীয় উৎসের উদাহরণ ও পার্থক্য

5/5 - (1 vote)

আমাদের নিত্যদিনকার জীবনে যে জিনিসটি সবচেয়ে প্রয়োজনীয় তা হলো তথ্য। যেকোনো বিষয় নিয়েই কাজ করা হোক না কেনো সেই কাজটি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে হলে প্রথমে সেই বিষয় সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করতে হয়। 

এরপর সেই তথ্যের উপর ভিত্তি করে পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এসব প্রয়োজনীয় তথ্য আমরা বিভিন্ন উপায়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করতে পারি। আর এই তথ্যের মধ্যে মানবীয় উৎস অন্যতম।

আজকের আর্টিকেলে আমরা মানবীয় উৎস কাকে বলে, মানবীয় উৎসের উদাহরণ, মানবীয় উৎস ও জড় উৎস এর মধ্যে পার্থক্য ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। মানবীয় উৎস সম্পর্কে জানতে সম্পূর্ণ পড়ুন।

মানবীয় উৎস কাকে বলে

মানবীয় উৎস কাকে বলে, মানবীয় উৎসের উদাহরণ, মানবীয় উৎস ও জড় উৎসের মধ্যে পার্থক্য,

প্রথমেই জেনে নেয়া যাক মানবীয় উৎস বলতে কী বোঝায়। মানবীয় উৎস হলো যখন আপনি কোনো বিষয়ে কোনো মানুষের থেকে সরাসরি তথ্য জোগাড় করবেন। অর্থাৎ এখানে অন্য কোনো মাধ্যম বা পদার্থের সাহায্য থাকবে না।

সরাসরিভাবে কোনো মানুষের নিকট থেকে তথ্য সংগ্রহ করাকেই মানবীয় উৎস বলা হয়। মনস্তাত্ত্বিক বিজ্ঞান অনুযায়ী মানুষ জড় পদার্থ অপেক্ষা মানবীয় উৎসকেই বেশি উপকারী, সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য মনে করে। মানবীয় উৎস সম্পর্কে উদাহরণ জানলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে।

মানবীয় উৎসের উদাহরণ

মানবীয় উৎস কাকে বলে, মানবীয় উৎসের উদাহরণ, মানবীয় উৎস ও জড় উৎসের মধ্যে পার্থক্য,

মানবীয় উৎসের উদাহরণ দিতে একটি বাস্তবিক ব্যাপারে কথা বলা যাক। যেমন একজন কোনো স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ইচ্ছুক। সেক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি নিজে গিয়ে ঐ প্রতিষ্ঠানে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন অথবা ইন্টারনেটের সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন।

এখন, ঐ ব্যক্তি যখন সরাসরি প্রতিষ্ঠানে যাবেন, তখন তিনি সেখানে কর্মরত ব্যক্তির সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন। এর মাধ্যমে ঐ কর্মরত ব্যক্তি সরাসরি মৌখিকভাবে ভর্তিচ্ছু ব্যক্তিকে তথ্য প্রদান করতে পারবেন। এই সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করার ব্যাপারটিকেই বলা হয় মানবীয় উৎস।

শুধু তাই নয়, আপনি যদি একজন ডাক্তারের কাছে যান, তবে ঐ ডাক্তার আপনাকে সরাসরি চিকিৎসা প্রদান কর‍তে পারবেন কিংবা শিক্ষক আপনাকে সরাসরি শিক্ষা প্রদান করেন, এই বিষয়টিকেও মানবীয় উৎসের মধ্যেই ধরা হয়।

মানবীয় উৎস ও জড় উৎসের মধ্যে পার্থক্য 

মানবীয় উৎস কাকে বলে, মানবীয় উৎসের উদাহরণ, মানবীয় উৎস ও জড় উৎসের মধ্যে পার্থক্য,

অনেক সময় মানবীয় উৎস এবং জড় উৎসের মধ্যে পার্থক্য বোঝা যায় না বা কিছুটা দ্বিধা-সন্দেহের সৃষ্টি হয়। তাই এই ব্যাপারটি পরিষ্কারভাবে বুঝতে মানবীয় উৎস এবং জড় উৎসের মধ্যে পার্থক্য জানা প্রয়োজন।

মানবীয় উৎস  জড় উৎস
মানবীয় উৎস বলতে বোঝায় যখন কোনো ব্যক্তি সরাসরিভাবে অপর এক ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করেন। জড় উৎস হলো তথ্য সংগ্রহের অপর একটি উৎস যেখানে কোনো জড় মাধ্যম যেমন মোবাইল ফোন, টেলিভিশন ইত্যাদির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
মানবীয় উৎস মানব সম্পর্কিত, এখানে কোনো জড় মাধ্যমের অস্তিত্ব নেই জড় মাধ্যম যেখানে জড় বস্তুর উপস্থিতিতে তথ্য পাওয়া যায়, সরাসরি কোনো মানবের উপস্থিতি থাকে না। 
মানবীয় উৎস হলো যখন কোনো মানুষের সাথে সরাসরি সাক্ষাতের মাধ্যমে কোনো বিষয় সম্পর্কে জানতে পারা যায়। যখন আপনার মোবাইল ফোনে কোনো তথ্য বিষয়ক মেসেজ আসে বা টেলিভিশনে কোনো তথ্য জানতে পারেন এসব কিছুই জড় উৎসের উদাহরণ।
মানবীয় উৎসের তথ্য অধিকতর নির্ভরযোগ্য হয় কেননা এতে ভুলের সম্ভাবনা থাকে না। জড় উৎসের তথ্য নির্ভরযোগ্য হলেও তা মানবীয় উৎসের মত এতটা নির্ভরযোগ্য হয়না কারণ এতে প্রযুক্তিগত ত্রুটি থাকতে পারে। আবার একই বিষয় নিয়ে একাধিক তথ্য পাওয়া যায় যাতে দ্বিধার সৃষ্টি হয়।
এক্ষেত্রে সক্রিয় পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন নেই। তথ্য পেতে সক্রিয় পর্যবেক্ষণ দরকার।

মানবীয় উৎস তথ্যের ভিত্তিতে কোন ধরণের উৎস

মানবীয় উৎসকে তথ্যের ভিত্তিতে কোন শ্রেণিতে ফেলা হবে তা নির্ণয়ের আগে প্রথমে জানা প্রয়োজন এ ধরণের উৎস কত প্রকার।

প্রাপ্তির উৎসের ভিত্তিতে তথ্যকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো-

  • প্রাথমিক বা প্রত্যক্ষ উৎস 
  • পরোক্ষ উৎস বা মাধ্যমিক উৎস

১. প্রাথমিক বা প্রত্যক্ষ উৎস 

প্রাথমিক বা প্রত্যক্ষ উৎস বলতে কী বোঝায় তা জানা প্রয়োজন। প্রত্যক্ষ উৎস হলো যখন কোনো তথ্য সরাসরিভাবে জানা যায়। তা যেকোনো মাধ্যমেই পাওয়া যাক না কেনো তথ্য অবশ্যই যেখানে উদ্ভূত হয়েছে সেখান থেকেই পেতে হবে। এভাবে সরাসরি তথ্য পেলে তা প্রত্যক্ষ উৎসের অন্তর্গত।

২. পরোক্ষ উৎস বা মাধ্যমিক উৎস

দ্বিতীয় ক্ষেত্রে পরোক্ষ উৎস বা মাধ্যমিক উৎস বলতে বোঝায় ঐ তথ্য দ্বিতীয় কোনো মাধ্যমে এসে পৌঁছেছে। 

অর্থাৎ তথ্য প্রদানকারী ব্যক্তি বা জড় মাধ্যম এই তথ্য অন্য কারো কাছ থেকে সংগ্রহ করে তারপর প্রদান করেছে। এখানে তথ্য যার কাছ থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে সে আরেকটি উৎস থেকে জেনে জানাচ্ছে বলেই একে মাধ্যমিক উৎস বলা হচ্ছে।

এবার আসা যাক, মানবীয় উৎস কোন উৎসের অন্তর্গত। এখানে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ উৎস উভয়ই মানবীয় উৎস হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে আগের বিষয়টিকে আবার নেয়া যাক যা উপরে মানবীয় উদাহরণের বর্ণনা দিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

একজন ব্যক্তি কোনো প্রতিষ্ঠানে যখন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার নিকট থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন তখন সেটা প্রত্যক্ষ উৎসের অন্তর্গত। কেননা ঐ কর্মকর্তা ঐ প্রতিষ্ঠানের কাজের সাথে জড়িত এবং সরাসরি তথ্য দিচ্ছেন।

অন্যদিকে, যদি ভর্তি-ইচ্ছুক ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য জেনে এসে অন্য কাউকে বলেন তবে সেটা পরোক্ষ উৎসের উদাহরণ হবে। কারণ তিনি প্রত্যক্ষভাবে এই কাজের সাথে জড়িত নন। কিন্তু তিনি নির্ধারিত ব্যক্তির থেকে তথ্য গ্রহণ করেছেন এবং এসে আরেকজনকে জানিয়েছেন। তাই এটা মানবীয় উৎস হলেও পরোক্ষ উৎসের সাথে সম্পর্কিত হবে। 

📌 আরো পড়ুন 👇

অর্থাৎ এই বিষয়টি স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে মানবীয় উৎস প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ উভয়ই হতে পারে। 

মানবীয় উৎস সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নউত্তর

কারও বাসায় একজন কর্মী এসে টিকা প্রদানের তথ্য জানিয়ে গেলে সেটা কোন তথ্যের অন্তর্ভুক্ত হবে?

অবশ্যই এটি মানবীয় উৎস হবে। কারণ টিকা কর্মী নিজে এসে তথ্য জানিয়েছেন এবং এক্ষেত্রে অন্য কোনো মাধ্যম ব্যবহৃত হয়নি। তাই এটি নি:সন্দেহে মানবীয় উৎস। যদি এমন হত যে মোবাইল ফোনে টিকার মেসেজ এসেছে, তবে তা জড় উৎস হিসেবে বিবেচিত হত।

মানবীয় উৎসের কয়েকটি ক্ষেত্রে উল্লেখ করো।

মানবীয় উৎসের ক্ষেত্র বলতে বিশেষজ্ঞ, প্রত্যক্ষদর্শী, ভুক্তভোগী, অভিজ্ঞ ব্যক্তি, কর্মরত ব্যক্তি ইত্যাদি মানুষকে বোঝায় যারা সরাসরি ঐ কাজটি নিজে করছেন কিংবা দেখেছেন।

টেলিফোনে কথা বলা কোন ধরণের উৎস?

এটি জড় উৎস বলে বিবেচিত হয়। যদিও টেলিফোনে অন্য একজন মানুষেরই সাথে কথা বলা হয়, কিন্তু ঐ ব্যক্তি সরাসরি গিয়ে কথা বলছেন না। তিনি একটি মাধ্যম ব্যবহার করছেন যা হলো টেলিফোন। তাই এটি মানবীয় উৎস নয়।

মানবীয় উৎস সম্পর্কে আমাদের মতামত

এতক্ষণ আমরা মানবীয় উৎস সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। আসলে বিষয়টি অত্যন্ত সহজ। কিন্তু এর সাথে জড় উৎসের বিষয়টি জড়িত থাকায় অনেক ক্ষেত্রেই ভুল হতে পারে। তাই মানবীয় উৎস গুলো সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা আবশ্যক। 

কেননা এসকল উৎসের তথ্য দ্বারা আমরা আমাদের বিভিন্ন দিক ক্রমাগত পরিচালনা করে থাকি। আর নির্ভরযোগ্য এবং সঠিক তথ্য পেতে মানবীয় উৎসগুলোর প্রতিই বেশি নজর দেওয়া হয়।

মানবীয় উৎস নিয়ে যদি আপনাদের কোন প্রশ্ন বা মতামত থেকে থাকে তাহলে আমাদের অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানান। এবং এরকম আরো তথ্যবহুল আর্টিকেল পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন।

Sharing is Caring

Leave a Comment