ঐকিক নিয়ম কাকে বলে? ঐকিক নিয়মের সূত্র (উদাহরণসহ)

5/5 - (1 vote)

গণিতের গুরুত্বপূর্ণ শাখাগুলো উল্লেখ করতে হলে সবার প্রথম সারিতে অবশ্যই ঐকিক নিয়মের অবস্থান থাকতে হবে। কেননা যত সহজে এবং দ্রুত আমরা বিভিন্ন সমস্যার সমাধান এই পদ্ধতিতে করতে পারি তা অন্য অনেক পদ্ধতিতেই পারি না।

তবে সহজ হলেও কিছুটা জটিলতাও এই নিয়মের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। সামান্য একটু ভুলেও পুরো ফলাফই ভুল হবার সম্ভাবনা আছে। তাই আসুন জেনে নেই, এই নিয়মের খুঁটিনাটি যাতে এরপর থেকে কখনোই ঐকিক নিয়ম নিয়ে আপনাকে কোনো সমস্যায় না পরতে হয়।

ঐকিক নিয়ম কাকে বলে

ঐকিক নিয়ম কাকে বলে, ঐকিক নিয়মের সূত্র,

ঐকিক নিয়ম বা Unitary Method জানতে হলে প্রথমে “ঐকিক” শব্দটার অর্থ জানতে হবে। “ঐকিক” শব্দটি বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায় যে এটি “একক” শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ “এক”। 

মূলত প্রদত্ত তথ্য থেকে কোনো জিনিসের এক এককে যে পরিমাণ বা মূল্য হয় তার উপর ভিত্তি করে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ মূল্য নির্ধারণের পদ্ধতিকেই ঐকিক নিয়ম বা হয়। এক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট জিনিসের স্পষ্ট সাংখ্যিক ধারণা দেয়া থাকে এবং এর উপর ভিত্তি করেই অপরটির পরিমাণ বের করতে হয়। 

অর্থাৎ আপনাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ জিনিসের দাম জানানো হলো। ঐ জিনিসের পরিমাণ এবার কমানো বা বাড়ানো হলে তার দাম কমবে না বাড়বে তা নির্ধারণ করতে আপনাকে সাহায্য করবে এই নিয়ম।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়,

১৫ টি কলার দাম ৭৫ টাকা হলে ১০ টি কলার দাম কত? 

এখানে কলার পরিমাণ উভয় ক্ষেত্রেই আছে, তবে দাম শুধু একটি ক্ষেত্রে। তাই এই পরিমাণের উপর ভিত্তি করে আপনাকে প্রথমে ১ টি এবং তারপর ১০ টি কলার দাম নির্ণয় করতে হবে। এই নিয়মটাই হলো ঐকিক নিয়ম।

ঐকিক নিয়মের সূত্র

ঐকিক নিয়ম কাকে বলে, ঐকিক নিয়মের সূত্র,

ঐকিক নিয়মের সমাধান বা সূত্র একদিকে যেমন সহজ, অন্যদিকে তেমন কঠিন। অর্থাৎ যে প্রশ্নে উল্লিখিত মূল বিষয়টি ধরতে পারবে তার জন্য সমাধান করা হবে অত্যন্ত সহজ। অন্যদিকে, শেষের জিনিস প্রথমে আর প্রথমেরটা শেষে বসিয়ে দিলেই গোলমাল হয়ে যাবে সব। 

এখন, শেষ আর প্রথমের জিনিস বলতে কী বোঝায়? তিনটি ধাপে এই প্রক্রিয়াটি বিশ্লেষণ করলে এই প্রথম আর শেষের ব্যাপারটি বোঝা সহজ হয়ে যাবে।

ধাপ-১: স্থান নির্ধারণ (সমাধানের প্রথম লাইন)

সমাধান শুরুর পূর্বেই দেখতে হবে প্রশ্নে কোন জিনিসটি দুবার বলা হয়েছে এবং কোনটি কেবল একবার। যে জিনিসটির পরিমাণ বা সংখ্যাটি একবার উল্লেখ করার হয়েছে মূলত তারই দ্বিতীয় পরিমাণ বের করতে বলা হয়। 

এক্ষেত্রে যে বিষয়টি দুইবার উল্লেখ করা হয়েছে অর্থাৎ যে উপাদানের বিবরণ স্পষ্টভাবে দেয়া আছে, সেটি বসবে সমাধান লাইনের প্রথমে বা বামে আর যেটি কেবল একবার ব্যবহৃত হয়েছে সেটি বসবে সমাধান লাইনের শেষে বা ডানে। 

ধাপ-২: একক উপাদান বের করা (সমাধানের দ্বিতীয় লাইন)

পরবর্তী ধাপে যে জিনিসটি প্রথমে উল্লেখ করা হয়েছে তার ঠিক নিচে অর্থাৎ বামদিকে ১ অংকটি বসাতে হবে। এরপর একই লাইনের ডানে ১ অংকের সাথে প্রথম লাইনের ডান পাশের অংকটি গুণ বা ভাগ করতে হবে। যদি পরিমাণ বেশি বোঝায় তবে গুণ এবং যদি পরিমাণ কম বোঝায় তাহলে ভাগ। 

তবে এই দ্বিতীয় লাইনে অবশ্যই ১ অংকটিই ব্যবহার করতে হবে। অন্য কোনো অংক ব্যবহার করা যাবে না। আর একারণেই এই নিয়মের নামকরণ করা হয়েছে ঐকিক নিয়ম।

ধাপ-৩: মূল ফলাফল নির্ধারণ (সমাধানের তৃতীয় লাইন)

সর্বশেষ ধাপে এসে দ্বিতীয় লাইনের শুরুতে যেখানে ১ আছে তার ঠিক নিচে যে নির্দিষ্ট বা স্পষ্টভাবে উল্লিখিত জিনিসের মান চাওয়া হয়েছে সেটি লিখে ডানদিকে প্রয়োজন অনুসারে গুণ বা ভাগ করতে হবে। এভাবে মূল উত্তরটি পাওয়া যাবে যা প্রশ্নে চাওয়া হয়েছে।

উদাহরণ

এতক্ষণে নিশ্চয়ই আপনি ঐকিক নিয়ম সমাধানের উপায় বুঝতে পেরেছেন। তবে বিষয়টিকে আরও সুস্পষ্ট করার জন্য এবং কারো যদি কিছুটা দুর্বোধ্য লাগে তবে তা সাবলীল করার জন্য একটি উদাহরণের সাহায্য নেয়া যাক।

প্রশ্ন:

একটি দেয়াল নির্মাণ করতে ৩০ জন শ্রমিকের ২৪ দিন লাগে। তাহলে ৪৫ জন শ্রমিক ঐ দেয়াল কতদিনে নির্মাণ করবে?

সমাধান:

দেখুন এখানে শ্রমিক সংখ্যার কথা বলা হয়েছে দুই বার এবং তা স্পষ্ট। তবে দিনের সংখ্যা কেবল একবার আছে। এবং অন্য দিনের পরিমাণটি জানতে চাওয়া হয়েছে। তাই সমাধান লাইনের শুরুতে বা বামে বসবে শ্রমিক সংখ্যা এবং শেষে বা ডানে বসবে দিন।

তাহলে,

৩০ জন শ্রমিকের সময় লাগে ২৪ দিন

১ জন শ্রমিকের সময় লাগে  (২৪×৩০) দিন

৪৫ জন শ্রমিকের সময় লাগে (২৪×৩০)÷৪৫ =১৬ দিন 

এখানে, দ্বিতীয় লাইনে ২৪ এবং ৩০ গুণ করা হয়েছে কারণ ৩০ জন শ্রমিক যে কাজ একদিনে করবে, তা ১ জন শ্রমিক বেশি দিনে করবে। আবার, সর্বশেষ লাইনে, ১ জন শ্রমিক যতদিনে কাজ করবে ৪৫ জন শ্রমিক তার থেকে কম দিনেই করতে পারবে। একারণে এক্ষেত্রে ৪৫ দ্বারা ভাগ করা হয়েছে।

ঐকিক নিয়মের কিছু ধারণা

তাহলে খুব সহজেই আমরা দেখে নিলাম, ঐকিক নিয়ম দ্বারা কীভাবে সমস্যা সমাধান করা যায়। তবে এখানে কিছু মূল বিষয় সম্পর্কে আগেই ধারণা রাখা উচিৎ। কেননা গণিত হোক কিংবা অন্য কিছু, কোনো বিষয়ে তখনই দক্ষ হওয়া যায় যখন তার ছোট ছোট বিষয় সম্পর্কেও জ্ঞান থাকে। তাহলে এক নজরে দেখে নেয়া যাক সেগুলো-

  • কোনো সমস্যায় যদি লোকসংখ্যা উল্লেখ থাকে,  তবে লোকসংখ্যা বাড়ালে দিন বা কাজের সময় কমবে। তেমনি, লোকসংখ্যা কমলে কাজের সময় বাড়বে। সাধারণত লোকসংখ্যা দ্বিগুণ করলে কাজের পরিমাণ অর্ধেক হয়ে যায়। 
  • কোনো ক্ষেত্রে দূরত্ব বাড়ানো হলে সময়ও একই সাথে সমানুপাতিক হারে বেড়ে যাবে। আবার দূরত্ব কমলে সময়ের পরিমাণও কমবে।
  • কোনো জিনিসের পরিমাণ যদি কমে যায়, তবে তার মূল্যও কমে যাবে। অন্যদিকে, জিনিসের পরিমাণ বাড়ালে মূল্যও বাড়বে। এক্ষেত্রে সমানুপাতিক সম্পর্ক বিদ্যমান।
  • কম মানুষ কম দিনে কম কাজ করবে। ঠিক তেমনি, বেশি মানুষ বেশি দিনে বেশি কাজ করবে। 
  • ক্ষমতা কম হলে কাজে সময় বেশি লাগবে। আবার, ক্ষমতা বেশি হলে সময় লাগবে কম।
  • যদি নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী থাকে, তবে সময়ের সাথে সাথে লোকের পরিমাণ বাড়লে খাদ্যের পরিমাণ কমে যাবে। 

ঐকিক নিয়ম প্রয়োগের ক্ষেত্র

ঐকিক নিয়ম সম্পর্কে বেশ কিছু ধারণা ইতিমধ্যে আমরা পেয়েছি। তবে গণিতের সকল সমস্যার ক্ষেত্রে ঐকিক নিয়ম প্রয়োগ করা সম্ভব নয়। কিছু নির্দিষ্ট বিষয়েই এটা প্রযোজ্য। যেমন-

  • দূরত্ব
  • সময়
  • কাজ
  • নৌকা ও স্রোত সংক্রান্ত
  • যানবাহন সংক্রান্ত (ট্রেন, বাস ইত্যাদি)
  • প্রতিযোগিতা
  • পরিমাণবাচক জিনিস এবং তার মূল্য
  • চৌবাচ্চা
  • শতকরা

এই ধরণের গণিতের সমস্যা সমাধানে ঐকিক নিয়ম প্রয়োগ করা যায়। যদিও এসব সমস্যা বিভিন্ন শর্টকাট নিয়মেও সমাধান করা যায়, তবে ঐকিক নিয়ম এক্ষেত্রে অত্যন্ত সহজে প্রয়োগ করা যায়।

শুধু গাণিতিক ক্ষেত্রে নয়, এমনকি এসকল বিষয়ে বাস্তব জীবনের বিভিন্ন হিসাব-নিকাশও আমরা খুব সহজেই ঐকিক নিয়মের মাধ্যমে করতে পারি। তাই তো বাজারের দর কষাকষি থেকে শুরু করে জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্যবহারিকভাবে কোনো না কোনোভাবে এই নিয়মের ব্যবহার চলছে। 

ঐকিক নিয়মের সমস্যা 

এতক্ষণ আমরা ঐকিক নিয়মের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে দেখলাম। কোন কোন ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায় তাও দেখলাম। তবে এই প্রয়োগেও অনেক সময় কিছু ছোট ছোট ভুল হয়ে যায়। যার ফলে সমস্যার সমাধান পাওয়া যায় না। 

প্রথমত, ঐকিক নিয়মে যে ভুলটা অনেকেই করে, তা হলো শুরুতে এবং শেষে কোন জিনিসটা বসবে তা ঠিক করতে না পারা। এটাকেই অবশ্য সবচেয়ে কঠিন বিষয় হিসেবে দেখা হয় ঐকিক নিয়মে। কারণ এতটুকু আন্দাজ করতে পারলে বাকিটা সমাধান সহজ। তবে এই অংশটুকুতেই সকল সমস্যা।

ঐকিক নিয়মের জটিল সমস্যা গুলোর ক্ষেত্রে দেখবেন তথ্যগুলো এমনভাবে উপস্থাপন করা আছে যা আসলে কোন উপাত্তকে নির্দেশ করছে তা হঠাৎ করে আন্দাজ করা কঠিন। 

দ্বিতীয়ত, সমাধানের দ্বিতীয় লাইনে যেখানে ১ এর পরিমাপ করা হয় সেখানের পূর্বের অংকের সাথে গুণ হবে নাকি ভাগ তা নির্ণয় করা কিছু ক্ষেত্রে কঠিন। এমনকি, তৃতীয় ধাপের গুণ ভাগেও জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

তৃতীয়ত, কিছু জটিল ঐকিক নিয়মের সমস্যায় যেখানে দুবার এই নিয়ম দরকার হয় সমাধানে, সেখানে কোন তথ্য কখন ব্যবহার করতে হবে এমন ক্ষেত্রেও জটিলতা দেখা যায়। 

সর্বশেষ যদি আরেকটি সমস্যার কথা বলতে হয়, তবে তা হলো প্রদত্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে গাণিতিক বাক্য তৈরি। এ পর্যায়েও কিছু দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টি পারে যা সমাধান থেকে দূরে রাখতে সম্ভব।

📌 আরো পড়ুন 👇

তবে ঘাবড়াবার কিছু নেই এখানে। উপরে ঐকিক নিয়ম বিষয়ক যে ধারণাগুলো দেওয়া হয়েছে সেগুলোর প্রয়োগ যদি সঠিকভাবে আপনি বুঝতে পারেন এবং সম্পন্ন করতে পারেন, তবে এসকল সমস্যা কিছুই নয়।

ঐকিক নিয়ম সম্পর্কে আমাদের মতামত

ঐকিক নিয়মের বিশ্লেষণ করলে অতি সহজেই এর খুঁটিনাটি সম্পর্কে আন্দাজ করা যায়। এই নিয়ম বিষয়ক আপনার যত ধরণের সমস্যাই থাকুক না কেনো, সামান্য কিছু বুদ্ধি প্রয়োগে আপনি সহজেই সমাধান করতে পারবেন।

তবে তার জন্য, আপনাকে অবশ্যই প্রশ্ন বোঝার এবং প্রশ্নে আসলে কী চেয়েছে সেটা সঠিকভাবে উপস্থাপন করার ক্ষমতা রাখতে হবে। গাণিতিক বাক্য সঠিকভাবে উপস্থাপন করার কায়দা জানলে এই সমস্যা আপনার জন্য কিছুই নয়। 

ঐকিক নিয়ম  সম্পর্কে আপনাদের আর কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদেরকে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানান। এবং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এমন আরো শিক্ষামূলক আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।

Sharing is Caring

Leave a Comment