পুষ্টি কাকে বলে? কত প্রকার, প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব

5/5 - (1 vote)

জীবের একটি জৈবিক প্রক্রিয়া পুষ্টি। আর তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যেকটি জীব এবং উদ্ভিদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন পড়ে সঠিক পুষ্টি উপাদানের। যাই হোক জানার তাগিদে অনেকেই প্রশ্ন করেন– পুষ্টি কাকে বলে? পুষ্টি কত প্রকার ও কি কি?

তাই আজকের এই নিবন্ধে আমরা বিস্তারিতভাবে জানাবো পুষ্টির গুরুত্ব, এর প্রকারভেদ এবং পুষ্টি সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় বিষয়াবলী সম্পর্কে। কেননা অনেকেই মনে করেন– পুষ্টি ও খাদ্য দুটি একই। কিন্তু সত্যি এটাই যে খাদ্য ও পুষ্টির মধ্যে রয়েছে বিস্তর ব্যবধান। কিন্তু সেটা কি? জানতে হলে পড়তে থাকুন নিচে উল্লেখিত বিষয়গুলি। 

পুষ্টি কাকে বলে

পুষ্টি কাকে বলে, পুষ্টি কত প্রকার ও কি কি, পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা কি কি, পুষ্টির গুরুত্ব,

পুষ্টি হলো – এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে আমাদের শরীর খাদ্য থেকে প্রয়োজনীয় উপাদান সংগ্রহ করে এবং এই উপাদানগুলোকে শক্তি উৎপাদন, বৃদ্ধি, এবং শরীরের কোষ ও টিস্যুর স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ব্যবহার করে থাকে। 

মূলত খাদ্য থেকে প্রাপ্ত পুষ্টি উপাদানগুলোর মধ্যে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, মিনারেল, এবং পানি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আর এসব উপাদান আমাদের শরীরের বিভিন্ন কাজ সম্পাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আর তাই এভাবেও বলা যেতে পারে যে– পুষ্টি আমাদের শরীরের সঠিক বিকাশ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সুস্থ জীবনযাপনের জন্য অপরিহার্য একটি উপাদান। সেই সাথে একটি অসাধারণ প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে শরীর খাদ্য গ্রহণ করে, সেই খাদ্যের উপাদানগুলোকে শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করে এবং এর থেকে শক্তি উৎপন্ন করে। 

পুষ্টির সংজ্ঞা

পুষ্টি কি বা কাকে বলে এটিকে মূলত বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়। যদি আপনি খুব সহজ ভাবে পুষ্টির সংজ্ঞা দিতে চান সে ক্ষেত্রে বলতে পারেন– যেসব জটিল রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জীবদেহের অভ্যন্তরে খাদ্য বস্তু থেকে উপাদান সংগ্রহের মাধ্যমে জীবের দেহ গঠনের কাজ চলমান থাকে তাকে বলা হয় পুষ্টি। 

পুষ্টির সংজ্ঞা ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেওয়া যেতে পারে। যেমন–

✓ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে পুষ্টির সংজ্ঞা: পুষ্টি হলো জৈব ও অজৈব উপাদানের একটি প্রক্রিয়া, যা খাদ্য ও পানীয় থেকে সংগৃহীত হয় এবং যা জীবদেহের বিভিন্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়।

✓ স্বাস্থ্যগত দৃষ্টিকোণ থেকে পুষ্টির সংজ্ঞা: পুষ্টি হলো এমন খাদ্যাভ্যাস, যা একজন ব্যক্তির স্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। পুষ্টির অভাবে যেমন রোগ হতে পারে, তেমনি সঠিক পুষ্টি একজন মানুষ অর্থাৎ জীবকে সুস্থ রাখতে পারে।

পুষ্টি কত প্রকার ও কি কি

পুষ্টি প্রধানত দুটি ভাগে বিভক্ত। একটি হচ্ছে উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান, অন্যটি হচ্ছে প্রানীর পুষ্টি উপাদান। আর উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদানের অন্তর্ভুক্ত মোট উৎস হচ্ছে তিনটি। সেগুলো হলো, ভূপৃষ্ঠ বায়ুমন্ডল এবং পানি।

ঠিক একইভাবে উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদানে রয়েছে আরো প্রধান দুটি পুষ্টি উপাদান। যথা – 

  • ম্যাক্রো নিউট্রিয়েন্টস,
  • মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টস। 

আর এই দুটি প্রধান প্রকারভেদের অন্তর্ভুক্ত আরও আলাদা আলাদা শক্তি রয়েছে। তাই আসুন নিচের অংশটুকু পড়ার মাধ্যমে জেনে নেই, মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট পুষ্টি উপাদানের অন্তর্ভুক্ত শক্তি গুলো কি কি এবং ম্যাক্রো নিউট্রিয়েন্টস পুষ্টি উপাদানের অন্তর্ভুক্ত শক্তি বা উৎস গুলো কি কি?

১. ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টস (Macronutrients)

পুস্টি কাকে বলে, পুষ্টি কত প্রকার ও কি কি, পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা কি কি, পুষ্টির গুরুত্ব,

ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টস হচ্ছে ঐ সকল পুষ্টি উপাদান যা আমাদের শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণে প্রয়োজন পড়ে। এই উপাদান গুলো শরীরের প্রধান শক্তির উৎস এবং শরীরের গঠন ও কার্যকারিতার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সহায়ককারী সাধারণত প্রধান ও শক্তিশালী ম্যাক্রো নিউট্রিয়েন্স উপাদান গুলো হলো — 

  • কার্বোহাইড্রেট 
  • প্রোটিন ও 
  • ফ্যাট।

কার্বোহাইড্রেট

কার্বোহাইড্রেট কে বাংলাতে বলা হয় শর্করা। মূলত শরীরের জন্য প্রধান শক্তির উৎস হচ্ছে কার্বোহাইড্রেট, যা ম্যাক্রো নিউট্রিয়ন্স পুষ্টি উপাদানের অন্তর্ভুক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মূলত এই উপাদান শরীরের প্রতিটি কোষের কাজের জন্য প্রয়োজনীয় গ্লুকোজ সরবরাহ করে। সাধারণত দানাদার খাবার, ফলমূল সবজি এবং দুগ্ধজাত দ্রব্য কার্বোহাইড্রেট এর সবচেয়ে ভালো উৎস।

জানা গিয়েছে এই কার্বোহাইড্রেট প্রধান তিনটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত। যথা – সরল শর্করা, জটিল শর্করা এবং ডায়েটারি ফাইবার। 

সরল শর্করা

এটি দ্রুত হজম এবং দ্রুত শক্তি প্রদান করতে সক্ষম। গ্লুকোজ, মিষ্টি ফল, মধু এবং চিনি এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সরল শর্করা। যেগুলো সঠিক পরিমাণে নিয়মিত খাওয়ার ফলে আপনি নিজের হজম শক্তিকে পাকাপোক্ত করতে পারবেন এবং শরীরে শক্তি সঞ্চয় করতে সক্ষম হবেন।

জটিল শর্করা

ধান গম, আলু এবং সবুজ শাকসবজি হচ্ছে জটিল শর্করার প্রধান উৎস। মূলত যেসকল খাদ্যে স্টার্চ এবং ফাইবার রয়েছে সেগুলো জটিল শর্করা অর্থাৎ কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট পুষ্টির অন্তর্ভুক্ত খাদ্য, যা ধীরে ধীরে হজম হয় এবং দীর্ঘস্থায়ী শক্তি প্রদান করে চলে আমাদের শরীরে। 

ডায়াটারি ফাইবার

এটি সাধারণত হজম হয় না কিন্তু হজম প্রক্রিয়াকে অনেক বেশি সহজ করে তোলে পাশাপাশি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। শাকসবজি, ফল এবং সমগ্র শস্য জাতীয় খাবারের পাওয়া যায় ডায়েটারি ফাইবার। 

তো ইতিমধ্যে আমরা যে আলোচনাটুকু করেছি এতে করে এটা সুস্পষ্ট যে– কার্বোহাইড্রেট এর প্রত্যেকটি শক্তির উৎস ও পুষ্টি উপাদান মূলত আমাদের শরীরে নানাবিধ কাজ করে থাকে সেইসাথে মস্তিষ্কের কার্যক্রম কে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে। 

প্রোটিন

প্রোটিনকে বাংলাতে আমরা আমিষ বলে থাকি। ইতিমধ্যে আমরা উল্লেখ করেছি শক্তি উৎপাদনের একটি অন্যতম প্রধান উৎস হচ্ছে কার্বোহাইড্রেট অর্থাৎ শর্করা। ঠিক একইভাবে প্রোটিনও আমাদের শরীরে শক্তি যোগান কারী একটি অন্যতম উৎস। 

জানলে অবাক হবেন মোটামুটি ২০ টি অ্যামাইনো এসিড একটি অপরটির সাথে চেইন আকারে আবদ্ধ হয়ে গঠন করে প্রোটিন। আর এর মধ্যে নয়টি হলো প্রয়োজনীয় এমাইনো এসিড যেগুলো আমাদের দেহে তৈরি হতে পারে না। 

আর এজন্যই প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহণ করার মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রোটিন পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে হয়। কেউ যদি নিয়মিত প্রোটিন শরীরের জন্য উপযুক্ত পরিমাণে গ্রহণ করে তাহলে–

  • ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয় 
  • পেশির গঠন অনেক বেশি শক্তিশালী হয় 
  • এনজাইম ও হরমোনের উৎপাদন বাড়ে, ফলে শরীরের বায়োকেমিক্যাল প্রক্রিয়া গুলো সঠিকভাবে পরিচালিত হয় 
  • প্রোটিন শরীরের কোষের প্রধান গঠন উপাদান হিসেবে কাজ করে। অতএব কোষের গঠন এবং নতুন কোষ তৈরিতে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে প্রোটিন নামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানটি।

ফ্যাট

আমাদের শরীরে এমন অনেক ভিটামিন রয়েছে যেগুলো শোষণ হওয়ার জন্য প্রয়োজন পড়ে ফ্যাট এর। যাকে বাংলাতে বলা হয় চর্বি। আর তাই এটিও আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি পুষ্টি উপাদান। আপনি যদি নিয়মিত ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি এবং ভিটামিন ই ও ভিটামিন কে গ্রহণ করে থাকেন আর পাশাপাশি  অবশ্যই আপনাকে গ্রহন করতে হবে চর্বি জাতীয় খাবার অর্থাৎ ফ্যাট। 

কেননা এক্ষেত্রে চর্বি জাতীয় খাবার না খেলে এই ভিটামিনসমূহ দেহের শোষণ হতে পারে না ফলে এদের থেকে যে উপকারিতা গুলো পাওয়া সম্ভব হয় সেগুলো থেকে আমরা বঞ্চিত হই স্বাভাবিকভাবেই। তাই যদি কেউ প্রয়োজনীয় এই ভিটামিন গুলো গ্রহণ করে থাকেন তাহলে অবশ্যই উপকারিতার কথা চিন্তা করে ফ্যাট জাতীয় খাবার গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। এখন আসুন জেনে নেই মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টস পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে।

২. মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস (Micronutrients)

পুস্টি কাকে বলে, পুষ্টি কত প্রকার ও কি কি, পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা কি কি, পুষ্টির গুরুত্ব,

মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টস হলো ঐ সকল পুষ্টি উপাদান যা আমাদের শরীরে স্বাভাবিক কার্যকারিতার জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে প্রয়োজন পড়ে। বলতে পারেন এর পরিমান খুবই সামান্য, তবে গুরুত্ব অনেক বেশি। যাই হোক মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টস পুষ্টি উপাদান গুলো হলো –

  • ভিটামিন 
  • খনিজ বা মিনারেল। 

ভিটামিন

মূলত ভিটামিন শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য প্রয়োজনীয় একটি মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টস পুষ্টি উপাদান। যা নিয়মিত গ্রহণের ফলে আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং রক্তে জমাট বাধা সমস্যার প্রতিরোধ হয়। সাধারণত ভিটামিন এ, সি, ডি, ই, কে এবং বি কমপ্লেক্স হল ভিটামিনের অন্যতম প্রধান উৎস। 

মিনারেলস

মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টস এর মধ্যে মিনারেলস অর্থাৎ যাকে আমরা বাংলায় খনিজ লবণ বলি এটি মূলত খুব স্বল্প পরিমাণে আমাদের দেহে প্রয়োজন হয়। যার ঘাটতি পূরণ করতে শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ায় যথেষ্ট। এছাড়াও বাজারে বিভিন্ন ভিটামিন মিনারেল সাপ্লিমেন্ট পাওয়া যায় যেগুলো খাওয়ার মাধ্যমেও মিনারেলস এর চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়। 

যাইহোক এই মাইক্রো নিউট্রিয়েন্স উপাদানটি আমাদের শরীরের গঠন এবং কার্যকারিতা রক্ষা করতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ক্যালসিয়াম, আইরন পটাশিয়াম সোডিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের মিনারেল। ঘাটতি পূরণের জন্য এবং শরীরে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কার্য সম্পাদনের জন্য নিয়মিত গ্রহণ করতে পারেন। 

আর হ্যাঁ, অনেকেরই প্রশ্ন থাকে আমাদের দেহে পুষ্টির গুরুত্ব বা পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা ঠিক কতটুকু! আমরা কেন সঠিক মাত্রায় পুষ্টি গ্রহণ করব? আসুন এ প্রশ্নের কনসেপ্ট ক্লিয়ার এর জন্য নিচের অংশটুকু উপরে নেওয়া যাক। 

পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা কি কি

পুস্টি কাকে বলে, পুষ্টি কত প্রকার ও কি কি, পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা কি কি, পুষ্টির গুরুত্ব,

পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা বোঝার জন্য শুধু একটা কথা বলব, সেটা হচ্ছে– শুধুমাত্র পুষ্টির ফলেই জেবের দেহ বৃদ্ধি পায়। অতএব জড় বস্তুর মত তা অপরিবর্তিত থাকে না। 

আপনি যদি একটু চিন্তা করেন তাহলে এটা বুঝতে পারবেন পোস্টটি জিবের সজীবতার অন্যতম প্রধান একটি লক্ষণ। পুষ্টিতে সরল যৌগ থেকে জটিল যোগ্য উৎপন্ন হয় আর এজন্যই বিজ্ঞানের ভাষায় একে গঠনাত্মক বিপাক বা উপচিতি বলা হয়ে থাকে। 

আমাদের শরীরে নানাবিধ পুষ্টির চাহিদা পূরণের প্রয়োজন পড়ে। কেননা এক একটি পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের জন্য এক এক কার্যপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকে। যেমন –

  • নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি গ্রহণের ফলে শারীরিক বৃদ্ধি সঠিকভাবে ঘটে 
  • কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পায় 
  • বিবেক-বুদ্ধির উন্নতি ঘটে 
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় 
  • সুস্বাস্থ্য এবং রোগমুক্ত জীবন গড়ে তোলা সম্ভব হয় 
  • জীবনীশক্তি ফিরে আসে। 

আর হ্যাঁ, মনে রাখবেন পুষ্টি শুধুমাত্র খাবারের মাধ্যমে আমাদের শরীরের শক্তি সরবরাহ করে এমনটা নয়। এটি শরীরের সার্বিক স্বাস্থ্য রক্ষায়ও অপরিহার্য ভূমিকা রাখে। সঠিক পুষ্টি গ্রহণ আমাদের দৈনন্দিন কাজের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয় মানসিক ও শারীরিক বিকাশের সহায়তা করে এবং বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে পুষ্টি শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

তো ফ্রেন্ডস, পুষ্টি কি, পুষ্টি কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি এটা জানার পর নিশ্চয়ই আপনার মনে প্রশ্ন জাগছে– পুষ্টির উৎস গুলো কি কি সে বিষয়ে জানার ব্যাপারে।

📌 আরো পড়ুন 👇

যদি তাই হয় তাহলে জেনে নিন পুষ্টির প্রধান উৎস সম্পর্কে। পাশাপাশি আরো জানুন পুষ্টির অভাবজনিত সমস্যা এবং সঠিকভাবে পুষ্টি গ্রহণের উপায় সম্পর্কে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। 

পুষ্টির প্রধান উৎস কি কি

পুষ্টি কাকে বলে, পুষ্টি কত প্রকার ও কি কি, পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা কি কি, পুষ্টির গুরুত্ব,

সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করতে আমাদের বিভিন্ন ধরনের খাদ্য গ্রহণের প্রয়োজন পড়ে। মূলত বিভিন্ন খাদ্য গ্রুপ থেকে পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় যা আমাদের শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য জরুরী। তাই নিচের খাবারগুলো নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন যেগুলো আপনার শরীরে পুষ্টির যোগান দেবে। 

  • দানাদার খাবার: চাল, গম, যব, ভুট্টা ইত্যাদি শস্যজাতীয় খাবার, যা আমাদের শরীরে কার্বোহাইড্রেট সরবরাহ করে । 
  • ফলমূল ও সবজি: ফলমূল ও সবজি ভিটামিন, মিনারেল, এবং ফাইবারের প্রধান উৎস। অতএব ফলমূল ও সবজি আমাদের শরীরে উল্লেখিত পুষ্টি উপাদান এর ঘাটতি পূরণ করে। 
  • প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার: মাংস, মাছ, ডিম, ডাল, এবং বাদাম প্রোটিনের ভাল উৎস, তাই এই ঘাটতি পূরণে নিয়মিত খেতে পারেন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার।
  • ডেইরি প্রোডাক্টস: দুধ, দই, পনির ইত্যাদি ডেইরি প্রোডাক্টস ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি এর সমৃদ্ধ উৎস। তাই যারা শরীরে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণ করতে তারা নিয়মিত গ্রহণ করুন এই খাবারগুলো। 

এসব ছাড়াও আপনি যদি পুষ্টির প্রধান উৎস হিসেবে অর্থাৎ কোন খাদ্য থেকে কোন কোন ভিটামিন বা কোন কোন পুষ্টি উপাদান গুলো পাওয়া যায়, এ ব্যাপারে আরো ক্লিয়ার ধারণা পেতে চান তাহলে youtube ভিডিও দেখুন কিম্বা সার্চ করুন গুগল ক্রোম ব্রাউজারে। 

পুষ্টির অভাবে কি কি হয়

পুষ্টি কাকে বলে, পুষ্টি কত প্রকার ও কি কি, পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা কি কি, পুষ্টির গুরুত্ব,

পুষ্টির অভাবজনিত বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। মূলত আমাদের শরীরে এক একটি পুষ্টির অভাবে একেক সমস্যা দেখা দেয়। আলোচনা সংক্ষিপ্ত রাখার তাগিদের শুধুমাত্র এটা বলছি যদি আপনার শরীরে পুষ্টির অভাব ঘটে সে ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত সমস্যাগুলো দেখা দেবে –

  • শারীরিক ও মানসিক বিকাশে ব্যাঘাত 
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস 
  • শক্তির অভাব বা দুর্বলতা 
  • ত্বক ও চুলের সমস্যা 
  • অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমে যাওয়া বা বৃদ্ধি পাওয়া 
  • হাড়ের সমস্যা 
  • হৃদরোগের ঝুঁকি 
  • অস্থির মানসিক অবস্থা 
  • অ্যানিমিয়া এবং 
  • বাচ্চা শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি হ্রাস পাওয়া সহ প্রভৃতি।

পুষ্টি সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নউত্তর

পুষ্টি উপাদান গুলো কি কি?

মানুষের জন্য, ৪০টি প্রয়োজনীয় পুষ্টি রয়েছে: ১৩টি ভিটামিন, ১৫টি খনিজ, ১০টি অ্যামিনো অ্যাসিড এবং ২টি চর্বি। ভিটামিনের মধ্যে রয়েছে চর্বি দ্রবণীয় ভিটামিন এ, রেটিনল, ভিটামিন ডি, কোলেক্যালসিফেরল, ভিটামিন ই, টোকোফেরল এবং ভিটামিন কে, ফাইটোমেনাডিওন। মূলত এই প্রত্যেকটিই হচ্ছে পুষ্টি উপাদান। 

পুষ্টি উপাদান কাকে বলে?

পুষ্টি উপাদান হচ্ছে এমন পদার্থ যা আমাদের শরীরে স্বাভাবিক বৃদ্ধির বিকাশ এবং সুস্থতার জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে থাকে। প্রোটিন কার্বোহাইড্রেট চর্বি হচ্ছে পুষ্টি উপাদান। আর এগুলোকেই পুষ্টি উপাদান বলে আখ্যায়িত করা হয়। 

অপুষ্টি কত প্রকার ও কি কি? 

পুষ্টি দুই প্রকার, মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট এবং ম্যাক্রনিউট্রিয়েন্ট। তো আপনি যদি অপুষ্টি কত প্রকার এটা জানতে চান তাহলে বলা যায় অপুষ্টিও দুই প্রকার। কেনোনা যখন এই পুস্তিগুলোর ঘাটতি থাকে তখনই সেটা অপুষ্টি বলে বিবেচিত হয়। 

পুষ্টি প্রোফাইল কাকে বলে?

পুষ্টি প্রোফাইল হল একটি খাবারের বা খাবারের উপাদানের পুষ্টি সংক্রান্ত তথ্যের সারাংশ। এতে সাধারণত খাবারের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান, যেমন প্রোটিন, শর্করা, ফ্যাট, ভিটামিন, মিনারেলস, এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়। যা স্বাস্থ্যকর খাদ্য নির্বাচন এবং আপনার দৈনন্দিন পুষ্টির চাহিদা পূরণে সাহায্য করে।

পুষ্টি ও অপুষ্টি কাকে বলে?

পুষ্টি হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান গুলো গ্রহণ করে এবং তাদেরকে শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রমের জন্য ব্যবহার করে থাকে। অন্যদিকে অপুষ্টি হচ্ছে সেটা যখন শরীর পর্যাপ্ত পুষ্প উপাদান গ্রহণ করতে পারে না বা কোন একটি পুষ্টি উপাদানের অভাব ঘটে। অতএব আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ও কার্যকরী উপাদান গুলো যখন পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে তখন সেটা পুষ্টি আর যখন এগুলোর ঘাটতি হয় তখন সেটাকে অপুষ্টি বলে। 

পুষ্টি সম্পর্কে আমাদের মতামত

এই ছিল পুষ্টি কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি এ সম্পর্কিত আমাদের আজকের আলোচনা। তো পাঠক বন্ধুরা, সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন।

পুষ্টি সম্পর্কে আপনাদের আর কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদেরকে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানান। এবং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এমন আরো শিক্ষামূলক আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।

Sharing is Caring

Leave a Comment