রাজনীতি কাকে বলে? রাজনীতির গুরুত্ব ও তাৎপর্য

5/5 - (1 vote)

রাজনীতি একটি বহুমুখী শব্দ। যে শব্দের সাথে আমরা ছোট থেকে বড় সবাই পরিচিত। শব্দতত্ত্ব দিক থেকে রাজনীতি সাধারণত নাগরিক সরকারের অনুরূপ কর্মকান্ডকে বুঝিয়ে থাকে। অন্যদিকে অন্যান্য অনেক সামাজিক প্রতিষ্ঠান যেমন– ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় কার্যালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানে মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বিদ্যমান সেখানেও রাজনীতির চর্চা হয়। 

এজন্য রাজনীতি কাকে বলে, কোথায় কোথায় রাজনীতির চর্চা হয়, রাজনীতির গুরুত্ব, রাজনৈতিক কাঠামোর পরিচয়, রাজনৈতিক দল ও তাদের কার্যক্রম, এমনকি বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক কাঠামো ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমরা আজকের এই নিবন্ধে আলোচনা করব। তাই রাজনীতি কাকে বলে এর যদি সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা বা সংজ্ঞা জানতে চান, তাহলে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

রাজনীতি কাকে বলে

রাজনীতি কাকে বলে, রাজনীতির গুরুত্ব ও তাৎপর্য

দলীয় বা নির্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে ক্ষমতার সম্পর্কের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ বিষয়ক কর্মকান্ডের সমষ্টিকে রাজনীতি বলে। রাজনীতিকে আরো কয়েকটি শব্দে চিহ্নিত করা যায়। সেগুলো হলো– রাষ্ট্রনীতি, রাজবুদ্ধি এবং রাজগতি। 

এছাড়াও বলা যায়– রাজনীতি হলো সমাজের নিয়ম কানুন, শাসন এবং নীতিমালা প্রণয়নের একটি প্রক্রিয়াকে, যা একটা সমাজ বা রাষ্ট্রকে পরিচালনা করার জন্য গঠিত হয়ে থাকে। এটি এমন একটা পদ্ধতি যেখানে সরকার ও জনসাধারণের মধ্যে একটি সম্পর্ক স্থাপিত হয়, সাধারণ জনগণের অধিকার ও দায়িত্ব নির্ধারণ হয় এবং ক্ষমতা ব্যবহারের নিয়ন্ত্রণ আলোকিত হয়। 

প্রাচীন ও আধুনিক দার্শনিকরা রাজনীতিকে নানাভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। যেমন অ্যারিস্টটল বলেছেন– মানুষের সর্বোত্তম জীবন যাপনের জন্য উপযুক্ত কার্যকলাপ হচ্ছে রাজনীতি। তার মতে রাজনীতি নৈতিকতা এবং ন্যায় বিচারের উপর ভিত্তি করে সমাজে একটি উত্তম জীবনযাত্রা প্রতিষ্ঠা করার একটি প্রক্রিয়া হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে। 

দার্শনিক প্লেটোর মতে রাজনীতি হচ্ছে সেই ব্যবস্থা যার মাধ্যমে শাসকগণ তাদের জ্ঞান ও গুণাবলীর ভিত্তিতে সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। তার আদর্শ রাষ্ট্রের ধারণা ছিল যে রাজনীতির মাধ্যমে শাসকগণকে শিক্ষিত করা উচিত যাতে তারা সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারেন ।

অন্যদিকে রাজনীতিবিদ ম্যাকিয়াভেলির মতামত থেকে এটা বলা হয়েছে– রাজনীতি হল ক্ষমতা দখল ও ধরে রাখার একটা কৌশল এবং সেই উদ্দেশ্য নৈতিকতা বা আদর্শিক বাধ্যবাধকতা প্রয়োজনীয় নয়। মূলত এই প্রত্যেকটি দার্শনিকদের কথায় বা গঙ্গায় এটা প্রকাশ পেয়েছে রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ন্যায়, নৈতিকতা ও সমাজের সকল মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করা। 

যদিও বা বর্তমান সময়ে রাজনীতি তার উদ্দেশ্যে পূরণে ব্যর্থ হওয়ার কারণে অন্য অর্থ বা অন্য সংজ্ঞা প্রদানে উপযুক্ত। যাইহোক এখন চলুন জেনে নেই রাজনীতির গুরুত্ব কতটুকু এবং বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক কাঠামো ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে।

রাজনীতির গুরুত্ব ও তাৎপর্য

রাজনীতি কাকে বলে, রাজনীতির গুরুত্ব ও তাৎপর্য

দেখুন রাজনীতি বলতে সাধারণত সেই সব নীতিকে বোঝায়, যেসব নীতি অনুসরণের মাধ্যমে একটি রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। এটি একটি সামাজিক প্রক্রিয়া বা কর্মযজ্ঞ, এর মাধ্যমে কিছু সংখ্যক ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত একটি দল যথার্থ পরামর্শের মাধ্যমে রাষ্ট্র বা দেশের কল্যাণে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন। মূলত নাগরিক সরকার পরিচালনাকে রাজনীতি বলা হয়। এ কারণেই গ্রীক দার্শনিক অ্যারিস্টোটল রাজনীতিকে শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান হিসেবে অভিহিত করেছেন। 

রাজনীতির গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেকটাই বিস্তৃত। কেননা সমাজ বা রাষ্ট্রের শাসন, ক্ষমতার বিতরণ ও নেতৃত্বের পদ্ধতি হচ্ছে রাজনীতি, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে। এর উদ্দেশ্য যদি আপনি জানতে পারেন তাহলে এটা বুঝতে পারবেন রাজনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে বিভিন্ন মতামত, ইচ্ছা ও প্রয়োজন এর মধ্যে সমানভাবে সাধন করা হয় এবং সমাজের শৃঙ্খলা বজায় রাখা সম্ভব হয়। 

রাজনীতির কারণে–

  • সামাজিক শৃঙ্খলা ও শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। যা সমাজের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখে এবং জনগণকে নিরাপদে ও শান্তিতে বসবাস করতে সহযোগিতা করে। 
  • রাজনীতি ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে এবং জনগণের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে ক্ষমতার সুষ্ঠু বন্টন নিশ্চিত করে, যা সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় সহায়ক। 
  • সঠিক রাজনৈতিক নেতৃত্বের মাধ্যমে একটি দেশ বা একই জাতির উন্নতির দিকে ধাবিত হতে পারে। মানে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটে ওই রাষ্ট্রের। 
  • রাজনীতি জনগণের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখতে ভূমিকা রাখে। তাই বলতে পারেন সামাজিক সংহতি ও ঐক্যের বিষয়ে রাজনীতির গুরুত্ব বিরাজমান। 
  • এছাড়াও রাজনীতি মানবাধিকার নিশ্চিত করে, স্বাধীনতা ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করে। পাশাপাশি একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় ছাড়াও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে রাজনীতি। 

এক কথায় – রাজনীতি সাধারণত মানুষের জীবনের প্রতিটি স্তরে প্রভাব ফেলে। তাই নিঃসন্দেহে এটা বলা যায় রাজনীতির গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। তবে এটা অবশ্যই দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে, কেননা বর্তমান সমাজব্যবস্থা এত বেশি খারাপ যে রাজনীতির নামে চলছে দুর্নীতি, রাহাজারি এবং নিজেদের সুবিধাভোগের অন্যতম সুব্যবস্থা। এখন যেন রাজনীতির বৈশিষ্ট্য মূলত কি কি!

রাজনীতির বৈশিষ্ট্য

রাজনীতি কাকে বলে, রাজনীতির গুরুত্ব ও তাৎপর্য, রাজনীতির বৈশিষ্ট্য,

রাজনীতির বৈশিষ্ট্য বলতে সাধারণত ওই সকল বিষয়কে বোঝায় যেগুলো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকে। যেমন:

  • ইতিহাস ও আদর্শবাদ 
  • নৈতিকতা এবং মূল্যবোধ 
  • কূটনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক 
  • নির্বাচন ও ভোটিং প্রক্রিয়া 
  • ক্ষমতা ও সরকার ব্যবস্থা 
  • অর্থনীতি ও উন্নয়ন নীতি 
  • আইন ও বিচার ব্যবস্থা 
  • সামাজিক নীতি সাংস্কৃতিক ধর্মীয় রীতিনীতি সহ প্রভৃতি। 

মনে রাখ, এগুলো বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিভিন্নভাবে প্রকাশ পেয়ে থাকে। আর হ্যাঁ, অনেকের প্রশ্ন থাকে রাজনীতির প্রকৃতি আলোচনার বিষয়। সাধারণত পরীক্ষার খাতায় এই প্রশ্নটি করা হয়ে থাকে। যদি অতি সংক্ষেপে নির্ভুল ও সুস্পষ্ট সমাধান উল্লেখ করতে চান তাহলে নিচের অংশটুকু পড়ুন। মন চাইলে আরো পড়তে এখনই ক্লিক করতে পারেন – রাষ্ট্রবিজ্ঞান কাকে বলে এই লিংকে।

রাজনীতির প্রকৃতি আলোচনা কর

রাজনীতি মানুষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। এর মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষ তাদের অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক চাহিদা পূরণের জন্য নেতৃত্ব, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, ক্ষমতার বিভাজন এবং সামাজিক সম্পদের বন্টন সম্পর্কিত কাজগুলো করতে পারে। রাজনীতি প্রকৃতি সম্পর্কে যদি আলোচনা করা হয় তাহলে নিমক্ত বিষয়গুলো প্রধান ভাবে উল্লেখযোগ্য। এগুলো হলো–

  • ক্ষমতা এবং কর্তৃত্ব 
  • সরকার ও নীতির নির্ধারণ 
  • সংঘর্ষ ও সমঝোতা 
  • আদর্শ ও মতবাদ 
  • আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট 
  • নৈতিকতা ও ন্যায় বিচার 

নিম্নে রাজনীতির বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

১. ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব

রাজনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ক্ষমতা অর্জন এবং তার কার্যকর ব্যবহার। ক্ষমতা সমাজের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যবহার করা হয় এবং এটি ব্যক্তিগত, গোষ্ঠীগত বা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে হতে পারে। রাজনৈতিক ক্ষমতা কর্তৃত্বের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যা জনগণের সম্মতি বা শক্তির মাধ্যমে প্রয়োগ করা যায়।

২. সরকার ও নীতিনির্ধারণ

রাজনীতি সমাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। সরকার রাজনৈতিক ক্ষমতার একটি কাঠামো, যা আইন প্রণয়ন, প্রশাসন পরিচালনা এবং বিচারিক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত। এর মাধ্যমে জনগণের চাহিদা মেটানোর জন্য বিভিন্ন নীতি ও আইন তৈরি হয়।

৩. সংঘর্ষ ও সমঝোতা

রাজনীতি প্রায়শই বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি করে, কারণ বিভিন্ন গোষ্ঠী তাদের নিজস্ব স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়। তবে, রাজনীতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সমঝোতা, যা সংঘর্ষ নিরসনের মাধ্যমে গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করে থাকে।

৪. আদর্শ ও মতবাদ

রাজনীতি বিভিন্ন আদর্শ ও মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত হয়, যেমন ধরুন – গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, কমিউনিজম, ফ্যাসিবাদ ইত্যাদি। আদর্শগুলোর উপর ভিত্তি করে রাজনীতিবিদরা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে, এবং তাদের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন পরিবর্তন সাধিত হয়।

৫. আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট

রাজনীতির প্রকৃতি শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ নয়, এটি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও প্রসারিত হয়। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মাধ্যমে দেশগুলো কূটনীতি, বাণিজ্য, যুদ্ধ বা শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিজেদের ভূমিকাগুলো নির্ধারণ করে থাকে।

৬. নৈতিকতা ও ন্যায়বিচার

রাজনীতি কেবল ক্ষমতার খেলাই নয়, বরং নৈতিকতা ও ন্যায়বিচারের উপরও ভিত্তি করে। একজন সঠিক রাজনীতিবিদ ক্ষমতার ব্যবহারকে নৈতিকতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সমাজের সেবা করার লক্ষ্যে কাজ করেন। অতএব রাজনীতিক প্রকৃতি জটিল, বহুমাত্রিক এবং পরিবর্তনশীল। এটি যেমন একদিকে ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের খেলা দেখিয়ে চলে ঠিক একইভাবে অন্যদিকে নীতি নির্ধারণ ও সমাজ পরিচালনার প্রক্রিয়াকে ত্বরণ্বিত করে। 

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতির অবস্থা 

বাংলাদেশের রাজনীতিতে দু’ধরনের কাঠামোর উপস্থিতি বিরাজমান। একটি পক্ষ সংখ্যায় কম হলেও দলের রাজনৈতিক-আদর্শিক চেতনায় অটুট থেকে রাজনীতির চর্চা করছে আর অন্য পক্ষ এর সম্পূর্ণ বিপরীত। এরা দলীয় আদর্শের ধারেকাছে না থেকে শুধু দলে নাম লেখাতে পারলেই নিজেদের ধন্য মনে করে। বলতে পারেন ২০২৪ সালে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেশ উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। 

একটু লক্ষ্য করলে দেখবেন দলের বিভিন্ন স্তরে নতুন নেতৃত্ব আসা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলেও গুরুত্বপূর্ণ পদে যারা আসীন হবে, তাদের সেসব পদে নেতৃত্বদানের যোগ্যতা, ক্ষমতা ও দক্ষতা থাকাও আবশ্যক। একটি রাজনৈতিক দলের আদর্শ বা কর্মকাণ্ডে বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ত না থাকা সত্ত্বেও অনেকেই ওই দলের নীতিনির্ধারণীসহ গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়ে যান। প্রকৃত অর্থে জ্ঞান, নীতি-নৈতিকতা, সততা ও দেশপ্রেমের অনন্য প্রতীক হিসাবে যারা পরীক্ষিত; তাদের মূল্যায়ন অধিকাংশ ক্ষেত্রে চরমভাবে উপেক্ষিত হয় বাংলাদেশের রাজনীতি প্রেক্ষাপটে।

ব্যক্তিস্বার্থে নিয়োজিত কদর্য চরিত্রের বর্ণচোরা, অনুপ্রবেশকারী বা আপসকামিতায় পারদর্শী কথিত রাজনীতিকের ছত্রছায়ায় এ প্রকৃতির ব্যক্তিরা রাজনীতি করার পরিবর্তে মূলত দল করার রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এরা অনৈতিক রাজনৈতিক শক্তিকে ব্যবহার করে দ্রুততার সঙ্গে অবৈধ ব্যবসা ও সম্পদ অর্জনের জন্য পেশি, তদবির ও নানামুখী অপতৎপরতার মাধ্যমে রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে ব্যাপকভাবে কলুষিত করে চলেছে।

যদিও বা সম্প্রতি স্বৈরাচারি সরকারের পতন ঘটেছে এবং ক্ষমতায় এসেছে নতুন জন। এখন দেখার বিষয় বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতির অবস্থা পূর্বের অবস্থাতেই বিরাজমান থাকবে নাকি এর পরিবর্তন হবে। যদি পরিবর্তন হয় তাহলে আশা করা যায় রাজনীতির যে লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য রয়েছে এবং রাজনীতির পেক্ষাপট থেকে যে সকল রাজনৈতিক কাঠামো বা ব্যবস্থাপনা থাকা জরুরি সেটাই হবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। 

রাজনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা করো

দেখুন এটা আমরা সবাই জানি– রাজনীতি হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে কোনো সমাজ বা রাষ্ট্রের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ক্ষমতার বণ্টন হয়। এটি জনগণের মধ্যে মতবিনিময়, আইন প্রণয়ন, ও শাসন ব্যবস্থার পরিচালনার মাধ্যমে সংঘটিত হয়। রাজনীতি সাধারণত বিভিন্ন দল, গোষ্ঠী বা ব্যক্তির মধ্যে ক্ষমতা অর্জন, ব্যবহার ও বিতরণের জন্য পরিচালিত হয়।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান হলো রাষ্ট্র, সরকার, এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মত বিশ্লেষণ। এটি রাষ্ট্রের কাঠামো, কার্যকারিতা, আইন ও শাসনপ্রণালী নিয়ে আলোচনা করে। আর এর উপর ভিত্তি করে বলা যায়– রাজনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। 

📌 আরো পড়ুন 👇

কেননা রাজনীতি রাষ্ট্রের কার্যপ্রণালীকে পরিচালিত করে, আর রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাজনীতি কীভাবে পরিচালিত হয় এবং তার ফলাফল কী হতে পারে, তা বিশ্লেষণ করে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাজনীতির তাত্ত্বিক দিকগুলো যেমন: গণতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, শক্তি-বণ্টন, এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করে। রাজনীতি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বাস্তব প্রয়োগ যা রাষ্ট্রের সুশাসন নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। 

রাজনীতি সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নউত্তর

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট কাকে বলে? 

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট হচ্ছে একটি দেশের বা অঞ্চলের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও অবস্থা, যার মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য, রাজনৈতিক দল বা নেতাদের ভূমিকা ও সরকারের নীতি অন্তর্ভুক্ত থাকে।

রাজনৈতিক তত্ত্ব কি?

রাজনৈতিক তত্ত্ব হচ্ছে বিভিন্ন ধারণা ও মতবাদ গুলির ওপর ভিত্তি করে সরকার ক্ষমতা স্বাধীনতা এবং ন্যায় বিচারের বিষয়গুলো নিয়ে যে গবেষণা করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়– গণতন্ত্র সমাজতন্ত্র এবং উদারনীতিবাদ হচ্ছে রাজনৈতিক তত্ত্বের অন্তর্ভুক্ত অংশ।

রাজনৈতিক ব্যবস্থা কাকে বলে? 

রাজনৈতিক ব্যবস্থা এমন একটি কাঠামো, যা একটি দেশ বা সমাজের সরকার ও জনগণের মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণ করে। অতএব যে কাঠামোর মাধ্যমে একটি দেশ বা সমাজে সরকার ও জনগণের মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারিত হয় তাই হচ্ছে রাজনৈতিক ব্যবস্থা। 

রাজনৈতিক ইতিহাস কাকে বলে? 

অতীতে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনার ক্রমবিকাশ এবং কিভাবে এই ঘটনাগুলো বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে প্রভাবিত করেছে তাই নিয়ে গবেষণায় হচ্ছে রাজনৈতিক ইতিহাস। 

রাজনৈতিক কাঠামো কাকে বলে? 

একটি দেশের সরকার পরিচালনার পদ্ধতি এবং প্রশাসনিক সংস্থার গঠনকে রাজনৈতিক কাঠামো বলা যায়। মূলত সংসদীয়, রাষ্ট্রপতি শাসিত বা ফেডারেল কাঠামো হচ্ছে রাজনৈতিক কাঠামোর অংশ। 

রাজনৈতিক অর্থনীতি বলতে কী বোঝায়?

অর্থনৈতিক নীতি ও রাজনৈতিক কাঠামোর সম্পর্ক নিয়ে যেখানে গবেষণা করা হয় এবং অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রভাবিত হয় রাজনৈতিক প্রভাব ও সামাজিক পরিস্থিতি দ্বারা তাকে রাজনৈতিক অর্থনীতি বলে। 

রাজনীতি সম্পর্কে আমাদের মতামত

তো পাঠক বন্ধুরা, রাজনীতি কাকে বলে এই ছিল আমাদের আজকের আলোচনা। আশা করছি এটা সুস্পষ্ট রাজনীতি একটা দেশের কাঠামো এবং সমাজের ওপর প্রভাব ফেলে। আরে তুই কেমন প্রভাব ফেলে তাতো বুঝতে পারছেন। আশা করছি এটা বোধগম্য হয়েছে দেশ সমাজ এবং জনগণের বিকাশের জন্য একটা সুশৃংখল এবং স্বচ্ছ রাজনৈতিক কাঠামোর প্রয়োজন। আর আমরা ধীরে ধীরে সেটা আয়ত্ত করতে পারব। 

রাজনীতি সম্পর্কে আপনাদের আর কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদেরকে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানান। এবং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এমন আরো শিক্ষামূলক আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।

Sharing is Caring

Leave a Comment