প্রিয় পাঠক, শিলা কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি উদাহরণসহ জানতে চান? আপনি যদি শিলা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়লেই শিলা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা অর্জন করতে পারবেন।
যে সব উপাদান দ্বারা ভূ-ত্বক গঠিত হয় তাকে শিলা বলা হয়। শিলা প্রাকৃতিকভাবে শক্ত পদার্থ দিয়ে গঠিত হয়, যা প্রকৃতপক্ষে একাধিক খনিজ পদার্থের সমষ্টি। ভূতত্ত্ব ইতিহাসের সাক্ষী এবং ভূতত্ত্বের মূল উপাদানই হলো এই শিলা। ভূপৃষ্ঠ বিভিন্ন ধরনের উপাদান দ্বারা তৈরি হয় যার কিছু জায়গা কোমল, কিছু জায়গা শক্ত, কিছু জায়গা কর্দমাক্ত, আবার কিছু জায়গা বালুকাময় মরুভূমি।
জীবন্ত গাছপালার মৃতদেহ এসব উপাদানের সাথে মিশ্রিত হয়েই শিলা গঠিত হয়ে থাকে। নিচে আমরা শিলা কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি উদাহরণসহ বিস্তারিত আলোচনা করব।
শিলা কাকে বলে
খনিজ এবং প্রাকৃতিক উপায়ে মিলেমিশে যে পদার্থ তৈরি হয় তাকে শিলা বলা হয়। অতিমাত্রায় সূক্ষ্ম বালু কনা থেকে শুরু করে নরম কাদা এবং কঠিন পাথর কেও শিলা বলা হয়ে থাকে। অন্যভাবে বলতে গেলে, এক বা একাধিক খনিজ একত্রিত হয়ে যে বস্তু তৈরি হয় তাকে শিলা বলা হয়। খনিজের এই মিশ্রণ সর্বদা প্রাকৃতিক অবস্থাই পাওয়া যায়।
সেক্ষেত্রে খনিজ এবং শিলা একই পদার্থ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। পৃথিবীর বাইরে শক্ত এবং পুরু স্তর বেশিরভাগই শিলা দ্বারা গঠিত। খনিজ পদার্থের দানা দিয়ে এই শক্ত এবং নরম শিলা গুলো তৈরি হয়।
শিলা কত প্রকার ও কি কি
ভূতত্ত্ব যে সব শিলা দ্বারা গঠিত তার কোনোটি কাদার মতো নরম এবং কোনোটি গ্রানাইট পাথরের মতো শক্ত। তবে শক্ত হোক আর নরম, সকল ধরনের শিলায়ই প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট। উৎপত্তির দিক দিয়ে শিলাকে প্রধানত ৩ টি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। সেগুলো হলো:
- আগ্নেয় শিলা,
- পাললিক শিলা,
- রূপান্তরিত শিলা।
নিচে শিলার শ্রেণীবিভাগ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
১)আগ্নেয় শিলা
আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের সময় উত্তপ্ত গলিত লাভা পরবর্তীতে ঠান্ডা হয়ে যে শিলার সৃষ্টি হয় তাকে আগ্নেয় শিলা বলা হয় পৃথিবীর আদিম অবস্থায় উত্তপ্ত এবং গলিত লাভা ই হলো আগ্নেয় শিলা।
আগ্নেয় শিলার বৈশিষ্ট্য
আগ্নেয় শিলার বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিম্নে বর্ণনা করা হলো:
- আগ্নেয় শিলা অধিক তাপমাত্রা থেকে সৃষ্টি হয় বলে এর মধ্যে কোন জীবাশ্ম নেই,
- আগ্নেয় শিলা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কাঁচের মতো দেখতে হয়,
- এই শিলাটি অন্যান্য শিলা তুলনায় ভারী এবং স্তর বিহীন হয়ে থাকে।
২)পাললিক শিলা
যখন ছোট ছোট কণা একত্রে জমে এবং কয়েকশো বছর পর পৃথিবীর পৃষ্ঠ,স মুদ্রতল বা জলের অন্যান্য দেহের খনিজ দ্বারা সংযোজন হয়ে গঠিত হয় তখন তাকে পাললিক শিলা বলে। পৃথিবীর বর্তমান স্থল পৃষ্ঠের ৭৩ শতাংশ পাললিক শিলা দ্বারা গঠিত। এবং মোট ভূত্বকের ৮% জুড়ে পাললিক শিলা রয়েছে বলে অনুমান করা হয়।বালি, পলি এবং কাঁদা দিয়ে এই শিলা তৈরি হয় বলে এর নাম পাললিক শিলা।
রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে সব পাললিক শিলার তৈরি হয় তা হল: চুনাপাথর, ডোলোমাইট, লবণ ইত্যাদি। জৈবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেসব পাললিক শিলা তৈরি হয় তা হল: কয়লা এবং চুনা পাথর। যান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেসব পাললিক শিলা তৈরি হয় তা হল: নুড়িপাথর, বেলে পাথর, পলি পাথর ইত্যাদি। পাললিক শিলার বৈশিষ্ট্যগুলো হল:
পাললিক শিলার বৈশিষ্ট্য
পাললিক শিলার বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিম্নে বর্ণনা করা হলো:
- পাললিক শিলা কয়েকটি স্তরে তৈরি হয়ে থাকে। বিভিন্ন স্তর জমে জমেই এই শিলার উৎপত্তি।
- পাললিক শিলায় বিভিন্ন প্রকার জীবাশ্মা পাওয়া যায়।
- শিলাটি বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে, তবে এর রং সাধারণত নির্ভর করে খনিজ পদার্থের উপস্থিতি এর উপর।
- অন্যান্য শিলার তুলনায় পাললিক শিলা নরম এবং ভঙ্গুর প্রকৃতির হয়ে থাকে।
৩)রূপান্তরিত শিলা
পাললিক ও আগ্নেয় শিলার পরিবর্তিত রূপকে রূপান্তরিত শিলা বলে। পৃথিবীর ভূগর্ভস্থ উচ্চ তাপমাত্রা এবং চাপের প্রভাবে আগ্নেয় এবং পাললিক শিলা থেকে যে নতুন শিলার সৃষ্টি হয় তাকে রূপান্তরিত শিলা বলে। রূপান্তরিত শিলার আকার, আয়তন এবং বিন্যাস নির্ভর করে ভূত্বকের গভীরে চাপ ও তাপ এর প্রভাবের উপর।
রূপান্তরিত শিলার প্রধান উদাহরণ গুলো হল: মার্বেল, স্লেট, কোয়ার্টজাইট ইত্যাদি। মার্বেল এবং গ্রানাইট দিয়ে যেসব ভবন তৈরি করা হয় তা তৈরি করতে রূপান্তরিত শিলার প্রয়োজন হয়। এছাড়া মূর্তি এবং শিল্পজাত পণ্য তৈরি করতে রূপান্তরিত শিলার প্রয়োজন।
রূপান্তরিত শিলার বৈশিষ্ট্য
রূপান্তরিত শিলার বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে নিম্নে সে সকল বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো:
- রূপান্তরিত শিলা বেশ কঠিন প্রকৃতির হয়ে থাকে।
- রূপান্তরিত শিলা ও অধিক তাপ থেকে সৃষ্ট হয়, ফলে এখানে ও জীবাশ্ম পাওয়া যায় না।
- রূপান্তরিত শিলার কয়েকটি স্তর থাকে।
- রূপান্তরিত শিলা কেলাসিত হয় বলে একে পাললিক শিলা থেকে পৃথক করা সম্ভব।
- রূপান্তরিত শিলার উপাদান গুলো সমান্তরাল থাকে ফলে অন্যান্য শিলা থেকে একে সহজেই আলাদা করা যায়।
- রূপান্তরিত শিলা সাধারণত তাপ, চাপ ও রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে এর খনিজ উপাদান এবং বুনোটের মাধ্যমে পরিবর্তন হয়ে থাকে।
📌 আরো পড়ুন 👇
শিলা সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নউত্তর
স্তরীভূত শিলা কি কি?
পলি দীর্ঘদিন ধরে সঞ্চিত হয়ে সাগর-মহাসাগরের তলদেশে প্রস্তরীভূত হতে হতে স্তরীভূত শিলা তৈরি হয়। এই স্তরীভূত শিলার অপর নাম পাললিক শিলা।
পাললিক শিলা কিভাবে গঠিত হয়?
সাধারণ পৃষ্ঠের তাপমাত্রায় দ্রবণ থেকে পাললিক শিলা গঠিত হয়। তাছাড়া পৃথিবীপৃষ্ঠে বা তার কাছাকাছি পলি জমা হতে হতেও পাললিক শিলা গঠিত হয়।
পাললিক শিলার অপর নাম কি?
এই শিলার ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো sedimentary rock। পাললিক শিলা শব্দটি ল্যাটিন শব্দ sedimentum থেকে উৎপন্ন হয়েছে। sedimentum এর বাংলা শব্দ হলো অধঃক্ষেপণ।
পাললিক শিলা কোথায় পাওয়া যায়?
পৃথিবীর বর্তমান ভূপৃষ্ঠের প্রায় ৭৩ শতাংশ পাললিক শিলা দ্বারা গঠিত। কিন্তু ভূত্বকের আয়তন অনুযায়ী এর পরিমাণ মাত্র ৮ শতাংশ। আগ্নেয় এবং রূপান্তরিত শিলা দ্বারা গঠিত ভূত্বকের উপর একটি পাতলা আবরণ হল এই পাললিক শিলা। সুতরাং পৃথিবীর ভূত্বকের প্রায় সব স্থানেই পাললিক শিলার দেখা মেলে।
কয়লা কি ধরনের শিলা?
কয়লা এক ধরনের পাললিক শিলা যা প্রচুর পরিমাণে জৈব পদার্থে ভরপুর। কয়লা প্রধানত অক্ষত জৈব পদার্থ দিয়ে তৈরি হয়।
শিলা সম্পর্কে আমাদের মতামত
আমাদের আজকের সম্পূর্ণ আর্টিকেল জুড়ে আমরা শিলা কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি, শিলার বৈশিষ্ট্য, রূপান্তরিত শিলা কাকে বলে, আগ্নেয় শিলা কাকে বলে, পাললিক শিলা কাকে বলে ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
এরকম তথ্যবহুল আরো আর্টিকেল পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। এবং শিলা সম্পর্কে আপনাদের যদি কোন মতামত থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্ট বক্সে জানান।