সমাজ কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি

5/5 - (1 vote)

মানুষ সমাজবদ্ধ জীব, একসঙ্গে বসবাস করাই মানুষের ধর্ম। এ কারণে সমাজকে বলা হয় মানুষের একটি সাংগঠনিক প্রক্রিয়া।

আজকের আর্টিকেলে আমরা সমাজ কি, সমাজ কাকে বলে এবং সমাজ কত প্রকার ও কি কি সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করব। যাতে করে সমাজ এবং সামাজিকতা, সেই সাথে সমাজের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আপনার পূর্ণাঙ্গ ধারণা থাকে। তাই এ ব্যাপারে আগ্রহী হলে বিস্তারিত পড়ুন। 

সমাজ কাকে বলে

সমাজ কাকে বলে, সমাজ কত প্রকার ও কি কি, সমাজের বৈশিষ্ট্য কি কি, সমাজের গুরুত্ব,

সমাজ হচ্ছে একটি ব্যবস্থা, যেখানে একাধিক চরিত্র একত্রে কিছু নিয়ম কানুন প্রতিষ্ঠা করে বসবাসের উপযোগী পরিবেশ গড়ে তোলে। তাছাড়াও বলা যায়, একাধিক ব্যক্তি নিজেদের ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য যখন সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে বসবাস করে তখন তাকে সমাজ বলে। ইতোমধ্যে সমাজবিজ্ঞানীরা সমাজকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন–

সমাজবিজ্ঞানী জিসবার্গ এর মতে, সমাজ হল সামাজিক সম্পর্কের একটি বন্ধন যার দ্বারা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের সাথে পরস্পর সংযুক্ত থাকে।

আরেকজন বিখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী ওয়েস্টার্ন মার্ক এর মতে, সমাজ বলতে বোঝায় এমন একদল ব্যক্তির সমষ্টি যারা পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে জীবন-যাপন করে। 

আপনি যদি নিজের মতো করে এ টাকাই সাজিয়ে বলেন তাহলে বলা যায়– সমাজ হল মানুষের একটি সংগঠিত কাঠামো যেখানে নিয়ম, আচার এবং সম্পর্কের ভিত্তিতে বিশাল সংখ্যক মানুষ একত্রে বসবাস করে। এটি একটি সুসংবদ্ধ গোষ্ঠী যেখানে মানুষরা একে অপরের সাথে যোগাযোগ রাখে, এখনো কি সহযোগিতা করে এবং নিজেদের ভালো থাকার জন্য নিজেদের উন্নয়নের জন্য কাজ করে। 

সমাজ এমন একটি সংস্কৃতি গত এবং সামাজিক কাঠামো হিসেবে অবস্থান করে, যা মানুষের আচরণ এবং ক্রিয়া-কলাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।

সমাজ কত প্রকার ও কি কি

সমাজ এমন একটি সংগঠিত গোষ্ঠী, যেখানে এক বা একাধিক মানুষের মধ্যে সম্পর্ক থাকে এবং তারা একসঙ্গে বসবাস করে, কাজ করে, এমনকি পরস্পরের সাথে একটা সুন্দর যোগাযোগ স্থাপনা করে থাকে। সমাজের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সম্পর্ক বিরাজ করে, সামাজিক নিয়ম রীতিনীতি বিরাজ করে এবং সমাজের নির্দিষ্ট কিছু কাঠামো থাকে।

যেগুলোর প্রত্যেকটি জীবনকে ভালোভাবে পরিচালিত করার জন্য সহায়ক। আর এই সমাজকে সাধারণত একাধিক ভাগে ভাগ করা যায়। এর নির্দিষ্ট কোন প্রকারভেদ নেই। সাধারণত কি কি ভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে সমাজকে বোঝার সুবিধার্থে নিচের অংশটুকু পড়ুন। যথা –

১. প্রাথমিক সমাজ

সমাজ কাকে বলে, সমাজ কত প্রকার ও কি কি, সমাজের বৈশিষ্ট্য কি কি, সমাজের গুরুত্ব,

যে ধরনের সমাজে ব্যক্তিরা খুব ঘনিষ্টভাবে একে অপরের সাথে সম্পর্কিত থাকে। পরিবার, নিকট আত্মীয় এবং বন্ধুবান্ধব 

২. দ্বিতীয়ক সমাজ অর্থাৎ সেকেন্ডারী সোসাইটি

যে ধরনের সমাজে সদস্যদের সম্পর্ক বেশি আনুষ্ঠানিক এবং অবিচ্ছিন্ন হয়। যেমন– অফিস, স্কুল, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদ। 

৩. তাত্ত্বিক সমাজ

যে সমাজে সদস্যদের সম্পর্ক তত্ত্বগত বা চিন্তাভাবনার মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। যেমন বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং একাডেমিক প্রতিষ্ঠানের সমাজ ব্যবস্থাপনা। 

৪. আর্থসামাজিক সমাজ

সমাজ কাকে বলে, সমাজ কত প্রকার ও কি কি, সমাজের বৈশিষ্ট্য কি কি, সমাজের গুরুত্ব,

এটি এমন সমাজ যেখানে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অবস্থান ও সম্পর্ক ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন শ্রেণীর জাতি এবং সামাজিক স্তরভুক্ত সমাজ হচ্ছে এর অন্তর্ভুক্ত। 

৫. গ্লোবাল সোসাইটি অর্থাৎ গ্লোবাল সমাজ

সমাজ কাকে বলে, সমাজ কত প্রকার ও কি কি, সমাজের বৈশিষ্ট্য কি কি, সমাজের গুরুত্ব,

যেটি একটি বৃহৎ পরিসরের সমাজ যেখানে বিভিন্ন দেশের মানুষ একে অপরের সাথে যোগাযোগ ও পারস্পরিক সম্পর্ক রাখে। উদাহরণ হচ্ছে আন্তর্জাতিক সংস্থা বা গ্লোবাল কমিউনিটি। 

এছাড়াও প্রকৃতি অনুযায়ী সমাজকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন–

  • প্রাকৃতিক সমাজ এবং 
  • মানবিক সমাজ 

অন্য দিকে সংগঠন অনুযায়ী সমাজকে আরো দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা –

  • আনুষ্ঠানিক সমাজ 
  • অনানুষ্ঠানিক সমাজ 

বাস্তব অবস্থান অনুযায়ী আবার সমাজকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। সেগুলো হলো–

  • গ্রামীণ সমাজ এবং 
  • শহুরে সমাজ 

আবার সংস্কৃতির উপর ভিত্তি করে সমাজকে ধর্মীয় সমাজ বহু জাতির সমাজ এ বিভক্ত করা হয়। পাশাপাশি আরও আছে সম্পর্কের ধারণা অনুযায়ী সমাজের প্রকার। এক্ষেত্রে পারিবারিক সমাজ এবং সম্প্রদায় ভিত্তিক সমাজ এই দুইটি প্রকারভেদ বিদ্যমান। এখন আসুন সমাজের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা নেওয়া যাক। 

সমাজের বৈশিষ্ট্য কি কি

সমাজ কাকে বলে, সমাজ কত প্রকার ও কি কি, সমাজের বৈশিষ্ট্য কি কি, সমাজের গুরুত্ব,

প্রাচীনকাল থেকে বিবর্তনের ধারায় স্বাভাবিকভাবে সমাজের মধ্যে বিভিন্ন পরিবর্তন সাধিত হয় এবং সমাজ ব্যবস্থা আধুনিক থেকে আধুনিকতর হয়ে ওঠার রাস্তায় ধাবিত হয়। যাইহোক সমাজ কাকে বলে এটা আমাদের কাছে জানা। কিন্তু সমাজের বৈশিষ্ট্য কি? এক্ষেত্রে আপনি যে বৈশিষ্ট্যগুলো নজরে রাখতে পারেন সেটা হচ্ছে–

সমাজ পরিবর্তনশীল

মানে পরিবর্তনশীলতা সমাজের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। কেননা সময় যত এগিয়ে চলছে সমাজের পরিবর্তনও ততো দ্রুত সংঘটিত হচ্ছে। 

সামাজিক বন্ধন 

সমাজের আরেকটি বৈশিষ্ট্য সামাজিক বন্ধন। আমরা জানি মানুষ সমাজবদ্ধ জীব আর সমাজের বৈশিষ্ট্য সামাজিক বন্ধনের মাধ্যমে ফুটে ওঠে। 

সমাজ বহুমুখীনতা

সমাজের মধ্যে অবস্থিত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে পারস্পরিক সুসম্পর্ক এবং পারস্পরিক ক্রীড়া প্রতিক্রিয়া বজায় রাখার ক্ষেত্রে বহু মুখিনতা একটি বিশেষ বিষয়। অতএব এটিও সমাজের একটি বৈশিষ্ট্য। 

আধুনিক সমাজ

এছাড়াও আধুনিক সমাজের আরেকটি বৈশিষ্ট্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং জীবন ধরার মানের পরিবর্তন। কেননা পরিবর্তনের সাথে মানুষের পরিবর্তন বা মানুষের জীবনধারার পরিবর্তন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

আদর্শ সমাজ কাকে বলে ও বৈশিষ্ট্য 

আদর্শ সমাজ বলতে এমন একটি সমাজকে বোঝানো হয় যার নৈতিক ও সামাজিক দিক থেকে উন্নত এবং উন্নত জীবন যাপনের জন্য উপযুক্ত। আদর্শ সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বৈশিষ্ট্য হচ্ছে–

  • এটি সামাজিক ন্যায় বিচারের উদ্বুদ্ধ 
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে সক্ষম 
  • নৈতিক ধর্মীয় মূল্যবোধ মেনে চলার নিয়ম রয়েছে 
  • অর্থনৈতিক সমতা বিদ্যমান অর্থাৎ বৈষম্যহীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে প্রতিটি ব্যক্তির মৌলিক চাহিদা পূরণ হয় এবং তাদের জন্য কর্মসংস্থান ও সচ্ছলতার সুযোগ তৈরি করা 
  • সমাজে সৃজনশীলতা ও নতুনত্বকে উৎসাহিত করা আইন-শৃঙ্খলা বিরাজ এবং পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন বিদ্যমান। 

আর হ্যাঁ, সচরাচর খুবই কমন প্রশ্ন করা হয় সামাজিক উপাদান কয়টি ও কি কি! 

সামাজিক উপাদান কয়টি ও কি কি 

সামাজিক উপাদানের নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা নেই। তবে আমার মতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চারটি সামাজিক উপাদান  হলো–

  • পরিবার 
  • বিদ্যালয় 
  • খেলার সঙ্গী এবং
  • সংঘ 

তবে এর পাশাপাশি সামাজিক উপাদান হিসেবে আরো বেশ কিছু নাম সংযুক্ত করা যায় এই তালিকায়। যেমন আত্মীয়-স্বজন, বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, অর্থনীতি, সুষ্ঠু পরিবেশ আইন ও নীতি ইত্যাদি।

সমাজের উৎপত্তি এবং ব্যবহার

সোসাইটি শব্দটি ইংরেজি, যেটা দ্বাদশ শতাব্দীর ফরাসি শব্দ থেকে এসেছে। এর অর্থ হচ্ছে সংগ। পরবর্তীতে এটি পালক্রমে ল্যাটিন শব্দ থেকে পরিবর্তিত হয়ে নতুন শব্দে উদ্ভূত হয়। যার অর্থ এমন দাঁড়ায় নাগরিকদের মধ্যে এক প্রকার বন্ধন বা বন্ধুত্বপূর্ণ মিথস্ক্রিয়া। আপনি যদি একটু গভীরভাবে চিন্তা করেন তাহলে বুঝতে পারবেন সমাজ শব্দটি সমগ্র মানবতাকে নির্দেশ করতে পারে। এর উৎপত্তি ইতিহাস অনেকটাই পুরনো। 

যাই হোক এই সমাজের ব্যবহারিক উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পরিবার স্কুল বা স্থানীয় সম্প্রদায় এর নাম। এর পাশাপাশি আপনি অনেক কিছু বিষয়ে সংযুক্ত করতে পারবেন যদি সমাজের সংজ্ঞা এবং বৈশিষ্ট্য গুলো ঠিকঠাকভাবে বুঝে উঠতে পারেন। যাইহোক জানার জন্য এবং বোঝার সুবিধার্থে আরো পড়ুন সমাজ এবং সামাজিকতার মধ্যে সম্পর্ক কি আর সমাজের গুরুত্ব কি।

সমাজের গুরুত্ব 

সমাজ মানব জীবনের অপরিহার্য একটি উপাদান। কেননা এটি ব্যক্তির পরিচয় উন্নয়ন এবং জীবনধারার মূল ভিত্তি বলা যায়। সমাজ ছাড়া ব্যক্তি পূর্ণতা পায় না এটা আমরা প্রত্যেকে জানি। কেননা একটা সমাজের মাধ্যমে মানুষ শিক্ষা, মূল্যবোধ নিয়মকানুন শিখে এবং সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য গুলো অনুসরণ করতে শুরু করে। যদি বলেন সমাজের গুরুত্ব কি তাহলে বলবো–

  • সামাজিক সম্পর্ক গড়ে ওঠা
  • নিয়ম-নীতি ও আইন প্রতিষ্ঠা হওয়া
  • সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষা 

ইত্যাদি নানা বীদ গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদনের জন্যই সমাজের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে আমাদের সমাজে সাধারণত বৈষম্য বেকারত্ব এবং অপরাজজনিত সমস্যা দেখা দেয়। যেগুলো সমাজের ভিত্তি নষ্ট করতে পারে। তবে সচেতনতা এবং সঠিক আইনের মাধ্যমে এগুলো নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা সম্ভব হয়। 

আর হ্যাঁ, সমাজ এবং সামাজিকতার মধ্যে একটা সম্পর্ক রয়েছে। সমাজ কাকে বলে এটা আমরা জানি কিন্তু আপনি কি জানেন সামাজিকতা কি? সামাজিকতা বলতে মানুষের মধ্যে সম্পর্ক ও আচরণের একটি নিয়মাবলী বা প্রক্রিয়াকে বোঝানো হয়, যা সমাজের সদস্যদের একে অপরের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে সাহায্য করে।

📌 আরো পড়ুন 👇

এটি অন্তর্ভুক্ত করেন নৈতিকতা নিয়ম আচরণবিধি এবং সামাজিক সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ। যেগুলোর প্রত্যেকটি সমাজের মানুষের মধ্যে সমন্বয়ে এবং সহযোগিতা নিশ্চিত করে। 

সমাজ সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নউত্তর 

আদর্শ সমাজ কাকে বলে? 

যে সমাজে সব সব ধরনের মানুষের জন্য মৌলিক অধিকার, ন্যায় ও সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হয় তাকে আদর্শ সমাজ বলে।

সমাজবিদ্যা বলতে কি বোঝ?

সমাজবিদ্যা একটি সামাজিক বিজ্ঞান, যা সমাজ এবং মানুষ সম্পর্কের বিশ্লেষণ ও অধ্যায়ন করে। এটি বিভিন্ন সামাজিক গঠন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে এবং আচরণের প্যারটন বুঝতে সাহায্য করে। সমাজ বিদ্যা বলতে আমরা সমাজ সম্পর্কে জানার জন্য বোঝার জন্য যে আলোচনা বা জ্ঞানের ব্যবস্থা করা হয়েছে তাকেই বুঝি। 

সমাজতত্ত্ব বা সমাজবিজ্ঞানের জনক কে?

সমাজতত্ত্ব বা সমাজ বিজ্ঞানের জনক হলেন ওগ্যুস্ত কোঁৎ। 

সমাজ সম্পর্কে আমাদের মতামত

সমাজ এবং সামাজিকতা এক জিনিস নয় তবে সমাজকে সঠিক ধারায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সামাজিকতার প্রয়োজন রয়েছে। মূলত সমাজ এবং সামাজিকতার মধ্যে পারিপার্শ্বিক একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। যেটা সমাজ এবং সমাজে বসবাসরত মানুষদের জন্য ভালো।

সমাজ সম্পর্কে আপনাদের আর কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদেরকে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানান। এবং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এমন আরো শিক্ষামূলক আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।

Sharing is Caring

Leave a Comment