ভূগোল কাকে বলে? ভূগোল কত প্রকার ও কি কি

5/5 - (1 vote)

বিজ্ঞান হলো এমন একটি ক্ষেত্র যা বিভিন্ন শাখার সমন্বয়ে গঠিত। বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক দ্বারা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা বোঝায় আর তার মধ্যেই একটি হলো ভুগোল। ভূগোল হলো বিজ্ঞানের এমন একটি শাখা যা পৃথিবী সম্পর্কিত ধারণাকে নির্দেশ করে। 

তাই জীব এবং পরিবেশের বিভিন্ন গঠন এবং ক্রিয়া জানতে ভূগোলের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু এ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা আবশ্যক। তাই ভূগোল কী এবং এর বিস্তারিত শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।

ভূগোল কাকে বলে

ভূগোল কাকে বলে, ভূগোল কত প্রকার ও কি কি, পরিবেশ ভূগোল কাকে বলে,

প্রথমেই আমাদের জানতে হবে ভূগোল বলতে আসলে কী বোঝায়। ভূগোলের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো “Geography” যা গ্রীক শব্দ “geographia” থেকে উদ্ভূত হয়েছে। গ্রীক এই শব্দটি দ্বারা পৃথিবী সম্পর্কিত ধারণাকে নির্দেশ করে। তাই স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে ভূগোল দ্বারা আসলে পৃথিবী সম্পর্কিত জ্ঞানকে বোঝায়। 

এই বিশালাকার পৃথিবীর সব জায়গা একরকম নয়। কোথাও সমতল ভূমি, কোথাও পাহাড় আবার কোথাও জলরাশি। আবার এসকল স্থানের গঠন প্রক্রিয়াতেও রয়েছে প্রভেদ। ভূগোল মূলত এই সকল প্রভেদ নিয়েই আলোচনা করে।

পৃথিবীর গঠন, বিভিন্ন স্থানের বা স্তরের বিন্যাস, আবহাওয়াজনিত বিভিন্ন তারতম্য এবং জীব এসকল তারতম্যের সাথে খাপ খাইয়ে কীভাবে জীবন নির্বাহ করছে এই সকল কিছু নিয়ে বিজ্ঞানের যে শাখায় আলোচনা করা হয় তাকেই ভূগোল বলে।

ভূগোল কয় প্রকার ও কি কি

ভূগোল সম্পর্কিত মূল ধারণা ইতিমধ্যে আমরা পেয়ে গেছি। এবার এই জ্ঞানের ক্ষেত্রকে আরও বিস্তার করতে জানা প্রয়োজন ভূগোলের শাখা বা প্রকার কয়টি। ভূগোলকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়। এগুলো হলো

  • প্রাকৃতিক ভূগোল
  • মানবীয় ভূগোল

১. প্রাকৃতিক ভূগোল

ভূগোল কাকে বলে, ভূগোল কত প্রকার ও কি কি, পরিবেশ ভূগোল কাকে বলে,

প্রথমে জেনে নেয়া যাক প্রাকৃতিক ভূগোল সম্পর্কে। প্রাকৃতিক ভূগোল হলো এমন ভূগোলের এমন একটি দিক যেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রাকৃতিক এবং আবহাওয়াজনিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। 

পৃথিবীর উৎপত্তি থেকে শুরু করে এর অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অংশ, পৃথিবী কীভাবে তৈরী হলো সেসকল প্রক্রিয়া, পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের গাঠনিক একক এবং কাঠামো ইত্যাদি এই সকল বিষয় প্রাকৃতিক ভূগোলের অন্তর্গত।

প্রাকৃতিক ভূগোলের বিষদ পর্যালোচনা করলে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের আবহাওয়া এবং ভূমিরূপের পার্থক্য, বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণ এবং প্রকৃতির খেয়াল খুশি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে ধারণা পাওয়া যায়।

এই প্রাকৃতিক ভূগোলের আবার কিছু উপক্ষেত্রও রয়েছে। যেমন

  • ভূরূপবিজ্ঞান
  • জলবায়ুবিজ্ঞান
  • সমুদ্র ভূগোল
  • জীব ভূগোল
  • মৃত্তিকা ভূগোল
  • উপকূলীয় ভূগোল
  • পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা 
  • জলবিদ্যা
  • প্রত্নভূগোল ইত্যাদি

এসকল বিষয়ের সমন্বয়ে প্রাকৃতিক ভূগোল বিষয়টি গড়ে উঠেছে। আর প্রত্যেকটি বিষয় সঠিকভাবে এবং বিস্তারিতভাবে বুঝতে আলাদা আলাদা করে প্রত্যেকটি উপক্ষেত্র গড়ে তোলা হয়েছে।

তবে এই প্রত্যেকটি উপক্ষেত্র আবার একে অপরের সাথে জড়িত। যেমন আবহাওয়ার একটি চলকের সাথে আরেকটি সম্পৃক্ত। একটি বাড়লে আরেকটিও ব্যস্তানুপাতিক হারে কমবে অথবা আনুপাতিক হারে বাড়বে। 

এসকল বিষয়ের কারণেই আলাদা আলাদা উপক্ষেত্র হলেও তারা একে অপরের সাথে জড়িত। আবহাওয়াজনিত বিষয়গুলোও এর মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত। 

২. মানবীয় ভূগোল

ভূগোল কাকে বলে, ভূগোল কত প্রকার ও কি কি, পরিবেশ ভূগোল কাকে বলে,

এবার মানবীয় ভূগোল সম্পর্কে জানা যাক। মানবীয় ভূগোল হলো ভূগোলের এমন একটি প্রকার যেখানে পৃথিবীর ভৌগোলিক ব্যাপ্তির সাথে মানুষের বিস্তৃতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। 

মানুষের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, পরিবেশগত খাপ খাওয়ানোর বিভিন্ন বিষয়, অর্থনৈতিক দিকসমূহ ইত্যাদি এই সবকিছুই মানবীয় ভূগোলের অন্তর্গত। এছাড়াও মানব সমাজ বিভিন্নভাবে বিভিন্ন এলাকায় বিস্তৃত।

শুধু তাই নয়, এই সমাজের মাঝে আকৃতিগত পার্থক্য লক্ষ করা যায়। একইসাথে বিভিন্ন অঞ্চলের মানিষের মাঝে চেহারা এবং শারীরিক গঠনগত পার্থক্যও লক্ষ করা যায়। এসব পার্থক্য কীভাবে এলো এসব বিষয় নিয়েও মানবীয় ভূগোল আলোচনা করে।

প্রাকৃতিক ভূগোলের মত মানবীয় ভূগোলেরও বেশ কিছু উপক্ষেত্র রয়েছে। যেমন- 

  • উন্নয়ন ভূগোল
  • অর্থনৈতিক ভূগোল
  • সাংস্কৃতিক ভূগোল
  • স্বাস্থ্য ভূগোল
  • জনসংখ্যা ভূগোল
  • ঐতিহাসিক ও কালিক ভূগোল
  • রাজনৈতিক ভূগোল
  • ধর্ম ভূগোল
  • পরিবহন ভূগোল
  • ধর্ম ভূগোল
  • নগর ভূগোল
  • সামাজিক ভূগোল ইত্যাদি

এসব কিছুর সমন্বয়েই মানবীয় ভূগোলের বিষয় সমূহ আলোচিত হয়। তবে এই বিষয়গুলোও পরস্পর পরস্পরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যেকোনো একটির কোনো দিক বর্ণনা করতে গেলে অপর দিকগুলোর আলোচনাও এর মধ্যে চলে আসে।

এই দুই প্রকার ভূগোল বাদেও আরও একটি ভাগ রয়েছে ভূগোলে যাকে জীবভূগোল নামে বর্ণনা করা হয়। যদিও এই ভাগটিকে সব বিজ্ঞানী আলাদাভাবে স্বীকৃতি দেননি। কেননা এটি প্রাকৃতিক ভূগোলের উপক্ষেত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। তবে কারো কারো মতে, এই অংশটিও অগ্রাহ্য করার কোনো সুযোগ নেই এবং একে আলাদাভাবে বর্ণনা করা আবশ্যক।

ভূগোলের গবেষণা পদ্ধতি কয়টি

ভূগোলের বিভিন্ন শাখা থাকলেও এই সমগ্র শাখাকে চারটি পদ্ধতিতে গবেষণা করা হয়। এই গবেষণা পদ্ধতিগুলো হলো-

  • স্থানিক বিশ্লেষণ 
  • এলাকা পঠন
  • মানব-ভূমি সম্পর্কিত পঠন
  • ভূ-বিজ্ঞান 

পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করলে বিষয়টি আরও স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে।

স্থানিক বিশ্লেষণ পদ্ধতি

স্থানিক বিশ্লেষণ পদ্ধতি মানুষ এবং প্রকৃতি উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চল সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতে হলে সে স্থান কোন অক্ষে অবস্থিত, সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে অবস্থান এবং কীভাবে বিস্তৃত এসকল বিষয় সম্পর্কে প্রথমে জ্ঞান অর্জন করা আবশ্যক।

একটি নির্দিষ্ট স্থানের বিশ্লেষণ করলে ঐ স্থানের আবহাওয়া এবং ভৌগোলিক বিষয় সম্পর্কিত বিভিন্ন জ্ঞান অতি সহজেই পাওয়া যায়। তাই স্থানিক বিশ্লেষণ পদ্ধতির গুরুত্ব অনেক। এই পদ্ধতিতে বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার আবশ্যক।

এলাকা পঠন পদ্ধতি

এর পরের পদ্ধতি হলো এলাকা পঠন পদ্ধতি। একটি অঞ্চলের সামগ্রিক বিষয় বস্তু এর সাথে সম্পর্কিত। ঐ এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ কেমন, সেখানকার বিভিন্ন আবহাওয়াজনিত বিষয় ইত্যাদি প্রত্যক্ষভাবে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে এ পদ্ধতির কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

মানব-ভূমি সম্পর্কিত গঠন

মানব-ভূমি সম্পর্কিত গঠনে প্রাকৃতিক এবং মানবীয় ভূগোল উভয়ই জড়িত। অর্থাৎ ভূমিরূপ অনুযায়ী ঐ অঞ্চলের মানুষ কেমন, তাদের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক বিভিন্ন দিকে ঐ প্রাকৃতিক আবহাওয়ার প্রভাব এবং সামগ্রিক বিষয়ে তাদের নিবিড়তা পর্যবেক্ষণ এ পদ্ধতিতে সুস্পষ্টভাবে করা যায়।

ভূ-বিজ্ঞান

সর্বশেষ আসা যাক ভূ-বিজ্ঞান পদ্ধতি নিয়ে যেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একে গুরুত্বপূর্ণ ধরা হয় কারণ ভূ-বিজ্ঞানে একটি অঞ্চলের মাটি এবং এ সম্পর্কিত বিষদ বিশ্লেষণ করা হয়। মাটির গঠন এবং গুণাগুণ সম্পর্কে ধারণা পেলে ঐ জায়গার অনেক তথ্য আহরণ করা সম্ভব বলেই ভূ-বিজ্ঞান পদ্ধতি এতটা গুরুত্বপূর্ণ। 

পরিবেশ ভূগোল কাকে বলে

ভূগোল কাকে বলে, ভূগোল কত প্রকার ও কি কি, পরিবেশ ভূগোল কাকে বলে,

পরিবেশ ভূগোল হলো ভূগোলের একটি অংশ যেখানে শুধু পরিবেশ সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। আমরা যে পরিবেশে বসবাস করি তার বিভিন্ন দিক রয়েছে। পরিবেশের উপাদানসমূহ, উপাদানসমূহের মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়া, দূষণ এবং অন্যান্য সকল বিষয় নিয়ে ভূগোলের যে অংশে আলোচনা করা হয় তাকেই পরিবেশ ভূগোল বলা হয়। 

এছাড়াও পরিবেশের বিভিন্ন ক্রিয়ার ফলে যেসব প্রতিকূল অবস্থা বা দূর্যোগের সৃষ্টি হয় সেগুলো সৃষ্টির কারণ এবং তার ফলাফলও এই অংশের আলোচ্য বিষয়।

পরিবেশ ভূগোলকে আবার দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো-

ভৌত বা প্রাকৃতিক পরিবেশ

এখানে ভৌত পরিবেশ ভূগোল বলতে আবহাওয়াজনিত বিষয়সমূহকে বোঝায়। যেমন তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একটি প্রাকৃতিক পরিবেশ গঠিত হয়। এসকল বিষয়ের মধ্যে বায়ুমন্ডল সম্পর্কিত বিষয়গুলোও জড়িত। 

এই উপাদানগুলো পরস্পর পরস্পরের সাথে জড়িত। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বৃষ্টিপাত বেশি হলে আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায়। এভাবেই এদের মধ্যে সম্পর্ক বিন্যস্ত এবং এই সবকিছুই ভৌত বা প্রাকৃতিক পরিবেশ ভূগোলের অন্তর্গত।

সামাজিক পরিবেশ

এবার সামাজিক পরিবেশ সম্পর্কিত আলোচনা করা যাক। সামাজিক পরিবেশ বলতে মানুষের সাথে সম্পর্কিত পরিবেশের কথা বলা হয়। যেমন মানুষ প্রাকৃতিক পরিবেশে ফসল উৎপাদন করে খাদ্যের জোগাড় করে। এটাও সামাজিক পরিবেশেরই অংশ কারণ এখানে মানুষ এবং পরিবেশের মিথস্ক্রিয়া দেখানো হয়েছে।

📌 আরো পড়ুন 👇

 

মূলত প্রকৃতির বিভিন্ন জিনিসের উপর নির্ভর করে মানুষ বেঁচে থাকে। আবার মানুষের বিভিন্ন কার্যকলাপ প্রকৃতিকে প্রভাবিত করে। এই বিষয়টিই সামাজিক পরিবেশের অন্তর্গত। মানুষের একসাথে সহাবস্থানও এই বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত।

ভূগোল সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নউত্তর

ভূগোলের জনক কে? 

ভূগোলের জনক হিসেবে দুজন বিজ্ঞানীর নাম প্রসিদ্ধ। একজন হলেন কার্ল রিটার যাকে আধুনিক ভূগোলের জনক হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। অপর জন হলেন আলেকজান্ডার ফন হুমবোল্ডট যিনি জীব ও ভূগোলের জনক হিসেবে পরিচিত। তবে “ভূগোল” শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন বিজ্ঞানী এরাটোস্থেনিস।

ভূগোলের প্রধান কাজ কী? 

ভূগোলের প্রধান কাজ হলো পৃথিবী এবং মানব সম্পর্কিত ধারণা দেয়া। পৃথিবীর গঠন থেকে শুরু করে এর বিভিন্ন স্থানের বিশ্লেষণ করে সঠিক বর্ণনা দেয়াই হলো ভূগলের মূল কাজ।

কয়েকজন উল্লেখযোগ্য ভূগোলবিদের নাম?

স্ট্রাবো, টলেমি, আল-ইদ্রিসি, জেরারডাস মারকেটর হলেন প্রসিদ্ধ কয়েকজন ভূগোলবিদ যারা ভূগোলের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

ভূগোল সম্পর্কে আমাদের মতামত

তাহলে আমরা ভূগোল সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানলাম এবং ভূগোলের উপাদানগুলো সম্পর্কেও ধারণা পেলাম। আসলে ভূগোল হলো এমন একটি বিষয় যা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের সাথে জড়িত। 

কেননা আমরা যে এলাকায় বসবাস করি তার ছাপ আমাদের শারীরিক গঠনে এবং জীবিকা নির্বাহে স্পষ্ট। একারণেই ভূগোল আমাদের জীবনের সাথে এতটা নিবিড়ভাবে জড়িত। আর এজন্যই ভূগোল সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা আমাদের জন্য আবশ্যক।

এরকম তথ্যবহুল আরো আর্টিকেল পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। এবং ভূগোল সম্পর্কে আপনাদের যদি কোন মতামত থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্ট বক্সে করুন

Sharing is Caring

Leave a Comment